খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  খুলনায় মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের সংঘর্ষে নিহত ২
  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা

গোপালগঞ্জে গাড়ি বহরে হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা নিহত, আহত ৫০

গেজেট ডেস্ক

গোপালগঞ্জে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর গাড়ি বহরে আওয়ামী লীগের হামলা ঘটনা ঘটেছে। এতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলি দিদার নিহত হয়েছেন। এছাড়া সাংবাদিকসহ অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় কমপক্ষে ১০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের খবর শোনা গেলেও তা নিশ্চিত করা যায়নি।

গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ আনিচুর রহমান হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৫টায় সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না, রাজু বিশ্বাস, মাহাবুব খান মুরাদ, লিন্টু মন্সী, গোপালগঞ্জের সালমান সিকদার, সুজন সিকদার, সবুজ সিকদার, ঢাকার মতিঝিল এলাকার নাসির আহমেদ মোল্লা, বাদশা মোল্লা, নিশান, হাসান, মাতুয়াইলের আলাউদ্দিনসহ ১৬ জনকে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও তিনজনকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়। অন্যরা স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীসহ কয়েকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে লিটন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের একটি সূত্র নিশ্চিত করলেও সত্যতা পাওয়া যায়নি।

হামলায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না ও তাদের সন্তানসহ বিএনপির কমপক্ষে ২০ জন নেতাকর্মীকে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে হামলাকারীরা। এ ছাড়া সময় টিভির ক্যামেরা পার্সোন এইচ এম মানিককে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।

বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ঢাকা থেকে রওনা হয়ে বিকেল ৩টায় শহরের বেদগ্রামে পথসভা শেষে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের গাড়িবহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও এস এম জিলানী। গাড়িবহরটি ঘোনাপাড়া এলাকায় পৌছালে পূর্বে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের একদল স্বশস্ত্র মানুষ গাড়ির গতি রোধ করে ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর করা হয় জিলানীর গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি।
এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা লাঠি-সোটা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে পিছু হটে যায় তারা।

কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা সংঘটিত হয়ে আবারো হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে অন্তত ২০ জনকে। আহতদের মধ্যে ১০ জনকে তাৎক্ষণিক গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় গুরুতর আহত অবস্থায় এস এম জিলানীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

ঘটনার সময় সেখানে পুলিশ দেখা না গেলেও ঘটনাস্থল থেকে বেশ খানিক দূরে পুলিশের অবস্থান দেখা যায়। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পযন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। চরম ভোগান্তিতে পড়েন ওই সড়কে চলাচলকারীরা। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

মির্জা ফখরুলের নিন্দা 

জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানীর গাড়িবহরে হামলা ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুনের ঘটনায় বিবৃতি দিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে দলটির সহ দপ্তর সম্পাদক মুহম্মদ মুনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে ওই খুনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হলেও দেশে এখনো নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারায় লিপ্ত রয়েছে পরাজিত শক্তির দোসররা। তারা গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

অবৈধ আওয়ামী শাসনামলে এই সন্ত্রাসীরা অনেক কালো টাকা উপার্জন করেছে, সেই কালো টাকা তারা এখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে কাজে লাগাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীরা ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক বিজয়কে মেনে নিতে পারছে না বলেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। আর জন্যই বিএনপি এবং অন্যান্য সমমনা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ জনগণের ওপর বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে খুন ও তাদেরকে গুরুতর জখম করা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আজ গোপালগঞ্জে দুষ্কৃতিকারীদের দ্বারা এস এম জিলানীর গাড়িবহরে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুন ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীসহ অনেক নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করার ঘটনা একটি গভীর দেশি-বিদেশি চক্রান্তের বহি:প্রকাশ।

এসব সন্ত্রাসীদের কঠোর হস্তে দমন করার কোনো বিকল্প নেই। হামলা ও রক্তাক্ত পথ অনুসরণ করে ষড়যন্ত্রকারীরা যাতে ফায়দা হাসিল করতে না পারে সেজন্য ছাত্র-জনতাসহ সকল গণতন্ত্রমনা মানুষকে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে এখনও ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ চালিয়ে যেতে হবে। আর তাহলেই দেশ থেকে ষড়যন্ত্রকারী ও দুষ্কৃতিকারীদের মূলোৎপাটনসহ দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, প্রকৃত গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হবে।
বিএনপি মহাসচিব বিবৃতিতে এস এম জিলানীর গাড়িবহরে পৈশাচিক হামলা চালিয়ে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মো. শওকত আলী দিদারকে খুন এবং এস এম জিলানী ও তার সহধর্মিনী সহ নেতৃবৃন্দের ওপর হামলাকারী দুষ্কৃতিকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর আহ্বান জানান।

তিনি নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনাসহ তার পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জ্ঞাপন এবং আহতদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।

খুলনা বিএনপির নিন্দা 

গোপালগঞ্জে কেন্দ্রীয় বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের গাড়ি বহরে হামলা, ভাঙচুর ও শওকত হোসেন দিদার (৩৮) নামের কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা নিহতের ঘটনায় ক্ষোভ নিন্দা ও অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার দাবি জানিয়েছেন খুলনা বিএনপি নেতৃবৃন্দ।

শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিএনপি মিডিয়া সেল প্রদত্ত বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া মোড়ে এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না ও তাদের সন্তানসহ বিএনপির কমপক্ষে ৩০জন নেতাকর্মীকে বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করেছে হামলাকারীরা। এসময় হামলাকারীরা শওকত হোসেন দিদার নামের কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে হত্যা করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা।

শুক্রবার বিকেল ৩টায় শহরের বেদগ্রামে পথসভা শেষে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের গাড়িবহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়া জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম ও এস এম জিলানী। গাড়িবহরটি ঘোনাপাড়া এলাকায় পৌছালে পূর্বে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের একদল স্বশস্ত্র মানুষ গাড়ির গতিরোধ করে ভাঙচুর চালায়। ভাঙচুর করা হয় জিলানীর গাড়িসহ বেশ কয়েকটি গাড়ি। কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা সংঘটিত হয়ে আবারো হামলা চালিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করে অন্তত ৩০ জনকে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, স্বৈরাচার খুনি হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার প্রেত্মাতারা এখন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে। অবিলম্বে আওয়ামী খুনি সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।

বিবৃতিদাতারা হলেন, বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য সম্পাদক আজিজুর বারী হেলাল, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. শফিকুল আলম মনা, সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন প্রমূখ।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!