চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে উথলি সোনালি ব্যাংক শাখায় ঢুকে রবিবার (১৫ নভেম্বর) অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে প্রায় ৯ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। এখনও অবধি লুট হওয়া টাকা ও দুর্বৃত্তদের আটক করতে পারিনি প্রশাসন। তবে আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ব্যাংক লুটের সাথে জড়িতদের আটক করা হবে বলে আশাবাদী পুলিশ।
ব্যাংক লুটের ঘটনার পরপরই খুলনা রেঞ্জ থেকে একটি টিম যায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে। সেখানে তারা ব্যাংক লুটের সাথে সম্পৃক্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন। যা নিরাপত্তার কারণে এই মুহুর্তেই প্রকাশ করা যাচ্ছে না। তবে রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকে সিসি ক্যামেরা না থাকা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, পর্যাপ্ত আনসার না থাকাসহ নানান কারণেই ব্যাংকটিকে দুর্বৃত্তকারী টার্গেট করেছিল। তবে বর্তমান ডিজিটাল যুগে এমন নিরাপত্তাহীনতা প্রশাসনের ঊধ্র্বতন কর্মকর্তাদের চিন্তিত করেছে।
লুট হওয়া ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আবু বক্কর সিদ্দিকী জানান, বেলা সোয়া ১টার দিকে হেলমেট পরা তিন ব্যক্তি ব্যাংকে প্রবেশ করে। তারা পিস্তল উচিয়ে ব্যংকের দরজা বন্ধ করে দিয়ে সকলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। তারা ব্যাংকের সবার মোবাইল কেড়ে নেয় এবং একটি কক্ষে সবাইকে আটকে রাখে। ব্যাংকের কাউন্টারে থাকা প্রায় ৮ লাখ ৯৪ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানায়, ব্যাংকের ভেতরে এক গ্রাহক চিৎকার শুরু করলে বাজারের লোকজন ব্যাংকের সামনে জড়ো হয়। ডাকাত দল পিস্তলের ভয় দেখায়। অস্ত্রধারী ৩ জন দ্রুত মোটরসাইকেল করে পালিয়ে যায়। ডাকাত দলের সদস্যরা মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, মোটরসাইকেলে পালানোর সময় ইট-পাটকেল মারা শুরু করলে ডাকাত দলের এক সদস্যের মাথায় লাগে। এসময় ডাকাত দলের এক সদস্য পিস্তল উচিয়ে গুলি করতে উদ্যত হলে আমরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি।
ব্যাংকের গার্ড আনসার সদস্য জাফর জানান, ব্যাংকের প্রধান ফটকে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রথমে হেলমেট পরা এক ব্যাক্তি ব্যাংকে প্রবেশের চেষ্টা করে। আমি তাকে হেলমেট খুলতে বললে সিড়ির নিচে দাঁড়িয়ে থাকা আরো ২ জন হেলমেট পরিহিত ব্যক্তি দৌড়ে উপরে উঠে ব্যাংকে ঢুকে আমাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। দ্রুত তারা প্রধান দরজা আটকে কয়েক মিনিটের মধ্যে সকলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা লুট করে পালিয়ে যায়।
খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন্স্ এন্ড ক্রাইম) এ কে এম নাহিদুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে রবিবার রাত ৯টায় জানান, ব্যাংক ডাকাতির বিষয়ে আমরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে। আগামীকাল সোমবারের মধ্যেই টাকা উদ্ধার করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারকে।
তিনি বলেন, আশেপাশের লোকজনই লুটের জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। রেজিষ্ট্রেশন বিহীন মোটরসাইকেল নিয়ে এসেছিল দুর্বৃত্তরা। ব্যাংকে কোন সিসি ক্যামেরা না থাকায় আমরা অনেক তথ্য পাইনি। তবে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১জনের পিপিই গায়েসহ তিনজন দুর্বৃত্তেরই মাথায় হেলমেট থাকায় চেহারা দেখা যায়নি। ব্যাংকটি বাজারের এক প্রান্তে। যার ফলে নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আগের থেকেই আরও সতর্ক হওয়া দরকার থাকলেও তারা কোন পদক্ষেপ নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের নিজস্ব নিরাপত্তারও ঘাটতি ছিল। দুর্বৃত্তকারীরা যাওয়ার সময় জনগণ ধাওয়া দিলে তাদের মোটরসাইকেল থেকে খেলনা বন্দুকের প্লাষ্টিকের একটি অংশ পাওয়া গেছে।
খুলনা গেজেট/নূর