যশোরের চৌগাছার দক্ষিণসাগর-মাড়ুয়া-চারাবাড়ি ইউনাইটেড (ডিএমসিইউ) আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যের (এমপি) ডিওলেটার ও স্বাক্ষর জালিয়াতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ডিওলেটার ও স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি ও সদস্যদের নাম প্রস্তাব করে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে অনুমোদনের জন্য জমা দিয়েছেন ওই অধ্যক্ষ। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার দক্ষিণসাগর-মাড়ুয়া-চারাবাড়িইউনাইটেড (ডিএমসিইউ) আলিম মাদরাসার এডহক (সাময়িক) কমিটির মেয়াদ ২০২২ সালের ৭ জানুয়ারি শেষ হবে। এর আগেই নতুন কমিটি অনুমোদনের জন্য মাদরাসাটির অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুর রহমান একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির নামের তালিকা তৈরি করে গত ১৩ ডিসেম্বর মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে জমা দিয়েছেন। এতে সভাপতি পদে সুপারিশের জন্য যে ডিওলেটার ব্যবহার করা হয়েছে তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব) অধ্যাপক ডাক্তার নাসির উদ্দিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কমিটিতে মাদরাসা অধ্যক্ষ তাঁর পছন্দের লোক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মার্কিনযুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক তবিবর রহমান খানকে সভাপতির পদে প্রস্তাব করেছেন। অভিযোগ রয়েছে কমিটিতে মাদরাসাটির জমিদাতা সদস্যের নামও বাদ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য সদস্য পদেও অধ্যক্ষের অনুগত ব্যক্তিদের নাম দেয়া হয়েছে।
মোকাব্বর হোসেন, লাল্টু, শাহাজান আলীসহ একাধিক অভিভাবক জানিয়েছেন, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্যের মোধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ নানা অনিয়ম করে আসছিলেন। গত ১৬ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর শপথ বাক্যপাঠের অনুষ্ঠান মাদরাসায় আয়োজন করা হয়নি। এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি বৈধ করার জন্য অধ্যক্ষ তাঁর পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন কমিটি করার চেষ্টা করছেন।
দক্ষিণ সাগর গ্রামের মৃত করিম বক্সের ছেলে শাহাজান আলী বলেন, আমি দাতা সদস্য। আমার বাবার দান করা জমিতে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে নতুন কমিটিতে কোনো দাতা সদস্য রাখা হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল কালাম মোঃ রফিকুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানতে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন এমপি মহোদয়ের পূর্বের একটি ডিওলেটার তাঁর কাছে ছিলো। সেটি তিনি ব্যবহার করেছেন’।
চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, রোববার মাদরাসাটির অধ্যক্ষ আমার কাছে এসেছিলেন। কমিটি সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র নিয়ে সোমবার বিকেলে আমার দপ্তরে আসতে বলেছি। কাগজপত্র দেখার পরে বিস্তারিত বলতে পারবো।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমান যে এডহক কমিটি রয়েছে সেই কমিটির সভাপতির জন্য ডিও দিয়েছিলাম। যার মেয়াদ ২০২২ সালের জানুয়ারী মাসে শেষ হবে। পরবর্তীতে নতুন কমিটির সভাপতির জন্য নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান মাষ্টার সিরাজুল ইসলামকে ডিও লেটার দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, আমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে আমি খোঁজ নিয়েছি। অধ্যক্ষ সাহেব আমার স্বাক্ষরিত একটি ডিও জালিয়াতি করে নতুন কমিটির জন্য আবেদন করেছেন। তিনি বলেন, ডিওলেটার এবং আমার স্বাক্ষর জালিয়াতির জন্য আমি ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো।
ডিএমসিইউ আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা হাফিজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, কমিটি নিয়ে কি হচ্ছে আমিও তো কিছু বুঝতে পারছিনা। আমার কাছে মাদ্রাসা বোর্ড থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়েছে কমিটির জন্য যে ডিও ব্যবহার করেছি তা নাকি সঠিক নয়। তিনি জানান, ডিও লেটারটি নিয়ে দিয়েছেন তবিবর রহমান খান। বিষয়টি তিনিই ভালো জানেন। তবে তবিবর রহমান খান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করায় তাঁর সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।