গেল ২০ সেপ্টেম্বর ইউনিয়ন পরিষদের প্রথম ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ নির্বাচনে বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নির্বাচনও ইসি (নির্বাচন কমিশন) সম্পন্ন করেছেন। এখানে নির্বাচিত হয়েছেন ৭ জন চেয়ারম্যান, ২১ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য ও ৬৩ জন সাধারণ সদস্য। এদের মধ্যে ৩নং হিজলা ইউয়িনের ৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী সদস্য ঝর্ণা বিশ্বাসের জয়লাভের বাস্তবতাটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এমনটাই জানালেন হিজলা ইউনিয়নের পিরেরাবাদ গ্রামের ভোটার নিত্যানন্দ মন্ডল, নিতীশ তরফদার ও অর্চণা মন্ডল।
তারা বলেন, ঝর্ণা বিশ্বাস (৩৮) একজন দলিত সম্প্রদায়ের নারী। নির্বাচনী এলাকায় (৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ডে) মোট ভোটের সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। তাঁর সম্প্রদায়ের ভোট রয়েছে মাত্র দুইশ’র মত। এবারের নির্বাচনে (৭, ৮ ও ৯ ওয়ার্ডে) ৩ হাজার ৪৩৬ জন ভোট দিয়েছেন। পাঁচজন সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীর মধ্যে ঝর্ণা বিশ্বাস এক হাজার ২৪০ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছেন। এ জয় এত সহজে হয়নি। এ জন্য দরিদ্র দলিত পরিবারের নারী ঝর্ণাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে। আমার সাধারণ ভোটারও জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে তাঁর ভালবাসায় মুদ্ধ হয়ে ভোট প্রদান করেছি।
ঝর্ণার স্বামী দিলিপ বিশ্বাস (৪৯) বলেন, ‘পেশায় আমি একজন কাঠমিস্ত্রি। আমাদের ৩ টি সন্তান রয়েছে। দুই ছেলে ও এক মেয়ে স্কুলে লেখাপড়া করে। ঝর্ণা পেশায় গৃহিনী হলেও শক্ত হাতে সংসারের হাল ধরেছে। দরিদ্রতার কষাঘাতেও মনোবল হারাননি কখনো। সংসারের পাশাপাশি কাজ করে গেছেন সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য। আমরা তাঁর জয়ে খুব খুশি।’
দলিত সম্প্রদায়ের নারী নেত্রী ও নবনির্বাচিত হিজলা ইউনিয়নের সংরক্ষিত সদস্য ঝর্ণা বিশ্বাস বলেন, ‘আমাদের দলিত সম্প্রদায়ের সাধারণত বাল্য বিয়েটা বেশী হয়ে থাকে। সেই ব্যবস্থা থেকে আমিও রেহাই পাইনি। মাত্র ১৪ বছর বয়সে আমার বিয়ে হয়। এসএসসি ফেল করার পর মনোবল হারায়নি। স্বামীর সংসারে এসে সংসার ধর্মের পাশাপাশি মানুষের কল্যানে কাজ করে যাচ্ছি। তাই ২০১৯ সালে বাংলাদেশ দলিত প্রান্তিক জনগোষ্টির চিতলমারী উপজেলা শাখার সভানেত্রী নির্বাচিত হই। সেই থেকে মনোবাসনা ছিল মানুষের কল্যানে কাজ করতে ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন করা। লক্ষ্য অটুট ছিল। তাই সকলের ভালবাসায় জয়লাভ করেছি। এ জয় শুধু আমার একার নয়। এ বিজয় সকলের। এখন শুধু মানুষের উন্নয়ন ও কল্যানে কাজ করতে চাই।’
খুলনা গেজেট/ এস আই