স্থলভাগে (অনশোর) নতুন দুটি গ্যাস ব্লক বা গ্যাসক্ষেত্র পাচ্ছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন বাংলাদেশ। এগুলো হলো ব্লক-৮ ও ব্লক-১১। গত সপ্তাহে শেভরনকে দুটি গ্যাস ব্লকের কাজ দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি বিভাগ। এর আগে মার্কিন এ কোম্পানিটি স্থলভাগের তিনটি ব্লকে কাজ করার আগ্রহপত্র দিলেও একটি ব্লকের ইজারার বিষয়টি নাকচ করে সরকার। জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট-পিএসসি) প্রকৌশলী মো. শাহীনূর ইসলাম বলেন, শেভরন তিনটি ব্লকে কাজ করতে আগ্রহ দেখায়। এর মধ্যে দুটি ব্লক দিতে মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, নীতিগত অনুমোদন দেওয়ার পর এখন শেভরন এই দুটি ব্লকে কাজের বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দেবে। চূড়ান্ত পরিকল্পনা পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত চুক্তি হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী মাসের মধ্যে এই দুটি ব্লক নিয়ে কী কী করবে, শেভরনকে এর বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দিতে বলা হয়েছে। বিস্তারিত পরিকল্পনা জমা দেওয়ার পরই যাচাই-বাছাই শেষে উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) করা হবে। এক কর্মকর্তা জানান, এখন তারা এ দুটি ব্লক নিয়ে চুক্তির টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন নিয়ে কাজ করছেন।
দেশের টাঙ্গাইল ও জামালপুর এলাকা নিয়ে গঠিত ৮নং গ্যাস ব্লক। আগে এই ব্লকের কিছু অংশ দ্বিমাত্রিক জরিপ করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স। শেভরন এই ব্লকে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক জরিপ করবে। জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী কাজের উদ্যোগ নেওয়া হবে। অন্যদিকে, সুনামগঞ্জ, শেরপুর ও ময়মনসিংহ এলাকা নিয়ে ব্লক-১১। এই ব্লকটি সম্ভাবনাময়। ব্লকটির একটি অংশে এরই মধ্যে ত্রিমাত্রিক জরিপ করেছে বাপেক্স। ব্লকটির আনুমানিক ৩ হাজার ৭০০ মিটার গভীরে ২ দশমিক ৪৭ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মজুত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জানা যায়, গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে অনশোর ব্লক-৮ ও ১১ এবং রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র ইজারা নেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ জানিয়ে জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলাকে চিঠি দেয় শেভরন বাংলাদেশ। এর মধ্যে রশিদপুর গ্যাসফিল্ডসহ ৫টি গ্যাসক্ষেত্র ১৯৭৫ সালের ৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেল অয়েলের কাছ থেকে ক্রয় করে জাতীয়করণ করা হয়। এ গ্যাসক্ষেত্রটি বর্তমানে সিলেট গ্যাসফিল্ডের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র উন্নয়ন ও উত্তোলন বৃদ্ধি করতে এরই মধ্যে দুটি নতুন কূপ (১১ ও ১২নং) ও তিনটি কূপের ওয়াকওভারের (সংস্কার) কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে সিলেট গ্যাসফিল্ড কর্তৃপক্ষ।
পেট্রোবাংলার সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, রশিদপুর বহুজাতিক কোম্পানি থেকে কিনে বঙ্গবন্ধু জাতীয়করণ করেছিলেন। এখন ফের বহুজাতিক কোম্পানির হাতে এই গ্যাসক্ষেত্রটি তুলে দেওয়ার কোনো কারণ নেই। সেখানে রাষ্ট্রীয় কোম্পানি কাজ করছে। বর্তমানে কম হলেও এখান থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এটা আমাদের সক্ষমতার বিষয়। এ কারণে শেভরন চাইলেও বিষয়টি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে।
আরও জানা যায়, ২০২০ সালের নভেম্বরে অনশোর ব্লক-৮ ও ১১-তে যৌথভাবে গ্যাস অনুসন্ধানে জাপানের মিতসুই অয়েল এক্সপ্লোরেশন কোম্পানির (মইকো) সঙ্গে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি (বাপেক্স) একটি সমঝোতা করে। পরে ১১নং ব্লকে অনুসন্ধান কাজ চূড়ান্ত করতে গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত মইকোকে সময় দেওয়া হয়। অন্যথায় ব্লকটি ছেড়ে দিতে বলা হয়। ওই সময়ের মধ্যে মইকো কোনো কাজ করতে পারেনি এবং তারা ব্লকটি ছেড়ে দেয়।
বর্তমানে বহুজাতিক কোম্পানি শেভরনের হাতে বাংলাদেশের তিনটি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে। এগুলো হলো ব্লক-১২-তে থাকা বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র, ব্লক-১৩-তে থাকা জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র এবং ব্লক-১৪-তে থাকা মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র। এর মধ্যে বিবিয়ানা দেশের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র।
পেট্রোবাংলার গত মঙ্গলবারের গ্যাস উত্তোলনের হিসাব অনুযায়ী এদিন বিবিয়ানার ২৬টি কূপ দিয়ে ১ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে ১ হাজার ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট, জালালাবাদের ৭টি কূপ দিয়ে ২৭০ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে ১৭৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং মৌলভীবাজারের ৫টি কূপ দিয়ে ৪২ মিলিয়ন ঘনফুট উৎপাদন ক্ষমতার বিপরীতে ১৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করেছে। এই হিসাবে এদিন শেভরন মোট ১ হাজার ২৮২ দশমিক ৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করে।
এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবরে শেভরনের বিবিয়ানা ফিল্ডের নতুন এলাকায় কূপ খনন করতে ত্রিপক্ষীয় সম্পূরক চুক্তি স্বাক্ষর করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, পেট্রোবাংলা ও শেভরন বাংলাদেশ। এই চুক্তির আওতায় শেভরনের বিবিয়ানা ফিল্ডের নতুন এলাকায় ২৭নং কূপ খননের কাজ শুরু করা হয়েছে। এই কূপে সফলতা পেলে নতুন আরও একটি কূপ খনন করা হবে বলে জানা গেছে।
খুলনা গেজেট/এইচ