চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা মডেল থানা পুলিশের দুই সদস্যের বিরুদ্ধে শাশুড়ি-পুত্রবধূকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার পর ভুক্তভোগী পুত্রবধূ গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে ঘরের দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) দুপুরে দামুড়হুদা উপজেলার হাউলি ইউনিয়নের পুরাতন বাস্তবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। জেলা পুলিশ সুপারের কাছে মারধরের বিষয়টি জানতে চাইলে এমন ঘটনা তিনি শুনেছেন বলে জানান।
মারধরের শিকার ব্যক্তিরা হলেন পুরাতন বাস্তবপুর গ্রামের শওকত আলীর স্ত্রী সোহানা বেগম (৩৬) ও তার পুত্রবধূ ভুক্তভোগী মেহরিমা ইসলাম স্নেহা (১৬)।
সরেজমিনে হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, আহত মেহরিমার চিকিৎসা চলছে। তাকে অক্সিজেন দিয়ে ভর্তি করেছেন চিকিৎসক। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুপুর ১টার দিকে মেহরিমা ইসলাম স্নেহাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছেন। এখনই বলা যাচ্ছে না তিনি শঙ্কামুক্ত কি না। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে অক্সিজেন দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী মেহরিমা ইসলাম স্নেহা হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় বলেন, গত বছরের ৪ জুলাই পুরাতন বাস্তবপুর গ্রামের শওকতের ছেলে জিহাদের (২২) সঙ্গে ঢাকার আদাবর এলাকার একটি কাজি অফিসে আমরা বিয়ে করি। ওই সময় আমার মা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। এরপর থেকে আমি শ্বশুরবাড়িতেই থাকি।
কয়েক দিন আগে আমার নানি দামুড়হুদা মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেন। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আমি ও আমার শাশুড়ি (সোহানা খাতুন) ঘরে টেলিভিশন দেখছিলাম। এ সময় দামুড়হুদা মডেল থানার এক নারী কনস্টেবলসহ তিন-চারজন পুলিশ সদস্য আসেন। কিছু বোঝার আগেই নারী ও এক পুরুষ পুলিশ সদস্য আমার শাশুড়িকে চুলের মুঠি ধরে মারধর করে মাটিতে ফেলে দেন। এ সময় আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে আমি রাজি হইনি। তাতে আমাকেও মারধর করেন। পরে আমি বাঁচতে ঘরের দরজা আটকে যাব না বলে গলায় ফাঁস দিই। কিন্তু এখন আমি আমার স্বামীকে ছাড়া কোথাও যেতে চাই না।
মেহরিমার স্বামী জিহাদ বলেন, পুলিশ সদস্যরা আমার মা ও আমার স্ত্রীকে মারধর করেন। তারা আমার স্ত্রীকে জোর করে নিয়ে যেতে চাইলে আমার স্ত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। পরে প্রতিবেশী ও ওই পুলিশ সদস্যরা দরজা ভেঙে আমার স্ত্রীকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে।
তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রী দামুড়হুদা উপজেলার কোষাঘাটা গ্রামে নানির বাড়িতে থাকত। বিয়ের পর আমার বাড়িতে সংসার করছে। অভিযোগ যতই থাকুক না কেন, তারা আমার মা ও স্ত্রীকে মারধর কেন করল? আমার স্ত্রী ও মাকে পুরুষ পুলিশ সদস্যও মারধর করেছে। আমাদের বিয়ের সময় আমার শাশুড়িও উপস্থিত ছিলেন। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল।
মেহরিমার শ্বশুর শওকত আলী বলেন, ঘটনার সময় আমি বাড়িতে ছিলাম না। তবে আমি জেনেছি বাড়িতে পুলিশ সদস্যরা এসে আমার স্ত্রী ও পুত্রবধূকে মারধর করেছেন। তারা আমাদের বললে আমরা থানায় যেতাম। তারা কেন মারধর করল?
দামুড়হুদা মডেল থানা সূত্রে জানা গেছে, আহত মেহরিমা ইসলাম স্নেহার নানি নয়ন তারা সম্প্রতি দামুড়হুদা মডেল থানায় তার নাতনিকে জোর কেরে আটকে রেখেছে বলে একটি অভিযোগ দেন। এর পরিপেক্ষিতে মঙ্গলবার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজিব, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইখলাসসহ মহিলা পুলিশ সদস্যরা মেহরিমাকে উদ্ধার করতে যান।
জানতে চাইলে দামুড়হুদা মডেল থানার উপপরিদর্শক রাজিব বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। বিস্তারিত জানতে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) স্যারকে ফোন দিন। দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, অনেক ঘটনা আছে, আমি পরে বলছি। এখন ব্যস্ত আছি বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা সহকারী পুলিশ সুপার (দামুড়হুদা সার্কেল) মুন্না বিশ্বাস বলেন, ভুক্তভোগীকে উদ্ধারে গিয়ে এক নারী কনস্টেবল তাদের মারধর করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি। তদন্ত করে বিস্তারিত জানাতে পারব।