ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে বাগেরহাটের শরণখোলায় রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরিঘাট ও পার্শ্ব রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ২৫ দিন ধরে ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বাগেরহাটের শরণখোলা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র ফেরি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা। দ্রুত ঘাট সংস্কার করে ফেরি চালুর দাবি তাদের। সড়ক বিভাগ বলছে সংস্কার কাজের অনুমতি চাওয়া হয়েছে, অনুমতি পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।
২০২১ সালের ১০ নভেম্বর রায়েন্দা-মাছুয়া রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়। প্রতিদিন এই ফেরিতে ২০-২৫ হাজার মানুষ ও সহস্রাধিক যানবাহন চলাচল করে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে ২৭ মে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘ সময় ফেরি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন এসব জনগণ।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে বাগেরহাটের রায়েন্দা-মাছুয়া ফেরির রায়েন্দা অংশের ঘাট ও পার্শ্ব রাস্তাটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফেরির পল্টুন, পল্টুনের সাথের সড়ক, স্টিলের রেলিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পার্শ্ব রাস্তা বিভিন্ন জায়গা থেকে ভেঙ্গে যাওয়ার পাশাপাশি কিছু জায়গা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফেরিঘাটে থাকা ছোট ছোট দোকান। এর ফলে রিমালের পর থেকে বাগেরহাটের শরণখোলা ও পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় যোগাযোগ রক্ষাকারী গুরুত্বপূর্ণ ফেরিটি বন্ধ রয়েছে। ফেরি বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বলেশ্বরের দুই পাড়ের মানুষ। ফেরিঘাট থেকে কিছু দূরে বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ট্রলারঘাট থাকলেও, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে জরুরী যোগাযোগ রক্ষা করতে হচ্ছে তাদের। ভ্যান, পিকআপ, নছিমন ও ট্রাক পাড়াপাড় করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ফেরিঘাট ও পার্শ্ব রাস্তা দ্রুত সংস্কার করে ফেরি চলাচলের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
রায়েন্দা এলাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, রিমালে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তবে সব থেকে বেশি ভোগান্তি হচ্ছে ঘাটটি নষ্ট থাকায়। জরুরী প্রয়োজনেও যেতে পারছি না। ট্রলারে যেতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দিতে হয়। তাও তাদের ইচ্ছেমত ছাড়ে, ভ্যান ও মালামাল নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
বড় মাছুয়া এলাকার জসিম উদ্দিন বলেন, আসলে ফেরিটি যে কতু উপকারী ছিল আমাদের জন্য তা এখন বুঝতে পারছি। ফেরি বন্ধ থাকায় ঈদের সময় অনেকেই আত্মীয় বাড়িতে যায়নি, আবার রায়েন্দা থেকে কেউ আসেনি এলাকায়। দ্রুত ফেরি চালু করা দরকার তা নাহলে আমাদের ভোগান্তি আরও বাড়বে।
ফেরিঘাটের পাশের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হালিম শেখ বলেন, ফেরি চালু হওয়ার পরে ঘাটের পাশে দোকান দিয়ে মোটামুটি সংসারটা চালিয়ে নিচ্ছিলাম। কিন্তু ২৫দিন ধরে ফেরি বন্ধ। এতে অন্য লোকজনের যেমন ভোগান্তি হচ্ছে, আমাদের পেট বন্ধ হয়ে গেছে।
মৌ প্রিয়া নামের এক গৃহিনী বলেন, ফেরিটি আমাদের জন্য আশির্বাদ ছিল। কিন্তু বন্ধ হয়ে ভোগান্তিতে পড়েছি। কবে ঠিক হবে জানি না। যত দ্রুত ঠিক হয়, তত আমাদের জন্য ভাল।
বোরহান উদ্দিন নামের এক গরু-ছাগল ব্যবসায়ী বলেন, এই ফেরি দিয়েই আমরা গরু-ছাগল মঠবাড়িয়া নিয়ে বিক্রি করতাম। কিন্তু ফেরি বন্ধ থাকায় কুরবানির সময় গরু-ছাগল নিতে পারিনি, আবার মঠবাড়িয়ার লোকজন শরণখোলায় আনতে পারেনি। এটা একটা ভোগান্তি। যত দ্রুত সম্ভব এই ভোগান্তি নিরসন করার দাবি জানান এই ব্যবসায়ী।
এদিকে সড়ক বিভাগ বলছে, ফেরিঘাট ও পার্শ্ব রাস্তা সংস্কার করার প্রস্তাব প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত কাজ শুরু হবে।
সড়ক বিভাগ বাগেরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ফেরির ফল্টুন, ঘাট ও পাশ্বরাস্তা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কিছু জায়গা একেবারে ওয়াশআউট হয়ে গেছে। এটি সংস্কারের প্রস্তাব ও অর্থবরাদ্দের প্রশাসনিক অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই আমরা কাজ শুরু করব। আশাকরি খুব দ্রুত কাজ শুরু করতে পারব।
খুলনা গেজেট/এএজে