নারায়ণগঞ্জ শহরের পশ্চিম তল্লা এলাকায় একটি মসজিদে বিস্ফোরণে প্রায় অর্ধশত মুসল্লি দগ্ধ হয়েছেন। এর মধ্যে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা নিচ্ছেন দগ্ধ ৩৭ জন। দগ্ধ হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগেরই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে, সবার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলছেন, চিকিৎসকরা।
এদিকে, মসজিদের সামনে ও মেঝের নিচে গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে এই বিস্ফোরণ হতে পারে বলে ধারণা করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মসজিদের মেঝে থেকে গ্যাস বের হচ্ছিল। তিতাস কর্মীরা এর কারণ জানা চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, মসজিদের ছয়টি এসি কীভাবে একসঙ্গে বিস্ফোরিত হলো, তার কারণ উদ্ঘাটনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ জিল্লুকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কীভাবে একই সময় একই সঙ্গে ছয়টি এসি বিস্ফোরিত হলো, এটা তদন্তের পর বলা যাবে।
তিনি আরো বলেন, ওই মসজিদে কোনো গ্যাসের লাইন ছিল কিনা সেটাও দেখা হচ্ছে। কারণ, মসজিদের ভেতরে জমে থাকা পানি থেকে বুদবুদ শব্দ হচ্ছে। ঘটনাস্থলে আমাদের ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সব কিছুই দেখছে। পরে বিস্তারিত জানাতে পারবো। তবে ছয়টি এসি বিস্ফোরিত অবস্থায় আমরা পেয়েছি।
স্থানীয় কয়েকজন লোক জানায়, শুক্রবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ৯টার দিকে বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এই ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে মসজিদটির ছয়টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত মুসল্লি দগ্ধ হয়। দগ্ধ ব্যক্তিদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স নারায়ণগঞ্জ অফিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আরেফিন বলেন, ওই মসজিদের সামনের গ্যাসের লাইনে লিকেজ ছিল। ধারণা করা হচ্ছে এসি চালানের সময় জানালা বন্ধ থাকায় ওই গ্যাস ভেতরে জমা হয়ে যায়। হঠাৎ করে কেউ বৈদ্যুতিক সুইচ অফ-অন করতে গেলে স্পার্ক থেকে এই বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনি আরও বলেন, মসজিদের মেঝের নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গেছে। পানি দেওয়ার সময় বুদ বুদ করে গ্যাস বের হচ্ছিল। বিস্ফোরণে অনেক মানুষ দগ্ধ হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রমতে, পশ্চিম তল্লা বায়তুস সালাত জামে মসজিদে এশার নামাজের পর বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে । এ সময় ওই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দগ্ধ মুসল্লিরা মসজিদ থেকে বাইরে ছুটে এসে সড়কে জমে থাকা পানিতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলেন। বিস্ফোরণে মসজিদের ছয়টি এসি পুড়ে গেছে। ভেঙে গেছে দরজা-জানালার কাচ।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়দুল আলম বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ ৩৭ জনকে ইতিমধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। অনেকেই স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ঘটা এ বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে এ পর্যন্ত ৩৭ জন জাতীয় শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন।
খুলনা গেজেট / এআর / এমএম