খুলনা, বাংলাদেশ | ৮ পৌষ, ১৪৩১ | ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  চাঁদপুরে মালবাহী জাহাজ থেকে ৬ মরদেহ উদ্ধার ; মুমূর্ষু ২
  ঢাকা দক্ষিণের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

গ্রাহকদের দুই কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তা

নিজস্ব প্রতিবেদ, বাগেরহাট

বাগেরহাটে গ্রাহকদের প্রায় দুই কোটি টাকা নিয়ে পালিয়েছেন অগ্রনী ব্যাংক লি. মোল্লাহাট বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং উদ্যোক্তা প্রবীর রাহা। উপজেলা সদরের সাহেব আলী শিকদার মার্কেটের দোতলায় এজেন্ট আউটলেটটি প্রায় ২০ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। উদ্যোক্তা প্রবীর রাহাকেও খুজে পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।

এদিকে টাকা ফেরত পেতে অগ্রনী ব্যাংক ও মোল্লাহাট থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন একাধিক গ্রাহক। গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে এক মাসের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে প্রবীর রাহাকে নির্দেশনা দিয়েছেন অগ্রনী ব্যাংক।

অভিযুক্ত প্রবীর রাহা চিতলমারী উপজেলার রুইয়ারকুল গ্রামের যদুনাথ রাহার ছেলে।

গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানাযায়, চলতি বছরের ৩০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে মোল্লহাট উপজেলা সদরের সাহেব আলী শিকদার মার্কেটের দোতলায় অগ্রনী ব্যাংক লি. মোল্লাহাট বাজার এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের উদ্বোধন করা হয়। এরপর থেকে এই আউটলেটের উদ্যোক্তা পীপাসা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধীকারি প্রবীর রাহা কয়েকজন কর্মচারী নিয়ে ব্যাংকিং শুরু করেন। সাধারণ হিসাব খোলার পাশাপাশি ঋণ দেওয়ার কথা বলে জামানত গ্রহন করতেন তিনি। প্রতি লক্ষ টাকা ঋণ দেওয়ার বিপরীতে ১০ হাজার টাকা করে জামানত নিয়েছেন প্রবীর।

মাত্র তিন মাসে দুই শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০ হাজার থেকে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত টাকা নিয়েছেন। এক পর্যায়ে নভেম্বর মাসের শেষের দিকে এজেন্ট আউটলেটটি বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যায় প্রবীর রাহা। এই অবস্থায় প্রবীরকে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকরা।

ইমদাদুল মোল্লা নামের এক ক্ষতিগ্রসস্ত গ্রাহক বলেন, অগ্রনী ব্যাংক এজেন্ট আউটলেটে ব্যাংকে হিসাব খুলে ছিলাম। পরে ব্যাংক থেকে বলেছিল ঋণ দিবে। ৩ লক্ষ টাকা ঋণের জন্য ৩০ হাজার টাকা জামানত দিয়েছিলাম। আমার ভাই রেখেছিল ৯০ হাজার টাকা। ব্যাংকের শাখা তালা দেওয়া, আর প্রবীরসহ অন্যান্য কর্মীরা সবাই পলাতক। শুধু আমি নয়, ২০৮ জন গ্রাহকের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার বেশি নিয়েছেন প্রবীর রাহা।

নাজনীন সুলতানা নামের এক নারী বলেন, আমি এবং আমার ভাই ৬ লক্ষ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ৬০ হাজার টাকা জামানত দিয়েছিলাম। আমরা টাকা ফেরত চাই।

জুম্মান খান নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, এটা যে এজেন্ট ব্যাংক আমরা তা বুঝিনি। সাইনবোর্ড দেখে বুঝেছিলাম এটা অগ্রনী ব্যাংক। যখন পালিয়ে গেছে তখন জানলাম এটা অগ্রনী ব্যাংকের এজন্ট ব্যাংকিং আউটলেট। উদ্বোধনও হয়েছিল ঘটা করে। অগ্রনী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিনের কাছে একটাই দাবি প্রবীর রাহাকে গ্রেফতার করে আমাদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করুণ।

এমনকি চাকুরী দেওয়ার কথা বলেও, একাধিক তরুণ-তরুনীর কাছ থেকে দেড় লক্ষ করে টাকা নিয়েছেন প্রবীর রাহা।

সুমাইয়া জাহান নামের এক চাকুরী প্রত্যাশী বলেন, সংসারে খুবই অভাব। আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে ধার-দেনা অফিস সহকারী পদে চাকুরীর জন্য করে প্রবীর রাহাকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। সে বলেছিল ১৫ দিনের মধ্যে চাকুরী হবে, ৯-১০ হাজার টাকা বেতন। টাকার নিরাপত্তা হিসেবে প্রবীর আমাকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার একটি চেকও দিয়েছিল। প্রবীর পালিয়ে যাওয়ার পরে চেক নিয়ে ব্যাংকে গেছিলাম, প্রবীরের দেওয়া চেকের হিসেবে কোন টাকা নেই।

শুধু আমি না, চাকুরী দেওয়ার কথা বলে আরও কয়েক জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে প্রবীর। আমরা যেকোন মূল্যে টাকা ফেরত চাই।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রবীরকে বারবার ফোন করা হলে, তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। ব্যাংক বন্ধের পর থেকে প্রবীর রুইয়ারকুল এলাকায় নিজ বাড়িতেও আসেন নি, বলে খোজ নিয়ে জানা গেছে।

মোল্লাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আশরাফুল আলম বলেন, গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে আমরা ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি তদন্ত করছে। আমরা প্রতারণার বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।

এজেন্ট ব্যাংকটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা অগ্রণী ব্যাংক লি. গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ইস্রাফিল হোসেন বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট পরিচালিত হয় দুয়ার ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। দুয়ার ব্যাংকিংয়ের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রাথমিক তদন্তে প্রবীরের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে। যার কারণে তার এজেন্ট আউটলেটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রবীরকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ৩০ তারিখের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!