পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন না হওয়ায় দেশীয় বিশেষজ্ঞ প্যানেল চীনের টিকা গ্রহণ করেনি বলে আগে তা আনা হয়নি। তবে এ ভ্যাকসিনের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। ভ্যাকসিন নিয়ে বাংলাদেশ ও চীন কোনো দেশেরই ভুল বোঝার অবকাশ নেই।
বুধবার (১২ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় চীনা টিকা সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে হস্তান্তর করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। ওই অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, তারা (চীন) যদি ভ্যাকসিন পাঠাতে চায় তাহলে সেখানে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। এ ভ্যাকসিনের কাঁচামাল এনে বাংলাদেশেও উৎপাদন করা সম্ভব। নিকট ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অনেক ভ্যাকসিনের প্রয়োজন হবে। বিকল্প উৎস হিসেবে আপাতত তাদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আশা করি, তার সময়মতো টিকা পাঠাবে।
এর আগে মঙ্গলবার (১১ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় চীনা টিকার বৃহত্তর ট্রায়ালের প্রস্তাবে অতীতে সাড়া দেয়নি বাংলাদেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এবং ৭টি দেশে ভ্যাকসিনের ট্রায়াল ছাড়া সিনোভ্যাক দেশের মানুষকে দিতে চায়নি সরকার। আর এ কারণেই চীনের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের প্রস্তাবে সাড়া দেওয়া হয়নি ওই সময়।
ওই সময় তিনি আরও বলেন, ডব্লিউএইচও অনুমোদিত না হলে বা ৭টি দেশে তাদের টিকা প্রয়োগ করা না হলে, সে ধরনের ভ্যাকসিন আমাদের দেশের জনগণের জন্য ব্যবহার করব না।
বুধবার ভোরে উপহারস্বরূপ চীন থেকে পাঁচ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা ঢাকায় পৌঁছায়। সেনানিবাসের বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটিতে অবতরণ করে ভ্যাকসিন নিয়ে আসা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বিশেষ বিমান। পরে ভ্যাকসিনগুলো তেজগাঁওয়ে ইপিআই স্টোরে রাখা হয়েছে।
সিনোফার্ম এ ডোজগুলো বেইজিংয়ের ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি ঢাকায় নিয়ে আসা হলো বিমান বাহিনীর এ সি-ওয়ান থার্টি পরিবহন বিমানে করে।
পাঁচ লাখ টিকার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সিরিঞ্জও পাঠিয়েছে সিনোফার্ম। তাদের দেওয়া বৈজ্ঞানিক তথ্য বলছে, এ ভ্যাকসিন করোনার বিরুদ্ধে ৭৯ শতাংশ কার্যকর। অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো এ টিকাও দুই ডোজ নিতে হবে।
এ ভ্যাকসিন মিশনে ছিলেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ১৩ সদস্য। তারা জানান, বিশেষায়িত তাপমাত্রা রক্ষা করে উৎপাদকদের নির্দেশনা অনুযায়ী এসব ভ্যাকসিন পরিবহন করা হয়েছে।
উইং কমান্ডার হাবিব বলেন, কনটেইনারটা আসলে আমরা খুলে দেখিনি, তারা বলেছে কনটেইনারের মধ্যে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে ৭২ ঘণ্টা।
ভ্যাকসিন গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতায় যোগ দেন বিমান বাহিনী প্রধান, সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির পরিচালকসহ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাও।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর প্রহরায় ভ্যাকসিনগুলো পাঁচটি ফ্রিজারে করে বেলা ৯টার দিকে নেওয়া হয় তেজগাঁওয়ে ইপিআই এর স্টোরে। এ সময়, সতর্কতার সঙ্গে টিকার বক্সগুলো বুঝে নেয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার মতো করেই এসব ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করা হবে ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ইপিআই) প্রোগাম ম্যানেজার ডা. মওলা বক্স চৌধুরী বলেন, আমাদের যে কোর কমিটি এবং অন্যান্য কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক এই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে। অল্প সময়ের মধ্যে এটার প্রয়োগ শুরু করা হবে।
সিনোফার্মের এসব টিকা প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্ষুদ্র আকারে ব্যবহার করা হলেও শিগগিরই এসব ডোজ গণটিকা হিসেবে প্রয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
খুলনা গেজেট/এনএম