খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

গোপালগঞ্জে ভাসমান পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে সফলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক, গোপালগঞ্জ

বর্ষাকালে ভাসমান বেডে (কচুরিপনা দিয়ে তৈরী ধাপ) তরমুজ ফলিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন গোপালগঞ্জের কৃষক হানিফ মল্লিক। তরমুজের মৌসুম না থাকলেও গাছে গাছে ঝুলছে তরমুজ। দেখতে ছোট হলেও এক একটির ওজন হবে ২-৩ কেজি।স্থানিয় বাজারে তরমুজের দাম ভাল থাকায় এলাকার কৃষকদের মধ্যে এই তরমুজ চাষে বেশ আগ্রহ দেখা দিয়েছে।

তরমুজ মুলত চাষ হয় গ্রীষ্মকালে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে তরমুজ চাষ করে সফল হয়েছেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর ইউনিয়নের নকড়িরচর গ্রামের হানিফ মল্লিক। ছোটবেলা থেকে কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে তিনি বর্ণি বাওড়ে কচুরিপানা দিয়ে ভাসমান ধাপ তৈরী করে শাক সবজির চাষ করতেন।

এবছর গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ৪টি বেডে সবজির পরিবর্তে থাইল্যান্ডের ব্লাক সুইট-২ জাতের তরমুজ গাছ রোপন করেন।দুইটি বেডের মাঝে বাঁশ আর নেট দিয়ে ঘর আকৃতির উঁচু মাচা তৈরী করে তার উপর তরমুজ গাছের ডগা উঠিয়ে দেন।

তিনি প্রতিটি ধাপে ৮টি করে ছোপ লাগিয়েছেন(প্রতি ছোপে ৪ থেকে ৫টি চারা লাগানো থাকে)। সেই মাচার গাছে মাত্র ৫০দিনে তিন শতাধিক তরমুজ ধরেছে।প্রতিটি তরমুজের ওজন হয়েছে আড়াই থেকে ৩ কেজি।

তরমুজ চাষি হানিফ মল্লিক বলেন, ছোটবেলা থেকে কৃষি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আগে থেকেই আমি ভাসমান বেডে লালশাক,ডেরশ,লাউ,উচ্ছে,পুইশাকসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করে থাকি।তবে আমি কিভাবে অন্য ফসল লাকিয়ে অল্প সময়ে ভাল ফলন পেতে পারি সে বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করতে থাকি। এবছর গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শে ৪টি বেডে সবজির পরিবর্তে থাইল্যান্ডের ব্লাক সুইট-২ জাতের তরমুজ গাছ রোপন করি।এতে অল্প সয়ে ভাল ফলন হয়েছে এবং আয়েরও ভাল ব্যবস্থা হয়েছে।এ চাষে চারটি ধাপ তৈরী,চারা লাগানো,মাচা তৈরি করা,বাশ ও নেট কিনে ব্যয় হয়েছে ৭ হাজার টাকা। ৫০দিন পর কিছু ফল পেকেছে। তার থেকে আমি ৪/৫টি তরমুজ স্থানিয় বাজারে ৫০-৬০টাকা কেজি বিক্রি করেছি।অসময়ে উৎপাদিত তরমুজের চাহিদাও বেশ।বাজার মুল্য ঠিক থাকলে তরমুজ বিক্রি করে ভাল আয় হবে বলে মনে করছেন তিনি।

বর্ষাকালে এত ভাল তরমুজ হয় তা আমার গ্রামে অনেকে দেখে অবাক হয়েছে।এ দেখে আগামীতে অন্যরাও এই তরমুজ চাষ করার উদ্যোগ নিয়েছে। ধরেছে।অসময়ে উৎপাদিত তরমুজের চাহিদাও বেশ তাই বিক্রি করে ভাল আয় হবে বলে মনে করছেন তিনি।

নকড়িরচর গ্রামের জানে আলম বলেন, আমরা জানি যে চৈত্র মাসে তরমুজ হয়। এখন দেখছি বর্ষাকালে ধাপের উপর তরমুজ হয়। এটা আমাদের গ্রামে প্রথম দেখলাম।ফলন ভাল হয়েছছে। দেখে খুব ভাল লাগছে।

টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বাশবাড়িয়া গ্রামের কৃষক আলমগির ফকির বলেন, আমি শুনেছি এই গ্রামে ধাপের উপর তরমুজ চাষ হয়েছে। তাই আমি দেখতে এসেছি। দেখে আমার খুব ভাল লেগেছে। আমি এই তরমুজ চাষি হানিফ ভাইয়ের সংগে কথাও বলেছি। আমি আগামি মৌসুমে আমার এলাকায় এই পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করবো।

একই গ্রামের সোহাগ শেখ বলেন আমার গ্রামের হানিফ ভাই ভাসমান পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন।আমি তার কাছথেকে একটি তরমুজ নিয়েছিলাম। খেতে খুব মিষ্টি।আমি আগামি বছর ধাপ তৈরী করে তরমুজ চাষ করবো।

ব্লক সুপার ভাইজার প্রদীপ হালদার বলেন,রঘুনাথপুর ইউনিয়নের নকড়িরচর গ্রামের কৃষকরা আগে ধাপের উপর সুধু সবজি চাষ করতো।ধাপের উপর সবজি ও মসলা চাষ প্রকল্পের আওতায় কৃষক সবজির পাশাপাশি তরমুজ চাষ করেছেন।তাতে ভালোই ফলন হয়েছে।সবজি চাষের থেকে তরমুজ চাষে কৃষক বেশি লাভবান হবে।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, ধাপের উপর এতোদিন এ অঞ্চলের কৃষক সবজি চাষ করে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। এবার অসময়ে ভাসমান বেডের উপর তরমুজ চাষ করে কৃষকেরা আরো বেশী লাভবান হবেন ।পাশাপাশি অন্য কৃষকরাও আগামীতে ভাসমান পদ্ধতিতে তরমুজ চাষে উৎসাহিত হবেন বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।

খুলনা গেজেট/ টি আই

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!