সারা দেশ যখন বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত ও আত্মহারা-সে সময়েও গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়ায় পাক হানাদাররা যুদ্ধ করে যাচ্ছিল। ১৯ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া শত্রু মুক্ত দিবস। এই দিন পাকবাহিনীর দখলে থাকা কাশিয়ানী উপজেলার ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস ষ্টেশনের মিনি ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটে। এই পতনের মধ্য দিয়ে হানাদার মুক্ত হয় পুরো গোপালগঞ্জ অঞ্চল।
বিজয়ের তিন দিন পর প্রচন্ড যুদ্ধের পর এই দিনে কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় পাক সৈন্যরা আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। পাক বাহিনীর ভাটিয়াপাড়া মিনি ক্যান্টনমেন্টটি গোপালগঞ্জের অন্তর্ভুক্ত হলেও গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-নড়াইল অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য বস্তু ছিল ভাটিয়াপাড়ার ওই মিনি ক্যান্টনমেন্টটি।
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ৭১ সালের মে মাসে এখানে সামরিক ঘাটি স্থাপন করে। ৬৫ জনের শক্তিশালী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর একটি গ্রুপ এখানে অবস্থান করে এলাকায় নিরীহ মুক্তিকামী মানুষের উপর নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। অনেক মুক্তিকামী মানুষকে পাক বাহিনী হত্যা করে ভাটিয়াপাড়ার পাশ দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীর পানিতে ফেলে দিত।
পাক বাহিনীর একটি দল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সংলগ্ন ‘জয় বাংলা’ পুকুর পাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্ট থেকে ৭ ডিসেম্বর সকালে আধুনিক অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে পালিয়ে ভাটিয়াপাড়ার ওই ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। ১৯ ডিসেম্বর খুব ভোরে নড়াইল জেলার দিক থেকে ৮নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর মঞ্জুর, নড়াইল জোনের মুক্তিবাহিনীর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হুদা, লেঃ কর্ণেল জোয়ান, কামাল সিদ্দিকী, গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের দিক থেকে ক্যাপ্টেন ইসমত কাদির গামা ও বাবুলের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডারগণ সম্মিলিতভাবে ভাটিয়াপাড়ার মিনি ক্যান্টনমেন্টে আক্রমণ চালায়।
কাশিয়ানী উপজেলা ইউনিট কমান্ড-এর কমান্ডার এনায়েত হোসেন জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাত্মক এ হামলা ও বীরোচিত সাহসী যুদ্ধে অবশেষে দুপুরের দিকে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যৌথ কমান্ডারের কাছে ৬৫ জন পাক সেনা ও শতাধিক রাজাকার আত্মসর্মপণ করে। দেশ স্বাধীনের তিন দিন পর হানাদার মুক্ত হয় কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়াসহ সমগ্র গোপালগঞ্জ অঞ্চল।
খুলনা গেজেট/এনএম