গোপালগঞ্জে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সমঝোতা হওয়ার পরও মহাসড়ক থেকে অবরোধ তুলে না নেয়ায় তাদের উপর বহিরাগতরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে অন্তত ৮/১০ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের গাড়ি, একটি লোকাল বাস ও একটি ট্রাক ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
আজ বিকেল পৌনে ৫ টার দিকে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে মহাসড়ক যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
বিকেল ৪ টায় ২৪ ঘন্টার মধ্যে আসামীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাসে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রশাসনের সমঝোতা বৈঠক শেষ হয়। বৈঠক শেষে জেলা প্রশাসন শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা, ভিসি একিউএম মাহাবুব, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে সমঝোতা বৈঠকে বসেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ হামলায় ছাত্রলীগকে দায়ী করলেও এ ঘটনার সাথে তাদের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই দাবি করে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ নিউটন মোল্লা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের সাথে জেলা ছাত্রলীগ একাত্মতা প্রকাশ করে ৫ ঘন্টা আন্দোলন করেছে। প্রশাসনের সাথে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে সমঝোতা করিয়ে দিয়েছে। তারপর আন্দোলনকারীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। তবে, আমি শুনেছি তারপর কিছু সংখ্যক জামাত, ডান বাম আন্দোলন থেকে সরে না আসায় তাদেরকে স্থায়ীয়রা সরিয়ে দিয়েছে।
এর আগে, বিশ্বাবিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের ঘটনায় আসামীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ঘোনাপাড়া এলাকায় টানা ১১ ঘন্টা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। এতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক, ঢাকা-পিরোজপুর সড়ক, গোপালগঞ্জ-পাটগাতী সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘোনাপাড়া এলাকায় প্রায় ৮ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এসব সড়ক দিয়ে চলাচলকারী বিপুল সংখ্যক নারী, পুরুষ ও শিশুরা সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন।
গতকাল বুধবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ২৫ মিনিটের দিকে গোপালগঞ্জ শহরের নবীনবাগ এলাকার হেলিপ্যাড থেকে হেঁটে বের হচ্ছিলেন দুই শিক্ষার্থী। এ সময় ৭/৮ যুবক একটি ব্যাটারী চালিত ইজিবাইকে তাদের তুলে নিয়ে হ্যালিপাডের পাশে নির্মাণাধীন গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন স্কুল ও কলেজের বারান্দায় নিয়ে ওই ছাত্রীর সাথে থাকা তার বন্ধুকে মারধর ও শিক্ষার্থীকে গণধর্ষণ করে। পরে খবর পেয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্ধার করে ওই ছাত্রীকে প্রথমে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। পরে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান গোপালগঞ্জ সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটা মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনায় রাতেই ধর্ষকদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস থেকে পায়ে হেটে বিক্ষুদ্ধ প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী গোপালগঞ্জ সদর থানায় অবস্থান করে এবং ধর্ষকদের বিচার চেয়ে ৩ দফা দাবি ও আল্টিমেটাম প্রদান করে।
রাতেই পুলিশ নবীনবাগ এলাকার ছানু সিকদারের ছেলে পিয়াস সিকদার, কলোনীর কৃষ্ণ জমাদ্দারের ছেলে অন্তর জমাদ্দার ও খোকন জমাদ্দারের ছেলে জীবন জমাদ্দারকে আটক করে পুলিশ।
অপরদিকে, আটককৃতদের মধ্যে ২ জন হরিজন সম্প্রদায়ের হওয়ায় তাদের মুক্তির দাবিতে ওই সম্প্রদায়ের নারী পুরুষের গোপালগঞ্জ-পাটগাতী সড়কের গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সামনের রাস্তায় ময়লা ফেলে বেরিকেড দিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে। বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে জেলা প্রশাসকের ন্যায় বিচারের আশ্বাসে হরিজন সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ অবরোধ তুলে নেয়।
গোপালগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শীতল চন্দ্র পাল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, এ খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলেছি এবং আমি নিজে এঘটনায় বাদী হয়ে গোপালগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেছি।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ এন্ড অপারেশন) নিহাদ আদনান তাহিয়ান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে অভিযান চালানো হয়েছে। আমাদের টিম ইতিমধ্যে অভিযান শুরু করেছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি একিউএম মাহাবুব বলেন, এটি একটি নক্কারজনক ঘটনা। এ ঘটনার সাথে জড়িতদের উপযুক্ত বিচার করতে হবে। যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, অপরাধী যেই হোক না কেন কাউকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। আমিও চাই এ ঘটনার সাথে জড়িতদের সর্বোচ্চ সাজা হোক।
জেলা প্রশাসক শাহিনা সুলাতান বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছিলাম। আমি পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করেছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে এঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করবেন।
খুলনা গেজেট/এএ