খুলনা, বাংলাদেশ | ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর সচল হল ফেসবুক-ইনস্টাগ্রাম-হোয়াটসঅ্যাপ

চিকিৎসক সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

চিকিৎসক সংকটে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী, অর্থসার্জারী ও চক্ষুসহ ১০ জন চিকিৎসকের পদ শুন্য রয়েছে দীর্ঘদিন। একশ’ শয্যার হাসপাতালে প্রতিদিন ভর্তিকৃত প্রায় ২০০ জন রোগীর জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১২ জন। রয়েছে নার্সসহ অন্যান্য জনবল সংকট। ফলে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরকারি হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ক্লিনিক ও বেসরকারি হাসপাতালমুখী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এতে বাড়ছে তাদের চিকিৎসা ব্যয়।

বিষয়ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎস্যক না থাকায় জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে রোগীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন। আর এই সুযোগ নিচ্ছে হাসপাতালের আশে পাশে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠা অবৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলো। হাসপাতাল এলাকায় থাকা দালালদের মাধ্যমে রোগীদের ভাগিয়ে নিয়ে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। ফলে চিকিৎসার নামে আর্থিকভাবে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০০ শয্যার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দৈনিক গড়ে ২০০ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া আউটডোরে প্রতিদিন চিকিৎসা নিতে আসেন আরও প্রায় ২০০ থেকে ৪০০ রোগী। জেলা সদরের এমন একটি হাসপাতাল চলছে তিনজন জুনিয়র কনসালটেন্টসহ মাত্র ১২ জন চিকিৎসক দিয়ে। এখানে নেই কোন সিনিয়র কনস্যালটেন্ট বা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। চিকিৎসকদের মধ্যে রয়েছেন একজন ডেন্টাল সার্জন, একজন করে জুনিয়র কনসালটেন্ট পেডিয়েট্রিক্স, ইএনটি ও গাইনী। রয়েছেন একজন আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও), ৪ জন মেডিকেল অফিসার ও জরুরী বিভাগের জন্য রয়েছে ৩ জন মেডিকেল অফিসার। এছাড়া রয়েছে জুনিয়র কনসালটেন্ট প্যাথলোজি একজন, প্যাথোলজিস্ট একজন এবং মেডিকেল অফিসার আয়ুরবেদিক (উন্নয়ন) একজন।

সদর হাসপাতালে সিনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, অর্থপেডিক্স, মেডিসিন, গাইনী, চক্ষু ও এ্যানেসথেসিয়া, জুনিয়র কনসালটেন্ট সার্জারী, প্যাথলজি ও বিষয় বিহীন, রেডিওলজিস্ট এবং প্যাথলজিস্ট পদ দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে। এ্যানেসথেসিয়া ও সার্জারী কনসালটেন্ট না থাকায় এই হাসপাতালে বর্তমানে কোন জরুরি অপরেশন করা হচ্ছে না। একই সাথে মেডিকেল অফিসারের ২টি পদ খালি আছে।

এছাড়া নার্সিং সুপার ভাইজারের ১টি, সিনিয়র স্টাফ নার্স- ৫টি, মিডওয়াফ ৬টি, সহকারি নার্স ২টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) ৩টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও) ২টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ফিজিও) ১টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ইসিজি) ১টি, কার্ডিওগ্রাফার ২টি, ডার্করুম সহকারির ১টি পদ খালি রয়েছে। যে কারনে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা একবারে তলানীতে পৌঁছানোর উপক্রম হয়েছে।

হাসপাতালে শিশু বিশেষজ্ঞ ও সার্জারিসহ অন্যান্য বিষয়ে অভিজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় সাধারণ মেডিকেল অফিসার দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা সেবা চলছে। ফলে রোগীরা তাদের কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভুক্তভোগী রোগীর স্বজনরা।

এদিকে সদর হাসপাতলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের সুযোগ নিচ্ছে আসে পাশের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক গুলো। দালালদের মাধ্যমে হাসপাতাল চত্বর থেকে তারা রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে নিয়ে চিকিৎসা সেবার নামে অনেককে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে। ফলে মোটা অংকের অর্থ খরচ করে প্রতারিত হচ্ছে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা চিকিৎসা সেবাপ্রার্থী সাধারণ মানুষ।

জেলার আশাশুনি উপজেলার বিছট গ্রামের আব্দুর রশিদ গাজী (৪৬) ও কাছেদ আলী মোড়ল (৫৫) দু’জন সদর হাসপাতালে এসেছিলেন চোখের ও হাড়ের ডাক্তার দেখাতে। তারা বলেন, ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে এসেই জানতে পারেন এখানে কোনো হাড়ের বা চোখের ডাক্তার নেই। বাড়ি থেকে জেলা সদরে আসা যাওয়া খরচ কমপক্ষে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা।

তারা বলেন, বেসরকারী পর্যায়ে কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার মত আর্থিক সঙ্গতি নেই তাদের। হাসপাতাল চত্বরে বেশ কয়েকজন কম খরচে ভাল ক্লিনিক থেকে চিকিৎসা করিয়ে দেওয়ার জন্য নিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু টাকা পয়সা বেশি না থাকায় যেতে সাহস পাইনি। তাই চিকিৎসা না করেই বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

সদর উপজেলার ধুলিহর গ্রামের মোকলেছুর রহমান জানান, বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে এসছিলেন মেডিসিনের ডাক্তার দেখাতে। কিন্তু দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে টিকিট নেয়ার পর জানতে পারলাম সদর হাসপাতালে কোন মেডিসিন এর ডাক্তার নেই। তাই বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। পরে কোন ক্লিনিকে নিয়ে দেখিয়ে নিব।

শুধু রশিদ, কাছেদ আলী ও মোকলেছুর রহমান নয় প্রতিদিন শত শত মানুষ তাদের কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন এই হাসপাতাল থেকে।

সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ আব্দুস সালাম চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, শুন্য পদে ১০জন চিকিৎসক, ৪ জন নার্স এবং অন্যান্য শুন্য পদে জনবল চেয়ে একাধিকবার স্বাস্থ্য বিভাগের মহাপরিচালকের দপ্তরে পত্র প্রেরণ করা হলেও অদ্যবধি কোনো লাভ হয়নি।

তিনি বলেন, নিয়মিত শতাধিক ভর্তি রোগীসহ বহির্বিভাগে বহু সংখ্যক রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। কিন্তু চিকিৎসক সল্পতার কারণে তাদেরকে কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হয় না। তার পরও চেষ্টা করা হচ্ছে সাধারণ মানুষ যেন চিকিৎসা নিতে এসে ফিরে না যায়।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!