খুলনা, বাংলাদেশ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

Breaking News

  দূতাবাসের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রবাসীদের সমস্যা দ্রুত সমাধানের তাগিদ পররাষ্ট্র উপদেষ্টার

ঘুষ বাণিজ্য : জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের উদ্যোগ কাজে আসছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ও কাকড়া আহরণ সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও প্রজনন বৃদ্ধির লক্ষে বনবিভাগের পক্ষ থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বনবিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থের বিনিময় জেলেদেরকে অভয়ারণ্য এলাকায় মাছ ও কাকড়া আহরণের সুযোগ করে দিচ্ছে। ফলে বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের বেপরোয়া ঘুষ বাণিজ্যের কারণে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের কোনো উদ্যোগই কাজে আসছে না।

সম্প্রতি বন বিভাগের পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জের স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের বিরুদ্ধে সাড়ে তিন লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে অভয়ারণে মাছ ধরার অভিযোগে আটক ২৯ জেলেকে মুক্তি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। অর্থের বিনিময় জেলেদেরকে এই অবৈধ সুযোগ করে দেওয়ার পাশাপাশি তারা ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন ধরনের বন অপরাধেই জড়িয়ে পড়ছেন।

একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবস্মোর্ট পেট্রোলিং টিমের সদস্যরা গত ১১ মার্চ সাতক্ষীরা রেঞ্জের আওতাধীন সুন্দরবনের কাছিকাটার দোলনা পীর, তেঁতুলবাড়িয়া, বকবাড়িয়া, পাগলের খাল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২৯ জেলেকে আটক করা হয়েছিল। পরে টাকার বিনিময় আটক জেলেদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়।

আটককৃত জেলেদের সাথে মুক্তি দেওয়ার শর্তে টাকার চুক্তি করেন স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের টিম লিডার শিবেন মজুমদার, সহকারী টিম লিডার গাজী ফয়সাল ও আনিস। এছাড়া স্মার্ট পেট্রোল টিমের সদস্যদের বিরুদ্ধে টাকার মাধ্যমে চুক্তি থাকা নৌকাদের ছেড়ে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনবিভাগের হাতে আটক হয়ে টাকা দিয়ে ফিরে আসা কয়েকজন জেলে জানান, বনবিভাগের সদস্যরা সুন্দরবনের ডিঙ্গি মারি এলাকা থেকে ৩টি নৌকা আটক করে। এর মধ্যে ২টি নৌকার চুক্তি থাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। চুক্তি না থাকায় আরেকটি নৌকাটি চালান দেয়া হয়। গত ৮ মার্চ সুন্দরবনের নটাবেকি খেজুর দানা এলাকা থেকে ৩টি নৌকা আটক করে বনবিভাগ। এরমধ্যে হোসেন ও অয়ন কোম্পানির দুইটি নৌকার চুক্তি থাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। আরেকটি নৌকা চুক্তি না থাকায় নটাবেকি অফিসে জমা দেয়া হয়। ৯ মার্চ সুন্দরবনের হলদিবনিয়ার তালপট্টি খাল এলাকা থেকে বিপুল কোম্পানি, হোসেন কোম্পানি, আবু সালে কোম্পানির চারটি নৌকা আটক করে চুক্তি থাকায় ছেড়ে দেয়া হয়। ১২ মার্চ সুন্দরবনের মান্দারবাড়িয়া এলাকায় থেকে ৫টি নৌকা আটক করে চুক্তি থাকায় অয়ন কোম্পানি ও কামরুল কোম্পানির ৪টি নৌকা ছেড়ে দেয়া হয়। আর মজনু কোম্পানির নৌকা চালান দেয়া হয়। ১১ মার্চ সুন্দরবনের দোবেকী মেঘনা এলাকা থেকে আটক শরীফ কোম্পানির ১টি, হোসেন কোম্পানির ৩টি ও অয়ন কোম্পানির পারসে পোনার বোট আটকের পর চুক্তি থাকায় সবগুলো ছেড়ে দেয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুন্দরবনের অভয়ারণ্য এলাকায় কাঁকড়া ধরতে ‘স্মার্ট পেট্রোলিং টিমকে প্রতি গণে নৌকা প্রতি ২ হাজার টাকা ও মাছের জন্য ৪ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। গত ৭ মার্চ বন বিভাগের ‘স্মার্ট পেট্রোলিং টিমের সাথে এমনই একটি চুক্তি করে হোসেন কোম্পানি (৮টি নৌকা), অয়ন কোম্পানি (২২টি নৌকা ও পারসে পোনার ২টা নৌকা), কামরুল কোম্পানি (১৫টি নৌকা) ও রহিম কোম্পানি (৩৬টি কাঁকড়া ও ৩টি মাছের নৌকা)।

জেলে সালাম বলেন, সুন্দরবনের তেতুলবাড়িয়া এলাকা থেকে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম আমার মাছের নৌকা আটক করে। আটকের পরপরই স্পিড বোট ড্রাইভার হাবিব ও ফাইবার ড্রাইভার পারভেজ আমার কাছে চারজন লোকসহ এসে একটি নৌকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য এক লাখ টাকা দাবি করে। সর্বশেষ একটি বিকাশ নাম্বারের ৪০ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পাই।

জেলে আব্দুর রহিম জানান, বনদস্যুদের পাশাপাশি বন বিভাগের ঘুষ বাণিজ্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জেলেরা। গত গণে বনে মাছ ধরতে যেয়ে কাচিকাটা থেকে স্মার্ট পেট্রোলিং টিম আমাদেরকে আটক করে। ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দেয়। একদিকে বনদুস্যরা টাকা নিচ্ছে, অন্যদিকে বন বিভাগের সাথে চুক্তি না করে সুন্দরবনে প্রবেশ করলে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। টাকা দিতে না পারনে জাল নৌকা ডিঙ্গি সব নিয়ে নিচ্ছে তারা।

এ বিষয়ে স্মার্ট পেট্রনিং টিমের টিম লিডার শিবেন মজুমদারকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

সহকারী টিম লিটার গাজী ফয়সাল টাকা নিয়ে জেলেদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি টিম লিডার ছিলাম না। টিম লিডার যা বলে আমাদেরকে শুনতে হয়। তবে এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি।

সাতক্ষীরা বেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. মশিউর রহমান বলেন, অভিযোগটি শুনেছি। যদি স্মার্ট পেট্রলিং টিম দুর্নীতির সাথে যুক্ত থাকে, তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, পরিবেশ কর্মীরা বলছেন, অসাধু মৎস্য ব্যবসায়ীদের ঘুষের বিনিময়ে সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে মাছ ও কাকড়া ধরার সুযোগ করে দিয়ে জীববৈচিত্রা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। এজন্য অসাধু জেলে ও বনবিভাগ উভয়ই দায়ী।

খুলনা গেজেট/এএজে




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!