খুলনার দাকোপ উপজেলার শ্রীপুর অ্যাগ্রো লিমিটেড মৎস্য খামারের কর্মচারি গোবিন্দ সানা হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামিই ভারতে পালিয়েছে বলে জানা গেছে। এই মামলার তিনজন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে খুলনার জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো এ আদেশ দেন। আদালত সূত্রে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৃত গোবিন্দ উপজেলার পানখালী ইউনিয়নের বারুইখালী গ্রামের মৃত ধনঞ্জয় সানার ছেলে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর রায়ের ছেলে সোগত রায়, জালিয়াখালী গ্রামের বিকাশ মণ্ডলের ছেলে বিবেক মণ্ডল ও তিলডাঙা গ্রামের বিশ্ববতী রায় ওরফে উজ্জলের ছেলে অরুণাভ রায়। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি)। ২০১৬ সালের ১৯ জুন সিআইডির পরিদর্শক কাজী মোস্তাক আহমেদ আদালতে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ৫ জুলাই আদালতে ওই মামলার শুনানির মধ্যদিয়ে অভিযোগ গঠন ও বিচার শুরু হয়। আদালত ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, মামলার আসামিরা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আত্মগোপনে রয়েছে। এদিকে হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা হওয়ায় নিহত গোবিন্দ সানার পরিবার সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন বলে জানা গেছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর মাসে শ্রীপুর অ্যাগ্রো লিমিটেডের কর্মচারি গোবিন্দকে রাত সাড়ে আটটার দিকে হত্যা করে দৃর্বৃত্তরা। তাকে হত্যা করে শরীরে ইট বেঁধে ঢাকি নদীতে ভাসিয়ে দেন হত্যাকারিরা। ঘটনার দু‘দিন পর তার মরদেহ ঢাকি নদীর স্রোতে ভাসতে দেখে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করে স্থানীয়রা। এ ঘটনায় গোবিন্দর ভাই কৃষ্ণপদ সানা দাকোপ থানায় বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তৎকালিন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ছিলেন থানা পুলিশের উপপরিদর্শক পলাশ কুমার দাশ।
এ ব্যাপারে এসআই পলাশ কুমার দাশ মুঠোফোনে খুলনা গেজেটকে বলেন, ২০১৫ সালের ১৯ নভেম্বর মামলার বাদী কৃষ্ণপদ সানা ভাই নিখোঁজ হয়েছে মর্মে একটি সাধারণ ডায়েরি দায়ের করেন। কিন্তু গোবিন্দকে খুঁজে না পাওয়ায় পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে হত্যার ইঙ্গিত পায়। এরপর প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে গোবিন্দর মোবাইল ট্রাকিং করে নিশ্চিত হওয়া যায়। সেই অনুযায়ী তদন্ত করে হত্যার ঘটনাস্থল ও আসামিদের শনাক্ত করা হয়। পরে পুলিশ সোগত নামের আসামিকে গ্রেফতার করলে সে হত্যার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে জানায়, কাকার মেয়েকে অসম্মান করায় গোবিন্দকে তিনিসহ তার সহযোগিরা গলায় দড়ি জড়িয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।
শ্রীপুর অ্যাগ্রো লিমিটেড-এর একজন কর্মকর্তা শেখ সাব্বির আহম্মেদ। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে খুলনা গেজেটকে জানান, গোবিন্দ একজন সৎ কর্মচারি ছিলেন। ঘটনার দিন রাতে মোবাইলে স্বজন পরিচয় দিয়ে তাকে ঢাকি নদীর পাশে ডেকে নিয়ে যায়। সেদিন থেকে সে আর মৎস্য খামারে ফিরে আসেনি। তারপর একদিন তার মরদেহ পান পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করে জেল-হাজতে পাঠায়। পরে আসামিরা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে ভারতে পালিয়ে যায়। সেই থেকে তারা আর দেশে ফিরে আসেনি।
খুলনা গেজেট / এআর