বাগেরহাটের চিতলমারীতে প্রবল জোয়ার ও বৃষ্টির পানিতে চিংড়ি ঘের তলিয়ে ভেসে যাচ্ছে মাছ। এখানে পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। ফলে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রবল জোয়ারের সাথে দু’দিনের ভারি বর্ষণে সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ চাষিদের পরিবারে চলছে নিরব কান্না।
শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত দূর্যোগের মধ্যেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
চিতলমারী উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলায় মোট চিংড়ি ঘেরের সংখ্যা ১৬ হাজার ৭১০ টি। যার মোট আয়তন ১৬ হাজার ৮৩৩ একর। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৭৫৮ টি ঘেরে গলদা ও ২ হাজার ৯৫২ টি ঘেরে বাগদা চিংড়ির চাষ হয়। এখানের চাষিরা বছরে ৫৮১ মেট্রিকটন বাগদা ও ২ হাজার ৬৫০ মেট্রিকটন গলদা চিংড়ি এবং বিপুল পরিমান সাদা মাছ উৎপাদন করে থাকেন।
এখানে সাড়ে ৭ হাজার মৎস্য চাষি ও ২ হাজার ৭০২ জন মৎস্যজীবি রয়েছেন। সেই সাথে এই চিংড়ি শিল্প ও মাছ চাষের সাথে এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষের ভাগ্য জড়িত রয়েছে। এ বছর ঋণগ্রস্থ চাষিরা চিংড়ির উৎপাদন দেখে অনেকটা আশায় বুক বেধে ছিলেন। মাছ বিক্রি করে তাদের ধারদেনা মিটবে। কিন্তু হঠাৎ করে জোয়ারের পানিতে চিংড়ির ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে যাওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
চাষিরা জানান, নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় অনেক চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। ঘেরের পাড়ে নেট ও পাটা দিয়ে ঘের রক্ষা করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তারা। পাশাপাশি এসব ঘেরের পাড়ের অধিকাংশ জমিতে শশা, করলা, লাউ, কুমড়াসহ আবাদকৃত সবজির ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। এসব সবজি ক্ষেতে অনেক স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ার উপক্রম দেখা দেয়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েছেন চাষিরা। তারা ঘের রক্ষা করতে নেট জালের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। চাষিরা চিংড়ির ঘের ও সবজি ক্ষেত রক্ষায় মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এলাকার নদী-খালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় খিলিগাতী, সুড়িগাতী, ডুমুরিয়া, খড়িয়া, আরুলিয়া, ঝালডাঙ্গা ও রায়গ্রামসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষের বাড়ি-ঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ফলে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মানুষ চরম দূর্ভোগ পোহাচ্ছে। প্রবল জোয়ারের সাথে দু’দিনের ভারি বর্ষণে সবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এ ব্যাপারে সুরশাইল গ্রামের চিংড়ি চাষি মানু শেখ, সুধাংশু মন্ডল, ডুমুরিয়া গ্রামের বিপ্লব বাড়ই, শ্রীরাম পুরের কৃষ্ণপদ বালা, অনুপ বালা, দয়াল বালা, তুহিন বিশ্বাস, পাড়ডুমুরিয়া গ্রামের দেবদাস ভক্ত, উত্তম বাড়ৈ, কুরমনি গ্রামের গৌর বাইন, ডুমুরিয়া গ্রামের কিসমত শেখ, সবুজ বাড়ৈসহ অনেকে হতাশা প্রকাশ করে জানান, অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে অসংখ্য চিংড়ি ঘের তলিয়ে মাছ ভেসে যাচ্ছে। নেট-পাটা দিয়েও শেষ রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও ও মহাজনদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে তারা চিংড়ি চাষ করেছেন।
চিতলমারী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঋতুরাজ সরকার জানান, এ উপজেলায় এবছর ২ হাজার ৪৭০ একর জমিতে গ্রীষ্ম কালিন সবজির চাষ হয়েছে। এখানে কমপক্ষে ৩০ হাজার সবজি ও চিংড়ি চাষি রয়েছে। চাষিরা এখানে শসা, করল্লা, উচ্ছে, পুঁইশাক, ঢেড়স, চাল কুমড়া, জিংগা, চিচিংগা, বরবটি, মিষ্টি কুমড়া, বেগুন, ডাটা ও লাউয়ের চাষ করেছেন।
বর্তমানে পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। এখানে ৫০৪ একর রোপা আমন পানিতে তলিয়ে গেছে এবং ৬১৭ একর জমির সবজির ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
তবে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মারুফুল আলম জানান, শক্রবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। বড় ধরনের কোন ক্ষতি হয়নি। দু’টো গেটের মুখ খুলে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে রিং বেড়ি বাধ উঁচু করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম