চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান (বর্তমান) প্রার্থী নুরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আশিকুজ্জামান ওল্টুর নির্বাচনী অফিসে পাল্টাপাল্টি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (০৫ নভেম্বর) রাত ৯-১১টা পর্যন্ত দুই দফায় হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন- আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদী গ্রামের শহিদুলের ছেলে পিল্টু (২৮), একই এলাকার সাগর আলীর ছেলে আশিক মোল্লা (২৩), আবুল কাশেমের ছেলে লিটন শেখ (৩০), ফারুক হোসেনের ছেলে রাব্বি (৩০) ও মৃত সাধু খানের ছেলে সিয়াম (২৫)।
এদিকে প্রতীক বরাদ্দের আগেই নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করে প্রচার-প্রচারণার চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে এই দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে। তবে তারা বলছেন, এটা নির্বাচনী অফিস নয়, শুধু কর্মীরা এসে বসছেন এবং চা খাচ্ছেন।
বিষয়টি নির্বাচনী আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ইউপি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতীক বরাদ্দের আগে এ ধরনের প্রচারণা নিষিদ্ধ। আচরণবিধিতে নির্দেশনা আছে, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারবেন না।’
চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার রাতে জানতে পারি হারদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আশিকুজ্জামান ওল্টুর কর্মীরা আমার নির্বাচনী অফিসে ভাঙচুর করেছেন। বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী শেখ হাসিনার ছবিও মাটিতে ফেলে ভাংচুর করে তারা। এতে আমার কোনো কর্মী আহত হয়নি।
‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীর অফিসে হামলার বিষয়ে বলেন, ‘স্থানীয় ফারুকের দুই ছেলে একজন আমার কর্মী এবং অপরজন বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী। বিদ্রোহী প্রার্থীর অফিসে বেগম খালেদা জিয়ার ছবি টাঙানো দেখতে পেয়ে দুই ভাই মারামারি করে। এতে আমার কর্মীরা তাদের শান্ত করে। তাদের অফিসে কেউ হামলা চালাইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একটি নির্বাচনী অফিস উদ্বোধন করেছি। সেখানে আমার কর্মীরা যেতে ভয় পাচ্ছেন। বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মীরা আমার কর্মীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।’
‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আশিকুজ্জামান ওল্টু বলেন, ‘আমি ঘটনার সময় একটি অনুষ্ঠানে ছিলাম। হারদী বাজারের উপর আমার কর্মীরা কয়েকটি চেয়ার নিয়ে অফিসের মতো করে বসছেন। শুক্রবার রাতে চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল ইসলামের সমর্থকরা আমার সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়ে ১৫টি চেয়ার, লাইট ভেঙে দেন। তারা আমার পাঁচ কর্মীকে চড়-ঘুষি ও মারধর করে।’
প্রার্থী নুরুল ইসলামের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরের বিষয়ে বলেন, ‘মূলত আমার অফিস ভাঙচুর করে নিজেদের অফিসে ভাংচুর করে বোঝাতে চেয়েছে যে আমার সমর্থকরা তার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করেছে। আমার সমর্থকরা কেউ নৌকার নির্বাচনী অফিস ভাংচুর করেনি।’
আলমডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, প্রথমে হারদী বাজার সংলগ্ন চেয়ারম্যান প্রার্থী আশিকুজ্জামান ওল্টুর সমর্থকদের উপর চড়-ঘুষির ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে কে বা কারা আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল ইসলামের নির্বাচনী অফিসে ভাংচুর করেছে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। এখনও কেউ অভিযোগ করেনি।’
হারদী-বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ২০২১ এর রিটার্নিং কর্মকর্তা আনারুল ইসলাম জানান, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনী অফিস ও প্রচার প্রচারণা নিষিদ্ধ। আচরণবিধিতে নির্দেশনা আছে, প্রতীক বরাদ্দের আগে কোনো প্রার্থী প্রচারণা চালাতে পারবেন না। তবে এ ধরনের কোনো অভিযোগ তার কাছে আসেনি।
উল্লেখ্য, আগামী ২৮ নভেম্বর আলমডাঙ্গা উপজেলার হারদীসহ ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৪ নভেম্বর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। ১৩টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৬৩ জন, সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থী ১৪২ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৪৪৮ জন অংশগ্রহণ করছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই শেষে খাদিমপুর ও গাংনী ইউনিয়নের দুজন সদস্য প্রার্থী সাজাপ্রাপ্ত ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার কারণে তাদের মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। আগামী ১২ নভেম্বর প্রতীক বরাদ্দের মধ্যদিয়ে প্রচার-প্রচারণা শুরু করবেন প্রার্থীরা।
খুলনা গেজেট/ এস আই