আধিপত্য বিস্তার, মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগি এবং নিজেদের ভেতর বিশ্বাসের ঘাটতির কারণে খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসী গ্রেনেড বাবুর সাম্রাজ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। বাবুর সদস্যরা এখন একে অপরের শত্রু। যে যখনই সুুযোগ পাচ্ছে অপরকে হত্যা করছে। গত এক মাসে নিজেদের অন্তদ্বন্দ্বে মৃত্যু হয়েছে গ্রেনেড বাবুর খুব নিকটের দুই সদস্য। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে মাদকের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে বাবুর একান্ত সহযোগী সাব্বির খুন হয়। রাতের ঘটনায় রফিক নামে আরেক যুবক নিখোঁজ রয়েছে। এসব ঘটনায় জনমনে আতঙ্ক রয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ২৫ মে রাতে রূপসা উপজেলার মোছাব্বরপুর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হাওলাদারের ছেলে রনিকে মোবাইল ফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রনি বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর কয়েকটি গুলির শব্দ হয়। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা বাইরে গিয়ে রনির নিথর দেহ মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে হাসপাতালে নিলে সেখানকার চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রনি ছিল গ্রেনেড বাবুর একান্ত সহযোগী। মাদক ব্যবসার টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে নিজেদের বাহিনী সদস্যের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে সেদিন তাকে মরতে হয়।
সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা থেকে ৪ জন রাজাপুর যাওয়ার জন্য খুলনা থেকে রওনা হয়। কিন্তু পথিমধ্যে নদীর ঘাট থেকে চার জনের মধ্যে এক যুবক ফিরে আসে। বাকী ৩ জন রাতে কালিবাড়ি ঘাট পার হয়ে রাজাপুর গ্রামের পপুলার মোড়ে সোহাগের বাড়িতে অবস্থান নেয়। যাওয়ার পর সেখানে উপস্থিত হয় আরও কয়েক যুবক। তাদের মধ্যে মাদকের টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে ব্যাপক গুলির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাদ্দাম নামের একজনের মাথায় এবং শেখপাড়ার বাসিন্দা ফজলুর রহমানের ছেলে সাব্বির গুলিবিদ্ধ হয়। ঘটনাস্থলে সাব্বিরের মৃত্যু হলেও সাদ্দমের মাথার পেছনে গুলি লাগলে স্থানীয়রা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখানকার চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করে। বর্তমান তার অবস্থা কেউ বলতে পারেনি।
রূপসা রাজাপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. আশরাফুল আলম বলেন, সাব্বির খুলনার ছেলে হলেও আইচগাতি এবং রাজাপুর এলাকায় তার ব্যাপক প্রভাব ছিল। তার মুখের ওপর কথা বলার মতো সাহস কারও ছিলন না। সাব্বির রনি হত্যা মামলার দু’নম্বর আসামি। এ মামলার ৩ নং আসামি কাউয়া মিরাজ। বৃহস্পতিবার রাতে তার পায়েও গুলি লাগে। খুলনা নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার পর কাউয়া মিরাজ পালিয়ে যায়।

রূপসা থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, খুলনা থেকে রূপসায় সহজ প্রবেশের পথ হল সেনের বাজার ঘাট এবং এই থানা এলাকার সিংহেরচর হল একটি দ্বীপ। পুলিশ যখন সন্ত্রাসীদের তাড়া দেয় তখন তারা এখানে অবস্থান নেয়। আবার রূপসা থানার পুলিশ যখন এসব সন্ত্রাসীদের তাড়া দেয় তখন তারা এখান থেকে সহজে নদী পার হয়ে খুলনায় যেয়ে সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যায়। ফলে তাদের শনাক্ত করতে একটু কষ্ট হয়।
তিনি বলেন, নিজেদের অন্তদ্বন্দ্ব, এলাকার আধিপত্য বিস্তার এবং মাদক বিক্রির টাকা ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে রূপসা থানা এলাকায় সংঘঠিত হচ্ছে এসব হত্যাকান্ড। গ্রেনেড বাবুর সাম্রাজ্যে এখন দেখা যাচ্ছে ভাঙ্গন। আমাদের কিছু করতে হচ্ছেনা, তারা নিজেরা নিজেদের টার্গেট করে খুন করছে।
তিনি আরও বলেন, সাদ্দামের ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে কোন নিউজ আমাদেরকে জানানো হয়নি।
খুলনায় জাহাঙ্গীর হোসেন কচি হত্যার দায়ে পলাতক আসামি রনি চৌধুরী ওরফে বাবু ওরফে গ্রেনেড বাবুকে ২০২৩ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত।
খুলনা গেজেট/এএজে