সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে কিশোর আরিফুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় অদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে নিহতের পিতা ইমান আলী মোড়ল ও তার সৎ মা জোহরা বেগম। শনিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রেজোয়ানুজ্জামানের আদালতে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তারা ১৬৪ ধারায় এই জবানবন্দি প্রদান করে।
এদিকে ময়না তদন্তের জন্য পুলিশ নিহত কিশোর আরিফুল ইসলামের লাশ শনিবার বিকালে উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করেছে।
কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আজিজুর রহমান জানান, চম্পাফুল গ্রামের ঢালীপাড়ার ইমান আলী মোড়ল পাঁচ বছর আগে ছেলে আরিফুলকে তার কাছে রেখে প্রথম স্ত্রী খালেদাকে তালাক দেয়। পরে খালেদা অন্যত্র বিয়ে করেন। এর পর সে দ্বিতীয় বিয়ে করে। তার একটি ছেলে সন্তান হওয়ার পর তাকেও তালাক দিয়ে ফের জোহরা বেগমকে বিয়ে করে। সৎ মা জোহরা প্রায়ই আরিফুলের সাথে খারাপ আচরণ করতো।
এক পর্যায় আরিফুল একটি মোবাইল ফোন কেনার জন্য তার বাবার কাছে টাকা দাবি করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চলতি বছরের ২৫ জুন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তার সৎ মা জোহরা বেগম ও বাবা ইমান আলী তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে গোপনে নিজের জমিতে লাশ পুতে রাখে। এরপর আরিফুল নিখোঁজ হয়ে গেছে মর্মে তারা প্রচার দেয়।
ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে গত পহেলা সেপ্টেম্বর ছেলে পাগল হয়ে নিখোঁজ হয়ে গেছে মর্মে ইমান আলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এ ঘটনায় স্থানীয়দের সন্দেহ হলে তারা ইমান আলী ও তার তৃতীয় স্ত্রী জোহরাকে আটক করে পুলিশ সোপর্দ করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ইমান আলী ও জোহরা তাদের ছেলে আরিফুলকে হত্যার কথা স্বীকার করে লাশ কোথায় পুঁতে রাখা হয়েছে মর্মে পুলিশকে অবহিত করেন।
এদিকে খবর পেয়ে আরিফুলের মা খালেদা বেগম বাদি হয়ে শুক্রবার রাতেই ইমান আলী ও জোহরার নাম উল্লেখ করে কালিগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
ইমান আলী ও জোহরার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি হত্যা করে লাশ মাটিতে পুঁতে ফেলার দু’ মাস ২০ দিন পর শনিবার বিকালে নিহত আরিফুলের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হুসেন জানান, গ্রেফতারকৃত নিহতের পিতা ইমান আলী মোড়ল ও তার স্ত্রী জোহরা বেগম শনিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রেজোয়ানুজ্জামানের কাছে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মোবাইল কেনার জন্য টাকা চাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে স্বামী-স্ত্রী মিলে শ্বাসরোধ করে ছেলে আরিফুলকে হত্যার পর বাড়ির পাশে মাটিতে তার লাশ পুতে রাখে।
খুলনা গেজেট/এনএম