খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ পৌষ, ১৪৩১ | ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরের শ্রীপুরে বোতাম তৈরির কারখানায় আগুন; নিহত ১, নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট
  শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের বিষয়ে নিশ্চিত নয় ট্রাইব্যুনাল
‘ভালবেসে ধার দেয়া টাকা হয়ে যায় কারেন্টসুদ’

চিতলমারীতে সুদ কারবারিদের রয়েছে শক্তিশালী ‘আদায়কারী’ বাহিনী

এস এস সাগর, চিতলমারী

‘প্রথমে ওরা এসে ভাব জমায়। খাতির করে। পরে দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে টাকা ধার দেয়। সময় মত সেই টাকা পরিশোধ না করলে চড়া সুদে পরিণত হয়। শুরু হয় সপ্তাহিক ও মাসিক হিসেবে সুদ গোনা। ধারকৃত টাকার ২ থেকে ৩ গুণ পরিশোধ করলেও পরিশোধ হয় না আসল টাকা। বিক্রি করতে হয় ভিটেমাটি, বাড়ি, গাড়ি ও সহায় সম্বল। এতেও সুদ কারবারীরা ক্ষ্যান্ত হয় না। শেষ পর্যন্ত তাদের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে মেয়ে-গৃহবধূর উপর। আর এই টাকা আদায় করতে সুদ কারবারিদের রয়েছে শক্তিশালী ‘আদায়কারী’ বাহিনী। তাই তো বাগেরহাটের চিতলমারীতে অত্যাচার-নির্যাতনে একের পর এক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে চরম দুঃখ ভরাকণ্ঠে এমনটাই জানালেন সুদের দায়ে সব হারানো প্রকাশ বালা (৩২)।

উপজেলার চরবানিয়ারী ইউনিয়নের সাবেক সদস্য খড়মখালী গ্রামের হরেকৃষ্ণ বালার ছেলে প্রকাশ বালা আরো জানান, বছর ৩/৪ আগে অতিবর্ষণে তার চিংড়ি ঘের তলিয়ে সব মাছ ভেসে যায়। মাছের খাবারের দোকানে দেনা হয়ে পড়েন। ভালবাসার ভাব দেখিয়ে এ সুদ কারবারি ৫০ হাজার টাকা ধার দেন। কিছুদিন পর টাকা ফেরত চান ওই পাওনাদার। দিতে না পারায় মাথায় ওঠে সুদের বোঝা। ওই টাকা পরিশোধ করতে আরও ৪/৫ জনের সুদের জালে জড়িয়ে পড়েন। এক বছরের মাথায় তার আনা দেড় লাখ টাকার সুদ হয় ১০ লাখ টাকা। চালু হয় সুদকারবারী ও তাদের আদায়কারী বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের ষ্টীমরোলার। তাদের নির্মমতায় পালিয়ে যান বাড়ি-ঘর ফেলে। কিন্তু এভাবে কত দিন। সুদ কারবারিদের সাথে আপোষ-রফা করতে বিক্রি করে দেন চিতলমারী বাজারে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া দোকান ঘর ও জায়গা-জমি। এখন সে সব হারিয়ে নিজের জমিতে বর্গা চাষি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, সুদ কারবারিদের নির্যাতনে চিতলমারীর কয়েক’শ পরিবার ভিটেমাটি, জায়গা-জমি ও গাড়ি-বাড়ি হারিয়ে আজ নিঃস্ব। এছাড়া সুদে কারবারিদের অত্যাচারের স্টীমরোলারের চাপ সইতে না পেরে বাপ-দাদার ভিটে-মাটি ফেলে পালিয়েছে বহু পরিবার। এ উপজেলায় সদর হতে প্রত্যন্ত পল্লী পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যাটাগরীর কমপক্ষে দুই শতাধিক সুদকারবারী রয়েছে। এর বাইরে দেপাড়া, বাগেরহাট, বেসরগাতি ও গজালিয়ার বহু লোক চিতলমারীর বিভিন্ন এলাকায় সুদ কারবার চালায়।

এখানে সুদের দেনার চাপ সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেন কালশিরা গ্রামের ভাস্কার্য শিল্পী রাম প্রসাদ মালাকার, রুইয়ারকুল গ্রামের সনজিত ব্রক্ষ্ম, সুরশাইল গ্রামের মাওলানা হারুন। সর্বশেষ গত ২০ জুলাই সুদখোরদের নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন সইতে না পেরে স্কুল শিক্ষিকা হাসিকনা বিশ্বাস (৩৮) আত্মহত্যা করেছেন।

এ ব্যাপারে চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর শরিফুল হক জানান, সুদ ও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশ ২ জন সুদকারকারীকে গ্রেফতার করেছে। চিতলমারী থেকে সুদ ও মাদক উচ্ছেদ করা হবে।

তবে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, স্কুল শিক্ষিকার দূর্ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযানে নেমেছে। এছাড়া অবৈধ ভাবে অর্থলগ্নীকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!