গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলে বাঙ্গির(ফুটি) ভাল ফলন হয়েছে। কম পুঁজিতে ভাল ফলন ও লাভ হওয়ায় প্রতি বছরই এ এলাকার মানুষ বাঙ্গি চাষ করে থাকেন। এলাকার প্রধান অর্থকারি ফসলের মধ্যে বাঙ্গি অন্যতম। রমজানে বাঙ্গির চাহিদা থাকায় ভালো দাম পাচ্ছে কৃষক। ভাল দাম পেয়ে এলাকার কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি, বুরুয়া, নলুয়া, চকপুকুরিয়া, রুথিয়ারপাড় প্রভৃতি গ্রামে এ বছর জমিতে প্রচুর পরিমান বাঙ্গির চাষ হয়েছে। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই চৈত্রের মৌসুমী ফল বাঙ্গি ক্ষেতের সমারোহ।
বাঙ্গি একটি গ্রীষ্মকালীন ফল। তীব্র গরমে রমজান মাসে সারাদিন রোজা থাকার পর শরীরের ক্লান্তি মুছতে বেশীর ভাগ রোজাদারের ইফতারের সাথে বাঙ্গির চাহিদা থাকে। রমজানের শুরুতে উৎপাদিত ফসল বাজারে আনতে পেরে ভাল দাম পাচ্ছেন কৃষক।
নলুয়া গ্রামের কৃষক বিনোদ মজুমদার বলেন, চলতি মৌসুমে তিনি চার বিঘা জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছেন। এতে তার প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা করে। ফলন ভাল হয়েছে। প্রতি বিঘার বাঙ্গি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
গান্দিয়াশুর গ্রামের মনোজ বিশ্বাস বলেন, এ মৌসুমে তিনি আট বিঘা জমিতে বাঙ্গির চা করেছেন। এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। দামও ভাল পাচ্ছেন। তিনি ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা করে একশ বাঙ্গি বিক্রি করছেন। এতে তাদের ভাল লাভ হবে বলে তিনি জানান।
গান্দিয়াশুর গ্রামের পাইকাড়ি ব্যাবসায়ী রমানাথ গাঙ্গুলি বলেন, তিনি গ্রামে ঘুরে ঘুরে কৃষকের কাছ থেকে বাঙ্গি কিনে থাকেন। প্রতিপিচ বাঙ্গি ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে কৃষকের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছেন। তিনি জমির মালিকদের কাছ থেকে বাঙ্গি কিনে তা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর বাঙ্গির দাম একটু বেশী। এ এলাকার বাঙ্গি ট্রাকে করে বিভিন্ন জেলার হাটবাজারে চলে যাচ্ছে।
কালিগঞ্জ বাজারের আড়ৎদার অসিম হালদার বলেন, কোটালীপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাঙ্গির ব্যাপক চাষ হয়। এ বাঙ্গি বিপণন কারিগঞ্জ বাজারে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী বাজার। কৃষকের সুবিধার জন্য আমরা এখানে দুই মাসের জন্য আড়ৎ তৈরী করে থাকি। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত বাঙ্গি এই আড়তে নিয়ে আসে। এখানে কৃষক তাদের ফসল সঠিক দামে বিক্রি করতে পারে। এ বাজারে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকার আসে। তারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে তারাও লাভবান হয়। প্রতি বছর এ বাজারে লাখ লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রি হয়ে থাকে।
কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিজন বিশ্বাস বলেন, এ ইউনিয়নের প্রধান অর্থকারি ফসল হচ্ছে বাঙ্গি। এখানকার কৃষকরা সারা বছর এই মৌসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ব্যাপক এলাকায় বাঙ্গি চাষ করেন। এবছর বাঙ্গির ভাল ফলন হয়েছে। রোজা শুরু হওয়ায় এসময় বাঙ্গির চাহিদা বেশী থাকায় এবং প্রচুর ফলন হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন বলে স্থানীয় ইউ,পি চেয়ারম্যান জানান।
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, এ বছর গোপালগঞ্জে আড়াইশ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির চাষ হয়েছে। আর এ জমি থেকে এবছর ১০হাজার মেট্রিক টন বাঙ্গি উৎপাদনের আশা করছেন কৃষি বিভাগ। কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন এবং ভাল দাম পেয়ে কৃষক খুশি বলে জানান কৃষি কর্মকর্তা।
খুলনা গেজেট/ এস আই