যশোরের চৌগাছায় কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত সাকোটির বাঁশ খুটি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ফলে সাকোটি ব্যবহার করা ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে সাকোটির বেশ কিছু স্থানের বাঁশ দেবে যাওয়ায় সেদিকে হেলে গেছে।
কপোতাক্ষ নদের উপর নির্মিত সাকোটি উপজেলার নিয়ামতপুর তালপট্টি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদের উপর অবস্থিত। এ ছাড়া তালপট্টির পশ্চিমে অবস্থিত নারায়নপুর ইউনিয়নের হাজরাখানা গ্রাম। দুই গ্রামবাসির যাতায়াতের সুবিধার্থে বহুবছর আগে থেকেই সেখানে খেয়া পারাপার হতো। সময়ের ব্যবধানে নদ অনেক সংকুচিত হয়ে পড়ায় বছরের বেশির ভাগ সময়ে নদে নৌকা চলার মত পানিও থাকেনা। এমতাবস্থায় স্থানীয়দের সহযোগিতায় খেয়া পারাপারের স্থানে নির্মিত হয় বাঁশের সাকো। বাঁশের এই সাকো দেখা শুনার জন্য পাঁচনামনা গ্রামের জৈনক রাজ্জাক আলী সেখানে দিনরাত বসে থাকতেন ও পারাপারের লোকজনের নিকট থেকে একটি নির্ধারিত টাকা আদায় করতেন। আদায়কৃত টাকা দিয়ে তিনি সাকো নষ্ট হলে মেরামত করতেন। বাকি টাকা নিজের সংসারে ব্যয় করতেন।
বিষয়টি উপজেলা চেয়ারম্যান ড.এম মোস্তানিছুর রহমানের নজরে এলে সাবেক থানা অফিসার ইনচার্জ রিফাত খাঁন রাজিবের সহযোগিতায় কাঠ আর বাঁশ দিয়ে বেশ মজবুত একটি সাকো নির্মাণ করা হয়। বন্ধ করা হয় পারাপারের টাকা গ্রহন। এতে এলাকাবাসির মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। বছর খানেক আগে এই সাকো নির্মাণ করা হলেও গেল এক বছরে তা আর মেরামত করা হয়নি। ফলে সাকোর বাঁশ নদের মাটিতে দেবে যাওয়ায় অনেক স্থানে সাকো হেলে পড়েছে। এছাড়া বাঁশগুলো পানি আর বৃষ্টিতে হয়েছে নষ্ট, বেশ কিছু স্থানে বাঁশ ভেঙ্গে যাওয়ার দৃশ্যও দেখা গেছে। এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়মিত সাকো পার হচ্ছেন।
নদ পাড়ে বেড়াতে আসা উপজেলার টেংগুরপুর গ্রামের স্কুল ছাত্র সাহেদ আলী, রুহুল আমিন জানান, সাকোটি নতুন নতুন খুবই দৃষ্টিনন্দন ছিল কিন্তু দিন যাওয়ার সাথে সাথে এটি পুরাতন হয়ে চলাচলে বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। স্কুল বন্ধ থাকায় প্রায় সময়ই আমরা বন্ধুরা মিলে এখানে বেড়াতে আসি। সাকো বেশ কিছু স্থানে হেলে যাওয়ায় উপরে উঠতে ভয় পাই। গুয়াতলী গ্রামের ভাংড়ি ব্যবসায়ী সামাউল ইসলাম বলেন, গ্রাম থেকে ভাংড়ি জোগাড় করে তা বাজারে বিক্রি করে সংসার চালায়। হাজরাখানা গ্রাম ঘুরে এখন নিয়ামতপুর তালপট্টিতে যাব। সাকোর যে অবস্থা তাতে মালামাল নিয়ে যেতে ভয় পাচ্ছি।
নদের পশ্চিম পাড়ে চির নিদ্রায় শায়িত এ অঞ্চলের প্রখ্যাত পীর বলুহ দেওয়ান (রঃ)। এই মাজারের খাদেম জয়নাল আবেদিন বলেন, সাকোটি নতুন ভাবে নির্মানের ফলে আমরা বেশ উপকৃত হয়েছি, কিন্তু রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে তা নষ্ট হতে বসেছে। এটি দেখা শুনার জন্য একজন লোক থাকা দরকার। তিনি স্থানীয়দের কাছ থেকে পারাপারে কোন টাকা নিবে না, দুরের কেউ সাকো পার হলে তাকে নির্ধারিত একটি ফি দিতে হবে। তাহলে সাকোটি ভাল থাকতো। সাকো দিয়ে প্রতি দিন অসংখ্য মানুষ পারাপার হচ্ছে, তাই এখানে স্থায়ী ভাবে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হলে কয়েক গ্রামের মানুষ উপকৃত হত।
হাজরাখানা গ্রামের বাসিন্দা নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর মনিরুজ্জামান মিলন বলেন, বর্ষা শুরু হওয়ায় সাকোর কিছু স্থান দেবে গেছে। খুব দ্রতই সেটি মেরামতের চেষ্টা করা হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ ড.এম মোস্তানিছুর রহমান জানান, এলাকাবাসির কষ্টের দিক বিবেচনা করে সাবেক ওসির নেতৃত্বে পুরাতন সাকো ভেঙ্গে কাঠের নতুন সাকো তৈরী করার পাশাপাশি চাঁদা নেয়ার বিষয়টিও বন্ধ করা হয়। রোদ বৃষ্টিতে বাঁশ কাঠ নষ্ট হওয়ার খবর পেয়েছি, খুব তাড়াতাড়ি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সাকোটি মেরামত করা হবে।
খুলনা গেজেট/এএ