সম্প্রতি পৃথক ফরম্যাটের জাতীয় দলের দু’জন অধিনায়ককে নেতৃত্ব থেকে সিরিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এর মধ্যে দেশের সাদা পোশাকে অন্যতম সেরা ব্যাটার ও টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হক সৌরভকে সরানো হয়েছে। কারণ অধিনায়ক হওয়ার পর থেকে তার ব্যাট হাসছিল না।
এরপর টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে জিম্বাবুয়ে সফরে বিশ্রাম দেয়া হয়েছে। কারণ, তিনি ব্যাটে-বলে নিজের ফর্ম হারিয়েছেন। বলা হচ্ছে দুই অধিনায়কই নেতৃত্বের চাপে ফর্ম হারিয়েছেন।
এবার ফর্মে ফিরতে মরিয়া মোহাম্মদ মিঠুনকে করা হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের অধিনায়ক। তাই প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটারের জন্য নেতৃত্ব আবার বড় চাপ হয়ে আসবেনা তো!
তবে মিঠুন চাপ বলতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘সেখানে আমরা ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছি, অন্য কোনো কাজে না। ছোটবেলা থেকেই এই পেশাকে বেছে নিয়েছি।
হয়তো প্রতিপক্ষ অন্য রকম, চিনি না বা নতুন কোনো কিছু মোকাবিলা করতে হবে। আপনি যদি বলেন চ্যালেঞ্জ, তো আমি আপনার সঙ্গে একমত যে অবশ্যই এটা একটা চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমি মনে করি না চাপ।’
ক্যারিবীয় সফরে দুইটি চারদিনের ও তিনটি একদিনের ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সবকটি ম্যাচই অনুষ্ঠিত হবে সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে। প্রথম চার দিনের ম্যাচ মাঠে গড়াবে ৪ঠা আগস্ট।
সফরে যাওয়ার আগে মিরপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মিঠুন জানান নিজ দলের লক্ষ্যের কথা। তার দলের প্রায় সব সদস্যই ফর্মে ফিরতে মরিয়া। এই সফরে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া সৌম্য সরকার, সাব্বির রহমানদের জন্য চ্যালেঞ্জ নিজেদের প্রমাণ করে জাতীয় দলে ফেরার। যেখানে বেশির ভাগ সদস্য চাপে এমন একটি দলকে কিভাবে মোটিভেটেড করবেন অধিনায়ক মিঠুন!
‘এ’ দলকে বলা হয় জাতীয় দল থেকে বাদ পড়াদের ফেরার মঞ্চ। যে কারণে ক্রিকেটারদের দিক থেকে মানসিকভাবে কিছুটা হলেও চাপ থাকার কথা। মিঠুন অবশ্য এর সঙ্গে একমত নন।
এবারের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জাতীয় দলে খেলেছেন এমন ক্রিকেটারের সঙ্গে রাখা হয়েছে যুব দল, হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) ইউনিটের ক্রিকেটারদেরও। ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের চেয়ে দল হিসেবে সেরাটা দেওয়াতেই মনযোগ তার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের ভাবনাটা খুবই পরিষ্কার যে আমরা ‘এ’ দলের হয়ে খেলতে যাচ্ছি। এখানে জাতীয় দলের কোনো বিষয় নাই। ‘এ’ দলে কেউ ভালো করলে তাদের প্রয়োজন হলে পরে হয়তো বা তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। সেটা ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত। কিন্তু আমরা খেলোয়াড় হিসেবে বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে প্রতিনিধিত্ব করতে যাচ্ছি। এখানে শুধু জাতীয় দল থেকে খেলোয়াড় আসছে না। এখানে এইচপিরও অনেক খেলোয়াড় আছে। আমরা সবকিছু বাদ দিয়ে ‘এ’ দলকে নজরে রাখছি যে কীভাবে ‘এ’ দলের হয়ে সেরা পারফরম্যান্সটা দিতে পারি।’
২০২১ সালে জাতীয় দলের জার্সিতে সর্বশেষ ম্যাচ খেলেন মিঠুন। এখন পর্যন্ত ১০টি টেস্ট, ৩৪ ওয়ানডে ও ১৭ টি-টোয়েন্টি খেলা এই ব্যাটার জানালেন ‘এ’ দলের হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সিরিজ জিততে চান দুই ফরম্যাটেই। সে লক্ষ্যে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সের চেয়ে দলীয় স্বার্থ ভাবার বার্তা দিয়েছেন অধিনায়ক মিঠুন।
তিনি বলেন, ‘ওখানে (ওয়েস্ট ইন্ডিজে) আমাদের লক্ষ্য সিরিজ জেতা। এজন্য অনেক জায়গায় চ্যালেঞ্জ আসবে আর তা পার করতে হবে। এখানে এক-দুইজন দিয়ে হবে না। শেষদিকে টেলএন্ডারদেরও জয়ের জন্য রান করতে হবে। বোলারদেরও তো কাজ করতে হয়।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশি যে কয়জন ক্রিকেটার নিয়মিত ট্রলের শিকার হন তাদের একজন মোহাম্মদ মিঠুন। পারফর্ম করেন বা নাই-ই করেন ট্রল হয়ে পড়েছিল তার নিত্যসঙ্গী। তবে ব্যাট হাতে পারফর্ম করতে না পেরে দল থেকে বাদ পড়েছেন যৌক্তিকভাবে। বাজে ফর্ম, দলে জায়গা হারানো, ট্রল সবকিছু পেছনে ফেলে মিঠুন ঠিকই এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্রে বিশ্বাস রেখেছেন।
তিনি বলেন, ‘সেটা (ট্রল) অনেক পুরাতন কথা, ওটা কীভাবে নিজেকে ম্যানেজ করতে হবে, সেই জিনিসগুলো ভুলার জন্য যথেষ্ট সময় পেয়েছি। পেয়েই ক্রিকেটে ফিরেছি, খেলছি। অবশ্যই আমাকে এখন একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে (‘এ’ দলের অধিনায়ক), এটাতে কীভাবে নিজের সর্বোচ্চটা দিতে পারি আমার নজর ওদিকে। অন্য কী হচ্ছে, না হচ্ছে আমার বিষয় না। ওগুলো খুব একটা নজর দিই না।’