খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  অ্যান্টিগা টেস্ট: তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশ ২৬৯/৯, পিছিয়ে ১৮১ রানে
এখনো সংষ্কার হয়নি বেড়িবাঁধ

চরম দূর্ভোগে প্রতাপনগরের পানিবন্দি ২৫ হাজার মানুষ

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ভেঙ্গে যাওয়া বেড়িবাঁধ সংষ্কার হয়নি। এখনো পানির মধ্যেই বসবাস করছে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়নের ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ। ইউনিয়ন জুড়ে নদ-নদীর পানির জোয়ার-ভাটা খেলা অব্যহত থাকায় ভেঙ্গে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে খাবার পানির তীব্র সংকট। এতে করে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে ওই ইউনিয়নের মানুষ। সবচেয়ে সমস্যায় আছে শিশু, নারী এবং বৃদ্ধরা। বাথরুমে যাওয়ার জন্য নারীদের সন্ধ্যা বা অন্ধকারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। সবমিলিয়ে চরম দূর্ভোগে রয়েছে এখানকার মানুষেরা।

প্রতাপনগরের কুড়িকাউনিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাতা হানার ২০দিন অতিবাহিত হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতাপনগরের মূল তিনটি ভাঙ্গন পয়েন্ট এখনো মেরামত করা হয়নি। ফলে চারিদিকে পানিতে ডুবে আছে। কোনভাবে ঘরে থাকা যাচ্ছে না। নৌকায় করে চলাফেরা করতে হয়। চারিদিকে পানি আর পানি। কিন্তু কোথাও খাওয়ার পানি নেই। গোসল করতে পারছি না, বাথরুম করতে সমস্যা হচ্ছে। আম্পানের সময় ভাটায় পানি সরে যেত। কিন্তু জোয়ার-ভাটা চললেও এবার পানি আর সরছে না। এলাকার ৫ হাজার পরিবার পানির মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। পানি বদ্ধ হয়ে থাকার কারণে অনেকের জ্বর, কাঁশি, সর্দি, ডাইরিয়াসহ দেখা দিচ্ছে নানান পানিবাহিত রোগ। ধনি, গরিব সবার অবস্থা একই হয়ে গেছে। প্রতাপনগরের মানুষরা বর্তমানে চরম বিপদের মধ্যে আছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিবছর এই রকম হলে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবে না। অনেক মানুষ এলাকা থেকে চলে গেছে আরও অনেকে চলে যাচ্ছে। বাঁধের ভাঙ্গন দেখা দেওয়ার সাথে সাথে কাজ করলে ভাঙ্গন এতে বড় হতো না। কিন্তু এই কাজটি করার কেউ নেই। বাঁধ ভাঙ্গলে তার পরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন আসে। তার পর বাঁধের কাজে হয় ব্যাপক অনিয়ম। ফলে বাঁধ টেকে না।

প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন জানান, গত বছরের ২০ মে আম্পানে বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় ফসল, গবাদি পশু, ঘর বাড়িসহ কোটি কোটি টাকার মৎস্য সম্পদ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পুরো ইউনিয়নের অবকাটামো। ৯ মাস ধরে সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠার চেষ্টা করছিল এই উপকূলের মানুষ। কিন্তু আম্পানের ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই ইয়াসের আঘাতে ফের বিধ্বস্ত হয় পুরো ইউনিয়ন। আমার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের ১৭ গ্রামের ৫ হাজার পরিবারের প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আজও পানিবন্দি। কাজ নেই, খাবার নেই। কেউ মারা গেলে কবর দেওয়ার পর্যন্ত জায়গা নেই। ধনী-গরিব সবাই সমান হয়ে গেছে। এসব এলাকায় খাবার পানির তীব্র সংকটে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। রান্নার ব্যবস্থা না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে বহু মানুষ। সরকারিভাবে যে সকল ত্রাণ সহয়তা পেয়েছিলাম সব মানুষের মাঝে বিতরণ করেছি।

ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, আম্পানের পানি সরেছে তিন মাস হলো। এর মধ্যে আবারোও নতুন করে বাঁধ ভেঙ্গে পুরো ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের প্লাবিত হয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মানুষ কীভাবে পারবে? একটা ক্ষত কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার আঘাত। এখন আর বসবাস করার উপযোগী থাকলো না আমার ইউনিয়ন। আর পারছি না। মানুষ কষ্ট দেখে ভালো লাগে না। দ্রুত স্থায়ী টেকসই বেড়ি বাঁধ নির্মাণ না করা হলে এই এলাকা মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।

তিনি আরও বলেন, ইয়াসের প্রায় ২০দিন পার হয়ে গেছে। কিন্তু প্রতাপনগর ইউনয়নের বন্যতলা, কুড়িকাউনিয়া ও হরিষখালী ভাঙ্গন এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে কুড়িকাউনিয়া ও হরিষখালী পয়েন্টে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার বাঁধের কাজ করছে। তবে কাজ হচ্ছে খুব ধীরগতি। আগামী পূর্ণীমার গোনের আগে এই তিনটি ভাঙ্গন মেরামত করা না গেলে দেশের মানচিত্র থেকে বিলিন হয়ে যাবে সাতক্ষীরার প্রতাপনগর ইউনিয়ন।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুল ইসলাম খান খুলনা গেজেটকে বলেন, ঘূণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে আশাশুনি সদর, প্রতাপনগর, বড়দল, আনুলিয়া, খাজরা ইউয়িনের ১৪টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙ্গে এলাকা প্লাবিত হয়। অধিকাংশ পয়েন্টে স্থানীয় মানুষ-পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের সহয়তায় বাঁধা সম্ভব হলেও প্রতাপনগরের ৩টি পয়েন্টে এখেনো বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়নি। উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে প্রতাপনগর। ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে এলাকায় এখনো পানি প্রবেশ করছে। ৫ থেকে ৬ হাজার পরিবার এখনও পানি বন্দি হয়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, ইয়াসের পর আমাদের পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ৩শ’ বান টিন পেয়েছি। এখনও অনেক মানুষের ঘরের টিনের সমস্যা তাদের মাঝে টিন বিতরণ শুরু করেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬শ’ প্যাকেট শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে। ৪০ মেট্রিক টন জিআর চাল বিতরণ করেছি দুর্গতদের মাঝে। জুনের আগে কাজ শেষ না হলে এখানার মানুষ আবারও বিপদে পড়বে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে এলাকাবাসী দ্রুত পানি মুক্ত হবে বলে আশা করি।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্বে) রাশেদুর রহমান বাপ্পি খুলনা গেজেটকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে সাতক্ষীরা এবং খুলনার কয়রার ২৫টি পয়েটে বাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছিল। ইতোমধ্যে ২০টি পয়েন্ট বাঁধ দেওয়া হয়ে গেছে। খুলনার কয়রার দুটি ও সাতক্ষীরার প্রতাপনগরের তিনটি পয়েন্টে বাঁধ দিয়ে এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে প্রতাপনগরের কুড়িকাহুনিয়া ও হরিষখালী আমাদের কাজ চলছে। বন্যতলা পয়েন্টে জাইকার অর্থয়নে কাজ হবে। ওদের কাজ এখন শুরু হয়নি। জুন মাসের ২৬ তারিখে পূর্ণিমার কারণে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। আশা করছি তার আগে সকল বাঁধের কাজ শেষ হবে।

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!