ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঘুরে দাড়িয়েছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। তেরখাদা উপজেলায় সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করেছে বিএনপি ও জামায়াত। চলছে ঘরোয়া বৈঠক, দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময়সহ নিষ্ক্রীয় কমিটিগুলোকে সক্রিয় করতে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি করছে।
অপরদিকে হামলা, মামলার আতঙ্কে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠনের একমাস অতিবাহিত হলেও আ’লীগ নেতাকর্মীরা হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে।
উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব এফএম হাবিবুর রহমান জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদকালে বিএনপির নেতাকর্মীরা জেল-জুলুম ও পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়েছিলেন। এখন বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদলসহ সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া অন্দোলনে নিহত ছাত্রদের আত্মার মাগফেরাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনা, হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পদ রক্ষাসহ সামাজিক কাজও চলছে বলেও জানান এ নেতা।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন নান্টা বলেন, অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে একত্রিত হচ্ছে বিএনপি। বিএনপি সংঘবদ্ধ থেকে মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি হয়ে কাজ করবে। এ ছাড়া সামনের নির্বাচন ফলপ্রসূ করার লক্ষ্য নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
বিএনপির এই নেতা কর্মীদের উদ্দেশে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যারা এখনো চাঁদাবাজিসহ মানুষ হয়রানির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন, তারা সাবধান হয়ে যান। এসব ছেড়ে দল গোছানোর কাজে মনোযোগী হন।
জামায়াত নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীদের ওপরও শুরু হয় অত্যাচার-নির্যাতন কারণে-অকারণে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। গত ১ আগস্ট জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। একই দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপনও জারি করে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর রাজনৈতিক কার্যক্রমে প্রকাশ্যে মাঠে নামে জামায়াত ও ছাত্রশিবির। দীর্ঘদিন পর উপজেলার রাজপথে প্রকাশ্যে দেখা মেলে দলটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। দল গোছানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে এ দলটিও।
উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা হাফিজুর রহমান বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মুখে দিশাহারা হয়ে শেখ হাসিনার সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এতে রাষ্ট্রীয় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। জামায়াত-শিবির কখনোই শেষ হয়ে যায়নি। জেল-জুলুম-নির্যাতনের পরও নেতাকর্মীরা জামায়াতের আদর্শ ছেড়ে যাননি। আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছি। যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন জামায়াতে ইসলামী আরো শক্তিশালী।
এই নেতা আরো বলেন, ছাত্র আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার বিদায় নিয়েছে। আমরা অর্ন্তর্বতী সরকারকে সহযোগিতা করবো। হিন্দু ধর্মের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরও সব ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি।
এদিকে টানা ১৬ বছরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামীলীগ গণ-অভ্যুত্থানের পর একেবারে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। ক্ষমতার স্বাদ না পাওয়া অনেক নেতা কর্মীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তারা রাজনীতি ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা পোষণও করেছে। এখন আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সুবিধাবাদী নেতারা আত্মগোপনে রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কেএম আলমগীর হোসেনের ভাষ্য, দলীয় নেতাকর্মীর মধ্যে কিছুটা হতাশা ও ভীতিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দল গোছাতে আমরা সময় নিচ্ছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা না থাকায় কোনো কর্মকাণ্ড করছি না।
নির্দেশনা এলেই দলকে সংগঠিত করে নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে। আওয়ামী লীগকে এত সহজে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না বলেও মন্তব্য করেন এ নেতা।
খুলনা গেজেট/কেডি