উঠে দাঁড়ালেন, যেমন দাঁড়াতেন। চলাফেরায় সেই দৃপ্ত ভঙ্গিমা। চেনা সেই ক্ষিপ্রতা। ৫২ দিন পর তাঁকে হাঁটতে দেখল গোটা দেশ। দীর্ঘ এই সময়ের সঙ্গী হুইলচেয়ার ছেড়ে এমন মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হেঁটে সামনে এলেন, যখন নীলবাড়ির লড়াইয়ে তিনিই জয়ী। শুধু জয় নয় দু’শোরও বেশি আসন তখন তাঁর মুঠোয়।
জয়ের পর আর দেরি করতে চাননি। তাই সোমবার দুপুরেই তৃণমূল ভবনে দলের জয়ী বিধায়কদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জয়ী বিধায়কদের সোমবার দুপুর ৩ টায় আসতে বলা হয়েছে তৃণমূল ভবনে। সেখানে বিধায়কদের সঙ্গে সর্বপ্রথম রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
কোভিড সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল গোটা ভারত। পশ্চিমবঙ্গেও বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে তা পর্যাপ্ত নয় বলেই মত প্রশাসনিক মহলের। মনে করা হচ্ছে তৃতীয় বারের জন্য শপথ নেওয়ার আগে এই বৈঠকেই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দলের জয়ী বিধায়কদের দায়িত্ব বণ্টন করে দিতে পারেন তিনি। মনে করা হচ্ছে, যে সব এলাকায় তৃণমূল বিধায়ক নেই সে সব জায়গায় প্রশাসন নিজেই কাঁধে দায়িত্ব নিতে পারেন।
দলীয় সূত্রে খবর বৈঠকে নতুন মন্ত্রিসভা গঠন নিয়েও আভাস দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। বিদায়ী মন্ত্রিসভার কেউ কেউ আগামী মন্ত্রিসভায় নাও থাকতে পারেন বলেই মনে করা হচ্ছে। সোমবারের বৈঠকেই সে বিষয়ে ইঙ্গিত দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। মনে করা হচ্ছে এক ঝাঁক নতুন মুখের দেখা মিলবে মমতার নতুন মন্ত্রিসভায়। কালীঘাটের একটি বিশ্বস্ত সূত্র এমনটাই জানিয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভার নীল নকশা কার্যত তৈরি হয়ে গিয়েছে বলেই খবর। ফলে সোমবার সন্ধ্যায় বৈঠক শেষ করেই রাজভবন যাবেন মমতা। সেখানে গিয়ে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের কাছে তৃতীয় বারের জন্য সরকার গঠনের প্রস্তাব দেবেন তিনি।
২০১১ সালে প্রথম বার রাজভবনে মমতার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হলেও ২০১৬ সালে সরকার গঠনের পর মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান হয়েছিল রেড রোডে। যেখানে হাজির হয়েছিলেন দেশের বিজেপি বিরোধী নেতারা। কোভিড সংক্রমণের কারণে এ বার আর কাউকে আক্রমণ জানানো হবে না। এ বার নতুন মন্ত্রীদের শপথ গ্রহণ হবে রাজভবন। অবশ্যই তা ছোট পরিসরে। তার পর নতুন বিধায়কদের শপথের কাজ হবে কোভিডবিধি মেনেই। যদিও, সেই কাজটি করবেন বিধানসভা কর্তৃপক্ষ। সেই কাজের বিষয়েও জরুরি নির্দেশ তৃণমূল ভবনের বৈঠক থেকেই দেবেন তিনি।
নীলবাড়ির লড়াইয়ে এক দিকে একা তিনি। অন্য দিকে, নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ। জেপি নড্ডা। যোগী আদিত্যনাথ। ধর্মেন্দ্রপ্রসাদ। কৈলাস বিজয়বর্গীয়… তাঁদের সহযোগী এ রাজ্যেরই দিলীপ ঘোষ, মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীরা। ভাইপো অভিষেক অনেকটা সামলেছেন বটে কিন্তু গেরুয়া রথীদের ওই চক্রব্যূহে মমতা ছিলেন একেবারেই কেন্দ্রীয় লক্ষ্য। তবে তিনি যুঝে গিয়েছেন। ‘খেলা হবে’ যখন বলছেন, ময়দানে তখন তিনি সত্যিই একা। তিনি অবশ্য বার বারই বলেছেন তাঁর সঙ্গে আছে বাংলার অগণিত মানুষ। কিন্তু রবিবার যখন তিনি প্রকাশ্যে এলেন, তত ক্ষণে সেই পদ্মচক্রব্যূহ ছারখার। মমতা বিজয়ী।
দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন প্রাপ্তি এবং ভোট শতাংশের হিসেব কষে নির্বাচনী বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, বাম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-রও একটা অংশের সমর্থন গিয়েছে মমতার ঝুলিতে। বিজেপি যখন রাজ্যে ধর্মীয় মেরুকরণের প্রচার চালাচ্ছে, মমতা তখন মধ্যবিত্ত, মহিলা এবং সংখ্যালঘু ভোটারদের একত্রিত করে ফেলেছেন বলেই বিশ্লেষকদের একাংশের মত। তা না হলে এই জয় এবং ভোট শতাংশ তৃণমূলের ঝুলিতে আসা সম্ভব নয় বলেই তাঁদের ধারণা। কারণ, তৃণমূলের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ভোট শতাংশপ্রাপ্তি এ বারই।
খুলনা গেজেট/এনএম