খুলনা, বাংলাদেশ | ১ মাঘ, ১৪৩১ | ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫

Breaking News

  ২০১৮ সালের নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইনের আওতায় আনার সুপারিশ : ইসি সংস্কার প্রধান
  ফেনীতে ট্রেনে কাটা পড়ে অজ্ঞাত নারী নিহত

গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন

 নিজস্ব প্রতিবেদক

গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করতে নতুন আইন প্রণয়নের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন আইনপ্রণেতা ও উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। তারা বলেছেন, বিদ্যমান আইনি কাঠামোর অধীনে গৃহকর্মীদের অধিকার সুরক্ষা সম্ভব নয়। তাই বিপুল সংখ্যক শিশু গৃহকর্মীকে শারীরিক, মানসিক, অর্থনৈতিক ও যৌন নিপীড়ন-নির্যাতন থেকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গৃহকর্মী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন।

বুধবার (১৪ জুন) জাতীয় সংসদ ভবনের পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাবে আয়োজিত ‘গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর সুরক্ষা ও অধিকার এবং আইনী বাস্তবতা’ শীর্ষক সংলাপ এ সব কথা বলেন তারা। উন্নয়ন সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), শাপলা নীড় ও এডুকো-বাংলাদেশ আয়োজিত সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকু। এএসডি’র নির্বাহী পরিচালক এম এ করিমের সভাপতিত্বে সংলাপে আলোচনায় অংশ নেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ রওশন আরা মান্নান, সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি, শিশু অধিকার বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সহ-সভাপতি আরমা দত্ত, সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, শাপলা নীড়ের কান্ট্রি ডিরেক্টর তমকো উচিয়ামা, ইউনিসেফের মো. আবুল খায়ের, শিশু অধিকার ফোরামের মো. মাহবুবুল হক, এডুকোর আফজাল খান, ডিসিএন’র শরফুদ্দিন খান, ইনসিডিনের মো. রফিকুল আলম, স্ক্যানের জাহাঙ্গীর হোসেন, এএসডি’র ম. হামিদুর রহমান প্রমূখ।

প্রধান অতিথির বক্তৃতায় ডেপুটি স্পিকার বলেন, প্রতিটি শিশুকে উন্নত বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সবক্ষেত্রে তাঁদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাজ করে যাচ্ছেন। শিশু সুরক্ষায় আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে শুধু আইন দিয়ে তাঁদের সুরক্ষা দেওয়া কঠিন। গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুর মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নে তাঁদেরকে গৃহকর্তার সন্তানের মত বিবেচনা করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে গৃহকর্মী নিয়োগে বিধিমালা তৈরি করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রতিটি শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষার সাথে মাধ্যমিক শিক্ষাও বাধ্যতামূলক করতে হবে। এর মাধ্যমে শিশু শ্রমিক নিয়োগ অনেকাংশে কমে যাবে।

গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশুরা অত্যাচারিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান বিদ্যমান আইনে আছে উল্লেখ করে শামসুল হক টুকু বলেন, এরপরও কোন জায়গায় সংশোধনের প্রয়োজন হলে আইন মন্ত্রণালয় ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে পূর্ণ খসড়া তৈরি করে সরকারের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। সরকার শিশুদের কল্যাণ নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য সবকিছুই করতে প্রস্তুত। সরকার শিশুদের জন্য পুষ্টিকর খাবার সহ, উপবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ করছে। অসচ্ছল অভিভাবকদের সামাজিক সুরক্ষা প্রোগ্রামের আওতায় নানারকম ভাতা প্রদান করছে। অভাবের তাড়নায় কোন পরিবার শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োজিত করবে সে সুযোগ সরকার রাখেনি বলে উল্লেখ করেন তিনি।

বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান বলেন, শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ও বিরোধী দলের সদস্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য নিয়োগকর্তা, শিশু, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সরকার, এনজিও, নিয়োগকর্তা, অভিভাবক সবাইকে সমন্বিত ভাবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি সব মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদফতরকে একযোগে কাজ করতে হবে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের সুরক্ষায় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুবান্ধব আইন-নীতিমালা সংশোধন ও পরিমার্জন করেছেন। এ বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী দেশকে দ্রুত শিশুশ্রম মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে সংসদ সদস্য আরমা দত্ত বলেন, বলেন, শিশুশ্রম আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই। শিশুশ্রম বন্ধ করা সরকারের একার পক্ষে সম্ভব নয়। শিল্পকারাখানা বা বাসাবাড়িতে যারা স্বল্প মজুরিতে লেবার হিসেবে শিশুদের কাজ দিচ্ছে, তাদেরকে সচেতন করা প্রয়োজন। এজন্য সিভিল সোসাসিটি, ভলেন্টিয়ার ও সরকার মিলে মনিটরিং করতে হবে।
সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, সরকারের কঠোর পদক্ষেপ সত্ত্বেও গৃহকর্মীদের ওপর প্রতিনিয়ত নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। আর শিশু গৃহকর্মীদের উপর নির্যাতনের ঘটনা বেশি। তাই শিশুদের প্রতি সহিংসতা রোধ ও অধিকার নিশ্চিত করতে নীতিমালা বাস্তবায়নের পাশাপাশি মনিটারিং জোরদার করতে হবে।

সংলাপে মূল প্রবন্ধে জানানো হয়, এডুকো, শাপলা নীড় এবং এএসডি’র উদ্যোগে ইতিমধ্যেই গৃহকর্মী সুরক্ষা আইনের একটি খসড়া তৈরী করা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনের বিধান সমূহের মধ্যে ১৪ বৎসর বয়সের নীচে কোন শিশুকে গৃহকর্মে যাতে নিয়োগ দিতে না পারে সে বিষযে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনার মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে খসড়া আইনটি চূড়ান্ত করা যেতে পারে। আর আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর বিধি প্রণয়ন করতে হবে। এ বিষয়ে শিশু অধিকার বিষয়ক পার্লামেন্টারি ককাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!