বাগেরহাটের চিতলমারীতে কমপক্ষে বিশ হাজার শিক্ষার্থী অনলাইন গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। গেমে আসক্তদের আচরণে দেখা দিয়ে নানা পরিবর্তন। লেখাপড়ায় নেমেছে ধস। কোন ভাবেই তাদের এ পথ থেকে ফিরানো যাচ্ছে না। তাই অনলাইন গেমে আসক্তদের নিয়ে পরিবারের স্বজনদের মত শিক্ষকরাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কারণ করোনার ক্রান্তিকাল শেষে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলবে তখন শিক্ষকদের এ সমস্যা সমাধানের মুখোমুখি হতে হবে।
চিতলমারী উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে জানা গেছে, এ উপজেলায় ৪ টি কলেজ, ৩১ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭ টি আলিয়া মাদ্রাসা ও ১১১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। মোট ১৪৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ২৩ হাজার ৯৬৯ জন শিক্ষার্থী। এদেরমধ্যে ১২ হাজার ৩৭ জন ছাত্র ও ১১ হাজার ৯৩২ জন ছাত্রী। এদের শতকরা ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থী কোন না কোন ভাবে অনলাইন গেমে আসক্ত।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গেম আসক্ত কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, মহামারি করোনা তাদের জন্যও অভিশাপ। করোনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লম্বা ছুটিতে শিশু, কিশোর ও যুবক শ্রেনীর মত তারাও অনলাইনের বিভিন্ন গেমে আসক্ত হয়ে পড়েছে। অনলাইন গেম গুলোর মধ্যে অন্যতম পাবজি, ফ্রি-ফায়ার, কল অফ ডিউটি, পেস-২০২১, রিয়েল ক্রিকেট ২০২০, তিন পাত্তি গোল্ড অন্যতম। পাবজি ফ্রি-ফায়ার একটি সাংঘাতপূর্ণ গেমস যা মানুষে মানুষে প্রতিহিংসা সৃষ্টি করে। পাবজি, ফ্রি ফায়ারের গেম রঙ্গিন ও আকর্ষনীয় করতে অ্যাপগুলো টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বল করছে। ফলে গেমাররা টাকার জন্য নৈতিকতা হারাচ্ছে। পাবজি অ্যাপে টাকা দিয়ে ইউসি (ডলার) কিনতে হয়। আর ফ্রি ফায়ারে ডায়মন্ড। মূল্য কমপক্ষে ৫০০ টাকা থেকে শুরু। কার্ড (তাস) গেমটা মুলত গ্রামবাংলার তিন কার্ড গেম। যা বর্তমানে বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ খেলে থাকে টাকার বিনিময়ে। কার্ড গেমের এক কোটি চিপসের মূল্য ২০-২৫ টাকা।
একইভাবে চলছে অনলাইন ভিত্তি ক্রিকেট ও ফুটবল গেম। তারা প্রায় সারাদিনই এ গেমে পড়ে থাকেন। তাদের জীবনে অনলাইন গেম এখন আর বিনোদন নয়। ক্ষতিরকারন কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গেমে আসক্ত কয়েকজন শিক্ষাথীর বাবা-মা বলেন, অনলাইনে ক্লাসের জন্য সন্তানদের দামি মোবাইল কিনে দিয়েছিলাম। ক্লাসের চেয়ে তারা গেমেই বেশী আসক্ত হয়ে পড়েছে। কোন কিছুর বিনিময়ে ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনা করতে চাইছে না। ঠিকমত খাওয়া-দাওয়াও করে না। তাদের আচরণেও দেখা দিয়েছে নানা পরিবর্তন।
স্কুল শিক্ষক মোঃ সাফায়েত হোসেন জানান, দীর্ঘ ছুটিতে এমনটি হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা ভাবলে এর বাইরে কিছু করার নেই। তবুও অনলাইন গেমে আসক্তদের নিয়ে পরিবারের স্বজনদের মত তারাও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কারণ করোনার ক্রান্তিকাল শেষে যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুলবে তখন তাদের (শিক্ষকদের) এ সমস্য সমাধানের মুখোমুখি হতে হবে।
চিতলমারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক অবনী মোহন বসু বলেন, আমি যেমন একজন শিক্ষক, তেমনি একজন বাবা। এ উপজেলায় অনলাইন গেম আসক্তি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যার প্রভাব পড়বে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো খুললে। তখন অনেক শিক্ষার্থীই ঝরে পড়বে।
চিতলমারী মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমরাও অবগত আছি। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তরের শতকরা ৮৫ ভাগ শিক্ষার্থী কোন না কোন ভাবে অনলাইন গেমে আসক্ত। আমার স্কুলের শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে আলাপ করছি। বাসায় আরও এ্যাসাইমেন্ট দিয়ে কিভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ত রাখা যায় সে ব্যাপারে আলাপ আলোচনা চলছে।
চিতলমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ আমিনুল ইসলাম বলেন, অনলাইন গেম ও কার্টুনের বিষয়টি নিয়ে আমরা মহাদুচিন্তায় পড়েছি। এ কারণে শিক্ষার্থী মেধা, চোখ ও শরীরের ভীষণ ক্ষতি হচ্ছে। বাচ্চারা অনলাইন ক্লাসের চেয়ে গেমে মেতেছে বেশী। তাই মা-বাবাদের আরও খেয়ালী হতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যাবেক্ষণ আরও বাড়াতে হবে। পারিবারিক ভাবে তাদের খেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই