বাগেরহাটের চিতলমারীতে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বসত ঘরে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার (২৭ আগস্ট) গভীর রাতে চিতলমারী উপজেলার খড়মখালি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার হরিদাস মজুমদারের বাড়িতে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
এসময় নারীদের মারধরের পাশাপাশি চোখে বিষাক্ত পদার্থ দেয় হামলাকারীরা। আহতদের উদ্ধার করে চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন, খড়মখালি এলাকার হরিদাস মজুমদারের স্ত্রী কল্পনা মজুমদার (৫৫), হালিশহর এলাকার অচ্যুৎ বালার স্ত্রী চঞ্চলা মৃধা (৪৩), চিতলমারী বাজোরের মৃত লাবন কর্মকর্তারের স্ত্রী আশালতা কর্মকার (৬০) ও দূর্গাপুর এলাকার শঙ্কর কীর্তনিয়ার স্ত্রী হেমলতা কুমারি (৪০)।
আহত কল্পনা মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খরমখালী শ্রী-শ্রী হরিসভা আশ্রম মন্দির কমিটির লোকজন আমাদের ক্রয়কৃত জমি দখলের চেষ্টা করছে। এ নিয়ে আদালতে মামলায় আমরা রায় পেয়েছি। শনিবার রাতে মন্দির কমিটির সদস্য গজেন রায়, গোপাল জয়ধরের নেতৃত্বে ৩০-৩৫ জন লোক দরজা ভেঙ্গে আমাদের ঘরে প্রবেশ করে। ঘরের মধ্যে থাকা আমিসহ আমার নিকট আত্মীয় চার নারীকে মারধর করে। আমাদের চোখে মরিচের গুড়ো, ছাই ও বালু ছুড়ে মারে। বসত ঘর ভাংচুর করে এবং নগদ অর্থসহ মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়। পরে ডাকচিৎকার টের পেয়ে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
স্থানীয় নন্দ কিশোর সাহা বলেন, বিরোধপূর্ণ জমিটি হরিদাস মজুমদারের ক্রয়কৃত সম্পত্তি। মন্দির কমিটির কিছু লোক হরিদাসকে এখান থেকে অন্যায়ভাবে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছে। এই জন্যই হরিদাসের স্ত্রী ও স্বজনদের উপর হামলা করেছে তারা।
পিনাক সাহা নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, জমি নিয়ে বিরোধটি আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। একাধিকবার স্থানীয়ভাবে শালীস বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু কোন রায়ই মন্দির কর্তৃপক্ষ মানে না। জোর করে জমি ভোগ দখলের জন্য নারীদের উপর হামলা করেছে। মন্দির কমিটির খাম খেয়ালীপানায় পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে।
এদিকে রাতের আধারে বর্বোচিত হামলার ঘটনার বিচার দাবী করেন স্থানীয় নারীবাদী সংগঠনের নেত্রীরা।
জাতীয় মহিলা পরিষদ, চিতলমারী উপজেলা শাখার সভাপতি হেলেনা পারভিন বলেন, জমি সংক্রান্ত বিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু রাতের আধারে নারীদের ঘরে প্রবেশ করে মারধর করবে এটা কোনভাবে মেনে নেওয়া যায় না। জায়গা-জমি কাগজপত্র অনুযায়ী ভোগদখল করবে। যারা এই হামলা করেছে তাদেরকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান এই নারী নেত্রী।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিটন সিংহ বলেন, হরিদাসের স্ত্রী ও আত্মীয়দের উপর কে বা কারা হামলা চালিয়েছে এবং ভাংচুর করেছে তা আমাদের জানা নেই। আমাদের বিরুদ্ধে অহেতুক অভিযোগ করছে তারা।
চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. মামুন হাসান বলেন, আহত চার নারীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাদের চোখে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। চোখের মধ্যে বিষাক্ত পদার্থ দেওয়ার আলামত পাওয়া গেছে।
চিতলমারী থানার ভারপ্তাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম কামরুজ্মান খান, দুই পক্ষই জমি নিজের বলে দাবি করেন। এনিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। হামলার ঘটনায় কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খুলনা গেজেট/এমএনএস