খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২১ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ডেঙ্গুতে একদিনের ৯ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১ হাজার ২১৪

ছাত্র আন্দোলনে মানিক সাহা

কাজী মোতাহার রহমান

দীর্ঘ সময়ে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সর্বশেষ লেখাপড়া করেছেন বিএল কলেজ ও খুলনা ল’ কলেজ। ছাত্রসমাজের দাবি আদায়ের জন্য সব সময় স্বোচ্চার ছিলেন। শিক্ষাঙ্গনের পাশাপাশি রাজপথে মিছিল ও মিটিং এ নিয়মিত অংশ নিতেন। পরবর্তীতে কর্মজীবন সাংবাদিকতায় এসেও রুটি রুজির আন্দোলনে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন।

দায়িত্বশীলতা ও আন্তরিকতার জন্য জীবনের বড় একটা সময় ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ছিলেন জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বে। এ দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে লিফলেট বিলি করতে যেয়ে বিএল কলেজ থেকে গ্রেপ্তার হন। বড় একটা সময় কাটান জেলখানায়। ছাত্রদের সংকট সমস্যা সমাধানের জন্য আন্দোলন করেছেন। ছাত্র বেতন কমানো, বই- খাতার দাম কমানো ও আবাসিক সংকট নিরসনের দাবিতে ছাত্র ইউনিয়ন বরাবর ই স্বোচ্চার। দেয়াল লিখনে তারা প্রথম সারিতে।বিভিন্ন ইস্যুতে পোষ্টার সাঁটাতো শিক্ষাঙ্গনের দেয়ালে দেয়ালে। যানবাহনে ছাত্রদের অর্ধেক ভাড়ার দাবী ছাত্র ইউনিয়নই জনপ্রিয় করে তোলে। স্বাধীন বাংলাদেশে একটা বড় সময় ছাত্র আন্দোলনের অনুকূল পরিবেশ ছিলো না।

প্রথমদিকে খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান পরবর্তীতে জে. এরশাদের সামরিক শাসন ছিলো বেশ কড়া। সামরিক শাসনের বেড়াজালে ছাত্র রাজনীতির সুযোগ ছিল না। এর মধ্য একটা অধ্যায় ছিলো ঘরোয়া রাজনীতির। সেনাশাসকদের আজব আইন ঘরের মধ্য রাজনীতি করার সুযোগ। রাজনীতি আবার ঘরের মধ্যে হয় না কী?

গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চটা মুলত প্রকাশ্যে এবং তা মাঠে ময়দানে। এমন আদেশ প্রেসিডেন্ট জে. আইয়ুব ও ইয়াহিয়ার আমলেও ছিল বাঁধা ধরা নিয়মের মধ্যে। কিন্তু স্বাধীন দেশে বাঁধা ধরা নিয়ম মেনে নেওয়া যায় না। ১৯৭২ সালে সৃষ্ট সংবিধানের ৩৮ ও ৩৯ ধারায় প্রত্যেক নাগরিককে রাজনীতি করার অধিকার দেয়া হয়েছে। সেখানে ঘরোয়া বলে কোন কথা নেই।

প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলতে হয়, আমাদের স্বাধীনতার ১০ বছর পর বন্দুকের নল দেখিয়ে সেনা প্রধান জে. এরশাদ রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেন, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ। তিনি দেশে সামরিক শাসন জারি করেন। প্রকাশ্যে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ, আকারে-ইঙ্গিতে সরকারের সমালোচনা করলে শাস্তির বিধান চালু করা হয়। এমন এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশে কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। এর মধ্যে অন্যতম একটি শরীকদল ছাত্র ইউনিয়ন। তার দলের পক্ষ থেকে তিনি এবং মাহবুবুল আলম বুলবুল প্রতিনিধিত্ব করতেন। সংগ্রাম পরিষদের এখানকার শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র মৈত্রীর জহির উদ্দিন স্বপন, জাতীয় ছাত্রলীগের এস এম কামাল হোসেন, বাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের দিদারুল আলম বাবুল, শেখ আবু হাসান প্রমুখ।

মুলত দাবি ছিল সামরিক শাসন প্রত্যাহার ও তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন। এ দাবিতে দফায় দফায় হরতাল হয়েছে। তার অংশগ্রহণ ছিল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানাও ছিল। ১৫ দল ও সাত দলের দূর্বার আন্দোলনে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর জে. এরশাদ সরকারের পতন হয়।জাতি স্বৈরাচারমুক্ত বাংলাদেশে নিশ্বাস গ্রহণ করতে শুরু করে। এ বিজয়ের খুলনায় শীর্ষ ছাত্রনেতাদের মধ্যে তিনি একজন। তার মৃত্যুবার্ষিকির এ দিনে তার সংগ্রামী জীবনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। খুলনা ছাত্র ইউনিয়নের আন্দোলনে তিনি পথিকৃত হয়ে থাকবেন। এ দর্শনে বিশ্বাসীরা আজকের প্রজন্ম তাকে অনুকরণ করবে। শোষণ মুক্তির লড়াইয়ে তার ত্যাগ, শ্রম ও মেধা সর্বজন স্বীকৃত।

খুলনা গেজেট/এসজেড




খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!