খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ২৭শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  ডেঙ্গুতে আরও ২ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১৯৫
  সাবেক সিইসি হাবিবুল আউয়াল ৩ দিনের রিমান্ডে
বহু অপকর্মের হোতা তেরখাদার সাবেক এই কর্মকর্তা

চাঁদা না দিলে মামলা, গ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ারের হুমকি দিতেন ওসি মোশাররফ

রাসেল আহমেদ, তেরখাদা

তেরখাদা থানার সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সরদার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, হয়রানি, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অভিযোগ ওঠায় জনমনে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এক মামলায় আগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড নতুন করে আলোচনায় এসেছে। বুধবার (২৫ জুন) খুলনার তেরখাদা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. গোলাম মোস্তফা ভুট্টো বাদী হয়ে সরদার মোশাররফসহ ১০ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।

বাদী গোলাম মোস্তফা ভুট্টো বলেন, সেই সময়ে মামলা করার মতো পরিবেশ ছিল না। এখন কিছুটা সাহস পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। এলাকার মানুষও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছে।

বাদীর অভিযোগ, বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন ওসি মোশাররফ। তিনি নিজেও পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন, না দিলে গ্রেপ্তার ও ক্রসফায়ারের হুমকি দেন।

মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৩ সালের ২০ জুন ও ২০২৪ সালের ১৩ জুলাই ওসি মোশাররফ ও তার সহযোগীরা বাদীসহ একাধিক ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে গিয়ে অর্থ আদায় করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক চৌধুরী ফখরুল ইসলাম বুলু বলেন, আমার বাবা জালাল উদ্দিন চৌধুরী ২০১২ সালে ইন্তেকাল করেন। অথচ তাকে ২০২৪ সালের একটি নাশকতা মামলায় আসামি করা হয়েছে। এটি স্পষ্ট উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়রানি।

উপজেলার পশ্চিম কাটেংগা এলাকার বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানান, কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট বা অপরাধ না থাকা সত্ত্বেও ওসি মোশাররফ তাকে আটক করে অর্থ দাবি করেন। টাকা না দিলে নাশকতার মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। কয়েক মাস জেল খেটে বের হওয়ার পরও কোনো বিচার পাননি বলে জানান তিনি।

একই এলাকার ভুক্তভোগী তাজ মাহমুদ বলেন, ওসি মোশাররফ আমাকে তিনটি মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে টাকা দাবি করেন। কোনো অভিযোগ ছাড়াই থানায় আটকে রেখে মানসিকভাবে হয়রানি করেন।

উপজেলার কাটেংগা এলাকার সিঙ্গাপুর প্রবাসী সবুজ খান বলেন, থানার ওসি মোশাররফ জমিজমা সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আমার চরম ক্ষতি করেছে। টাকা নিয়েও সে কাজ করেনি। উল্টোভাবে আমাকে নানা ভাবে হয়রানি করেছে।

সূত্র জানায়, তেরখাদায় যোগদানের আগেও ওসি মোশাররফ রূপসা ও লবণচরায় দায়িত্ব পালনের সময় বিতর্কে জড়ান। অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের এমপি ও নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে তিনি জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং বিচার-শালিসের নামে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। সেসব অভিযোগ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হলেও রহস্যজনকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বরং, এমপি ও প্রভাবশালীদের সুপারিশে একাধিকবার শ্রেষ্ঠ ওসি হিসেবে পুরস্কৃত হন তিনি, যা নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয়দের দেওয়া তথ্য মতে, ওসি মোশাররফের সময় থানাকে চাঁদাবাজির কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হতো। নিরীহ মানুষদের উপর ভয়-ভীতি ও নির্যাতন ছিল নিত্যদিনের ঘটনা।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার বলর্দ্ধনা এলাকার এক বাকপ্রতিবন্ধী সনাতন ধর্মালম্বী গৃহবধূ গণধর্ষণের শিকার হলে ওসি মোশাররফ অর্থের বিনিময়ে ধর্ষকদের রক্ষা করেন এবং থানায় মামলা না নিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। পরে ছাত্র জনতার চাপে মামলা নিতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু ধর্ষণ মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার না করায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওসির প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করে।

পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ তাকে তেরখাদা থেকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করে। চলমান মামলায় গুরুতর অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও ওসি মোশাররফ হোসেন বর্তমানে খুলনা জেলার পুলিশের ক্রাইম শাখায় কর্মরত আছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনের নিরবতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তুলেছে।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!