খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

চিকিৎসকসহ জনবল সংকট, পাইকগাছা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই রোগী

পাইকগাছা প্রতিনিধি

খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাত্র ৪ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে সার্বিক চিকিৎসা কার্যক্রম। চিকিৎসক ও জনবল সংকটে হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সুন্দরবন উপকূলীয় জনপদের প্রায় সাড়ে ৪ লাখ মানুষের জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ব্যস্ততম হাসপাতালটির ইনডোর, আউটডোর, নাইট ডিউটি, জরুরী বিভাগসহ সকল ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম নিশ্চিত করতে মাত্র ৪ জন চিকিৎসকের পক্ষে রীতিমত দূরুহ হয়ে পড়েছে।

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হলেও এখানে সার্বক্ষণিক ৮০ থেকে ১১০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। কখনো আবার রোগীর সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পায় যে, বেড সংকুলান না হওয়ায় বারান্দা ছাপিয়ে সিঁড়িতে পর্যন্ত থাকতে বাধ্য হন রোগীরা। জনবল বলতে গেলে ১০ শয্যা বিশিষ্ট।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানান, বেড অ্যাকুপেসি ১৫০% থেকে ১৬০%। আউটডোরে নিয়মিত রোগীর সংখ্যা থাকে ৪ থেকে সাড়ে ৪ শত জন।
সূত্র জানায়, প্রায় সাড়ে ৪ লাখ অধিবাসীর বসবাস এ উপজেলায়। পাাইকগাছা ছাড়াও আশেপাশের জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি ও তালা উপজেলা, খুলনার দাকোপ, চালনা থেকেও এ হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন রোগী সাধারণ। চিকিৎসক ও জনবল সংকটে এত বিপুল সংখ্যক জন মানুষের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

জানা যায়, হাসপাতালে জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), পেডিয়াট্রিক্স, ইএনটি, অর্থো, সার্জারী, কার্ডিওলজি, অফথালমোলজি, স্ক্রীন এন্ড ভিডিসহ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও শূণ্য আছে ১৭ টি। কর্মরত ৭ জন চিকিৎসক এর মধ্যে অন্য হাসপাতালে ৩ জন ডাক্তার সংযুক্তিতে কর্মরত রয়েছেন। ইতোমধ্যে নতুন আরেকজনের সংযুক্তি অর্ডার হয়েছে।
এছাড়া, স্বাস্থ্য সহকারীর বেশির ভাগ পদ দীর্ঘদিন শূন্য থাকার পাশাপাশি আল্ট্রাসনোলজিস্ট, মালী ও ড্রাইভার না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স সেবাও পাচ্ছে না জনগণ। অত্র কমপ্লেক্সের যেখানে মোট কর্মকর্তা কর্মচারীর সংখ্যা ১৯৪ জন, সেখানে রয়েছে মাত্র ১০১ জন। দীর্ঘদিন ৯৩ টি পদ শূণ্য থাকায় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান কতৃপক্ষ।

এদিকে ডাক্তার ও জনবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে সার্জারি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা। প্রতিটি ওয়ার্ডে অপরিচ্ছন্নতা, পানি, বিদ্যুতের সমস্যা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত বাথরুম, খাবারে অনিয়মসহ নানা সমস্যায় হাসপাতালটি যেন আজ নিজেই রোগী। দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে এক্সরে, আল্টাসোনোগ্রাম কার্যক্রম। তেলের অভাবে ঠিকমত চলেনা জেনারেটর। গত ৫ মাস যাবৎ বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের অ্যাম্বুুলেন্স সেবা।
স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ১০ টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভা ও পাইকগাছা উপজেলায় অন্তত পাঁচ লাক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি।

২০১৫ সালের ৩মার্চ ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবার মান বাড়েনি। দেওয়া হয়নি চাহিদামতো জনবল। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার একমাত্র পদটি পূরণ রয়েছে। এছাড়া জুনিয়ার কনসালটেন্ট ১১টি পদের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন ২জন। আবাসিক মেডিকেল অফিসারের পদ ১টি বর্তমানে শূন্য রয়েছে। মেডিকেল অফিসার এর ৭টি পদে কর্মরত রয়েছেন ৩জন। ডেন্টাল সার্জন এর ২টি পদে ১ জন কর্মরত রয়েছেন। একটি মাত্র নার্সিং সুপার ভাইজারের পদটি শূন্য রয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স এর ৩২টি পদে রয়েছেন ২১জন। মিডওয়াইফ এর ৪টি পদে ৩জন, মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ৭টি পদে ৩জন, ফার্মাসিস্টের ২টি পদ পূর্ণ রয়েছে। স্যাকমো ২টি পদ পূর্ণ রয়েছে। স্বাস্থ্য পরিদর্শক এর ৪টি পদে কর্মরত রয়েছেন ১জন, সহঃ স্বাস্থ্যঃ পরিদর্শক এর ১৩টি পদের বিপরীতে ৮জন কর্মরত রয়েছেন, কার্ডিওগ্রাফার ১টি পদ পূর্ণ রয়েছে, ড্রাইভার এর ১টি পদে ১জন কর্মরত রয়েছেন, স্বাস্থ্য সহকারীর ৬৫ টি পদে ৪৫জন কর্মরত রয়েছেন, হারবাল এ্যাসিসটেন্ট এর ১টি পদ পূরণ রয়েছে, অঃ সহঃ কাম কম্পিঃ অপাঃ এর ৪টি পদে রয়েছেন ২জন, টিএলসি এ এর পদের সংখ্যা ১টি, রয়েছে ১টি, কুক/মশালটি এর পদের সংখ্যা ২টি, রয়েছে ১টি, অফিস সহায়ক পদের সংখ্যা ৮টি, রয়েছে ১ জন।

এছাড়া কম্পিউটার অপারেটর ১টি, প্রধান সহকারীর পদ একটি, হেলথ এডুকেটরের পদ ১টি, ক্যাশিয়ারের পদ ২টি, প্রধান সহঃ কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ ১টি, পরিসংখ্যানবিদ ১টি, স্টোর কিপারের পদ ২টি, সহঃ নার্স এর পদে ১টি, কম্পাউন্ডার পদ ১টি, নিরাপত্তা প্রহরীর পদ ২টি, জুনিয়র মেকানিকের পদের সংখ্যা ১টি, মালী এর পদের সংখ্যা ১টি, আয়া পদের সংখ্যা ২টি, পরিচ্ছন্নতা কর্মী এর পদের সংখ্যা ৫টি, ওয়ার্ডবয় এর পদের সংখ্যা ৩টি, পদগুলো শূণ্য রয়েছে। ব্যস্ততম হাসপাতালটিতে প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী সাধারণ অনেক সময় চিকিৎসা সেবা না পেয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হন।

সেবাপ্রার্থী ভূক্তভোগীরা জানান, ডাক্তার সংকটে আউটডোরে টিকিট কেটে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে কখনো কখনো ২/৩ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। কখনো আবার চিকিৎস্যা দিতে না পারায় উন্নত চিকিৎসার কথা বলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
এদিকে হাসপাতালের একমাত্র এক্স-রে মেশিনটি থাকলেও আলোর মুখ দেখেনি। প্যাথলজি বিভাগে পর্যন্ত মেশিন সরঞ্জামাদি না থাকায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য রুগীদের বাধ্যতামূলক বাইরের ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, জনবল ও উপকরণ সংকটে চরমভাবে চিকিৎসা সেবা ব্যাহতের পাশাপাশি পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি যেন আজ নিজেই রোগী।

এ সব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, তিনি অল্প ক’দিন আগে এখানে যোগদান করেছেন। হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানো হয়নি। হাসপাতালের চিকিৎসক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট রয়েছে। অপ্রতুল সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তারা যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেন, জরুরীভিত্তিতে শূণ্য পদের জনবল পূরণ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির সরবরাহ না করলে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অনেক পদই শূন্য রয়েছে। যে কারণে তারা প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!