ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণি মৃতের সংখ্যা শতক স্পর্শ করেছে। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বন থেকে ৯৬টি হরিণ এবং ৪টি বন্য শুকরের মৃতদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। বনের কটকা, কচিখালী, করমজল, পক্ষীর চর, ডিমের চর, শেলার চর ও নারিকেল বাড়িয়া এলাকা থেকে মৃত প্রাণিগুলো উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি ১৮টি হরিণ এবং একটি অজগর সাপ অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের বনে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বন বিভাগ বলছে, ঘূর্ণিঝড়ে বনবিভাগের বিভিন্ন অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা। তবে আর্থিক মূল্যে নিরুপন যোগ্য নয়, এমন ক্ষতিই হয়েছে বেশি। যার মধ্যে অন্যতম হলো বনের শতাধিক পুকুর প্লাবিত হয়ে নোনা পানি ঢুকে পড়েছে। এতে বন্যপ্রাণী ও বনজীবীরা কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। ১১ কিলোমিটার গোল বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ঝড়ে বনের গাছপালাও প্রাণির ক্ষতির প্রকৃত চিত্র কী, সেই হিসাব দিতে আরও সময় প্রয়োজন।
বনবিভাগ ও সুন্দরবন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালে এবার ‘অস্বাভাবিক’ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয় সুন্দরবন। স্বাভাবিক সময়ে ২৪ ঘণ্টায় দুই বার ভাটা এবং দুই বার জোয়ারে পানিতে প্লাবিত হয় বনের একটি অংশ। কিন্তু এবারই প্রথম ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগে থেকে পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টায় বনে কোনো ভাটা হয়নি। অর্থ্যাৎ এই দীর্ঘ সময় পুরো বন পানিতে তলিয়ে ছিল। আর জোয়ারে পানির উচ্চতা ছিলো স্বাভাবিকের চাইতে ৫/৬ ফুট, কিছু এলাকায় এর চেয়েও বেশি। দীর্ঘ সময় এতো উুঁচ জোয়ারের কারণে মঙ্গলবার থেকে বণ্যপ্রাণির বিপুল ক্ষতির আশংকা করছিলেন বন কর্মকর্তারা।
ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার পর বুধবার সকালে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে আশংকা সত্যি হতে থাকে। কটকা, কচিখালী, দুবলা, হিরণপয়েন্টের সৈকতে হরিণের মৃত দেহ পড়ে থাকার খবর জানান স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ৯৬টি মৃত হরিণ চার বন্যশুকর উদ্ধার করে বন বিভাগ মাটিচাপা দিয়েছে। কিন্তু বিশাল আয়তনের সুন্দরবনে প্রাণিদের কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা’ জানাতে পারছে না বনবিভাগ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে মুখোমুখি সুন্দরবন হয়েছে, আগে কখনও তা হয়নি। এর সঠিক তথ্য বের করতে আরও সময় প্রয়োজন।
খুলনা গেজেট/হিমালয়