খুলনা, বাংলাদেশ | ২ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৭ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

গুজবে সয়লাব পুরো দেশ, হাজারো আইডি থেকে পরিকল্পিত অপতথ্য ফেসবুকে

গেজেট ডেস্ক

গুজবে ভাসছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। আন্দোলনের পক্ষে-বিপক্ষে অগণিত অপতথ্য, গুজব ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকে। গতকাল রোববারের ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী দিনটির আগের রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংঘবদ্ধভাবে হাজারো গুজব ছড়ানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা এবং গণযোগাযোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী বলেছেন, শনিবার রাতে যত গুজব ছড়ানো হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার সব ল্যাব ব্যবহার করেও তা যাচাই করা অসম্ভব। ‘এক দফা’ ঘোষণার পর সরকারপন্থি ৬৭টি পেজ থেকে ছড়ানো গুজব অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। সবচেয়ে বেশি ৭৩ শতাংশ গুজব ছড়ানো হচ্ছে সংবাদমাধ্যমের ভুয়া ফটোকার্ড ব্যবহার করে। ফটোকার্ড-সংশ্লিষ্ট খবরের লিঙ্ক না পেলে বুঝতে হবে, তা মিথ্যা।

আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকেও অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। মন্ত্রী, এমপিরাও সেসব শেয়ার করেছেন। শনিবার রাতে মোশাররফ করিম, শাকিব খানসহ বিভিন্ন তারকার বক্তব্য উদ্ধৃত করে ফটোকার্ড দেওয়া হয়, ‘কোটা সংস্কারের পক্ষে ছিলাম। এখন যা চাইছেন এর পক্ষে নই’। এ ধরনের ফটোকার্ডে এমনকি বলিউড তারকা শাহরুখ খান, কাজল ও ফুটবলার লিওনেল মেসির নামও ব্যবহার করা হয়। পরে এগুলো ভুয়া প্রমাণিত হয়।

শনিবার রাতে সরকার সমর্থকদের প্রোফাইল থেকে নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামতে বলা হয়। সবার পোস্ট ছিল হুবহু এক। সরকারবিরোধীরা পাল্টা গুজব ছড়ায়– আওয়ামী লীগের রোববারের কর্মসূচি স্থগিত হয়েছে। তবে তা সংখ্যায় ছিল নগণ্য।

বিএনপি এবং দলটির মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড পেজে ভুল তথ্য না থাকলেও দলটির সমর্থকদের হাজারো অ্যাকাউন্ট থেকে আন্দোলনে নিহতের অতিরঞ্জিত তথ্য ছড়ানো হয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নামে অসংখ্য গ্রুপ, পেজ এবং অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।

সংগঠনটির সমন্বয়কদের নামেও অগণিত

অ্যাকাউন্ট ও পেজ খোলা হয়েছে। সেগুলোতে মিনিটে মিনিটে পোস্ট করা হচ্ছে। যেমন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ নামে অসংখ্য গ্রুপের একটি থেকে শনিবার বিকেল ৪টা ৩৩ মিনিটে দাবি করা হয়, কুমিল্লায় গুলিতে পাঁচ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। যদিও প্রকৃত খবর হলো, চারজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।

ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল নিয়েছে– পুরোনো ভিডিও দিয়ে শনিবার রাত ১২টার দিকে এ গুজব ছড়ানো হয়। ডলার খরচ করে এই ভিডিওটি বুস্ট করা হয়েছিল বিভিন্ন পেজ থেকে। যদিও সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ছিল শান্ত।

মধ্যরাতে সাফি মোদ্দাসের খান নামের একটি ভেরিফায়েড পেজে দাবি করা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলমের বাসা থেকে দুই কোটি ১০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে র‌্যাব-১০। সরকার সমর্থকরা ব্যাপকভাবে এটি শেয়ার করে। তবে যাচাইয়ে এ দাবির সত্যতা মেলেনি।

ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড পেজে শুক্রবার দুপুর ২টা ১৬ মিনিটে ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়, আন্দোলনকারীদের পক্ষে রিট করে আলোচনায় আসা আইনজীবী মানজুর আল মতিনের নানি জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি আসমা খাতুন। মতিউর রহমার নিজামীর জামাতা সাইফুল্লাহ মনসুর তাঁর মামা।

ফ্যাক্ট চেক প্রতিষ্ঠান ডিসমিসল্যাবের প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরী  বলেছেন, যাচাইয়ে মানজুর আল মতিনের নানি আসমা খাতুন নয়। ছাত্রলীগের পেজ থেকে এ গুজবটি ৪৪০ বার শেয়ার হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতারাও ফটোকার্ডটি দিয়েছিলেন।

এদিকে অপতথ্য ছড়ানোর কারণে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের ভেরিফায়েড পেজ বন্ধ করেছে ফেসবুক। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে।

শুক্রবার রাতে আওয়ামী লীগের পেজ থেকে হেলমেট পরা এক ব্যক্তির ছবি দিয়ে দাবি করা হয়, অস্ত্রধারী সিলেট ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুক আহমেদের। নেত্রকোনা-১ আসনের এমপি মোশতাক আহমেদ রুহির ভেরিফায়েড পেজ ছবি পোস্ট করা হয়। তবে  অনুসন্ধানে পাওয়া যায়, অস্ত্রধারীর ছবিটি গত বছরের ১৬ আগস্টের। সেই দিন কক্সবাজারের চকরিয়ায় তৎকালীন এমপি জাফর আলমের নেতৃত্বে যে মিছিল হয়েছিল, তাতে ছিলেন হেলমেট পরিহিত অস্ত্রধারী।

আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের প্রধান প্রকৌশলী তন্ময় আহমেদ দাবি করেছিলেন, গুজব ছড়ানোর প্রশ্নই আসে না। পরে তাঁকে দুটি গুজব  ধরিয়ে দিলে বলেন, ভুলবশত গুলিবর্ষণের পুরোনো ছবি দেওয়া হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপির বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরউদ্দিন শিশির  বলেছেন, তিনটি পক্ষ গুজব ছড়াচ্ছে। আন্দোলনের পক্ষে যারা, তারা মিছিলের ছবি দিয়ে, এখনকার বলে দাবি করছে। রাস্তায় আহতাবস্থায় পড়ে থাকা কারও ছবিকে চলমান আন্দোলনের দাবি করেছে। যেমন গতকাল শনিবার পুরোনো ছবি দিয়ে একটি প্রোফাইল থেকে দাবি করা হয়, কুমিল্লায় ১২ জন নিহত হয়েছেন। এসব গুজব সংঘবদ্ধ পরিকল্পিত উপায়ে ছড়ানো হয়েছে প্রমাণ নেই।

শিশির বলেছেন, গুজব ছড়ানো বাকি দুটি পক্ষের একটি সরকার সমর্থক। তারাও সমর্থন থেকে অপতথ্য ছড়ান। তৃতীয় পক্ষটি শক্তিশালী; পরিকল্পিত উপায়ে গুজব ছড়ায়। যেমনটা হয়েছে শনিবার রাতে। তাদের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশনা দিয়ে গুজব ছড়ানো হয়।
গত শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো হয়, উত্তরায় শিক্ষার্থীদের ওপর গুলিবর্ষণকারীর যে ছবি সংবাদমাধ্যমে এসেছে, তার নাম নিজাম। তিনি শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা। তবে এর সত্যতা কোনো সংবাদমাধ্যমে আসেনি।

গতকাল ‘সানজানা ইরা ফারহানা’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে দাবি করা হয়, তিনি কক্সবাজারের আন্দোলনে গিয়ে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন। ফ্যাক্ট চেকাররা জানিয়েছেন, ভিডিওটি পুরোনো এবং এর জিও লোকেশন ঢাকার উত্তরায়। প্রোফাইলটিও ভুয়া। কয়েক বছরের পুরোনো প্রোফাইল গতকালই সচল করা হয়েছে। এতে ৬০ জন বন্ধু রয়েছে, সেগুলো ভুয়া।

শুক্রবার রাতে ফেসবুকে ছড়ায় ভারতের হায়দরাবাদ থেকে একটি বিশেষ ফ্লাইট ঢাকায় আসছে। ‘রেশমি মো. রফিক’ নামের প্রোফাইল থেকে এ অপতথ্য ছড়ানো হয়। এই প্রোফাইল থেকে গত কয়েক দিনে আন্দোলনের পক্ষে এবং সরকারের বিপক্ষে অনেকগুলো পোস্ট করা হয়েছে। এর অধিকাংশ ভুয়া।

‘ক্লাসিক শপ বিডি’ নামের পেজে গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে দাবি করা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় থাকা সেনাসদস্যরা গণভবন ছেড়েছে। যাচাইয়ে জানা গেছে, দাবিটি মিথ্যা। এ পেজ থেকে একাধিক গুজব ছড়ানো হয় গত কয়েক দিনে।

বিএনপি এবং দলটির মিডিয়া সেলের ভেরিফায়েড পেজ থেকে কর্মসূচির খবর, ছবি, ভিডিও দেওয়া হয়। বিএনপি মিডিয়া সেল নামে ভেরিফায়েডবিহীন একটি গ্রুপে ৭১ হাজার অনুসারী রয়েছে। ‘বিএনপি নিউজ’ নামের আরেকটি ভেরিফায়েডহীন পেজ অনুসরণ করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ব্যবহারকারী। ভেরিফায়েডবিহীন ‘বিএনপি মিডিয়া সেল’ গ্রুপ থেকে আন্দোলনের বিরোধিতাকারীদের কন্যাদের যৌন হয়রানির হুমকি দেওয়া হয়েছে।

সদ্য নিষিদ্ধ হওয়া জামায়াত ও শিবিরের ভেরিফায়েড পেজে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি, বিবৃতি ছাড়া গত কয়েক দিনে কিছুই পোস্ট করা হয়নি। দলটির সমর্থকদের প্রোফাইল, পেজ, গ্রুপ থেকে আন্দোলনে নিহতের অতিরঞ্জিত সংখ্যা প্রচার করা হয়েছে। ‘বাঁশের কেল্লা লালমনিরহাট’ থেকে গুজব ছড়ানো হয় ১ হাজার ২০০ জন গুলিতে নিহত হয়েছেন।

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!