আফ্রিকার দেশ সুদানে তৃতীয় বছরের মতো চলা গৃহযুদ্ধের কারণে কয়েক হাজার মানুষ মারা যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থা। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সংস্থাটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গৃহযুদ্ধ আরও এক বছর চলতে থাকলে এবং জাতিসংঘ দুর্ভিক্ষের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাতে অক্ষম হলে সুদানে হাজার হাজার মানুষ মারা যাবে। খবর আরব নিউজের।
দুই বছর আগে শুরু হওয়া এই সংঘাতটি বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকটের কারণ হয়েছে বলে জাতিসংঘের একটি ব্রিফিংয়ে বলেছেন বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জরুরি সমন্বয়কারী শন হিউজেস।
তিনি বলেন, দুর্ভিক্ষ দারফুর এবং কর্ডোফান অঞ্চলের ১০টি অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। ডব্লিউএফপি আগামী ছয় মাসে তার কার্যক্রমের জন্য ৬৫০ মিলিয়ন ডলার তহবিলের ব্যবধান পূরণ করতে না পারলে আরও ১৭টি অঞ্চল ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন সংস্থাটির তহবিল ঘাটতিতে রয়েছে প্রায় ৮০ শতাংশ ।
তিনি আরও বলেন, এই যুদ্ধ সুদান এবং সমগ্র অঞ্চলের জনগণের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনছে।
দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় ২০১৩ সালের ১৫ এপ্রিল। সুদানের সেনাবাহিনী এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স নামক একটি শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়ার নেতার মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ের মাধ্যমে সংঘাতের সূত্রপাত। এখন পর্যন্ত যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে অগণিত মানুষ। এ ছাড়া বাড়িঘর ছেড়েছে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ।
সংঘর্ষের শুরুতে রাজধানী থেকে বিতাড়িত হওয়া সেনাবাহিনী গত মাসে খার্তুমের পুরো নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে। কিন্তু পশ্চিম ও দক্ষিণ সুদানের দারফুর অঞ্চলসহ বিস্তীর্ণ এলাকা আরএসএফের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
দারফুরের এল-ফাশার শহরের চারপাশে লড়াই চলছে, যার ঠিক দক্ষিণে জমজম বাস্তুচ্যুতি শিবির অবস্থিত যেখানে চার লাখ জনগোষ্ঠী বাস করে। গত বছরের আগস্টে ক্যাম্পে প্রথম দুর্ভিক্ষের খবর পাওয়া যায় এবং সেখানে অনাহার ও অপুষ্টিতে মারা যায় বহু মানুষ।
হিউজেস বলেন, এটি স্পষ্টতই একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি। এল-ফাশার, জমজম এবং অন্যান্য শিবিরগুলো বেশ কয়েক মাস ধরে দুর্ভিক্ষ এবং সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
তিনি জানান, খাদ্য সহায়তার শেষ ডেলিভারি গত বছরের অক্টোবরে হয়েছিল কিন্তু ডব্লিউএফপি ক্যাম্পের বাসিন্দাদের খাবার কিনতে সহায়তা করার জন্য নগদ সহায়তা ডিজিটালভাবে স্থানান্তর করতে পেরেছিল।
কিন্তু সুদানের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে সাহায্যের প্রচেষ্টা পুনঃস্থাপিত না হলে হিউজ আশঙ্কা করছেন দুর্ভিক্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। দেশটির ৫ কোটি মানুষের প্রায় অর্ধেক চরম ক্ষুধার সম্ভাবনার সম্মুখীন। ডব্লিউএফপি প্রতি মাসে ৩০ লাখ থেকে ৭০ লাখ মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছানোর আশা করছেন।
রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে মার্কিন সরকারের বিদেশি সহায়তা বাজেট হ্রাস করার কারণে সুদানে অনেক সহায়তা কার্যক্রম প্রভাবিত হয়েছে।
এদিকে, রেড ক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটি বৃহস্পতিবার সুদানে “বিপর্যয়কর মানবিক পরিস্থিতি” শিরোনামে বিশদ বিবরণ দিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
খুলনা গেজেট/এএজে