সরকারি সিদ্ধান্তে যৌথ বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় উৎপাদনে ফিরেছে পোশাক কারখানা। গতকাল বৃহস্পতিবার গাজীপুরের কারখানাগুলো কর্মমুখর ছিল। চলে দিনভর স্বাভাবিক উৎপাদন কার্যক্রম। তবে আশুলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ হয়। এর মধ্যে একটি কারখানায় বহিরাগতরা হামলা চালালে শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হন। কিছু কারখানা বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ।
সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়ার পরও হামলার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। পরে সন্ধ্যায় আশুলিয়া অঞ্চলের কারখানা মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ।
নারীর তুলনায় পুরুষ শ্রমিক বেশি নিয়োগ দেওয়াসহ বিভিন্ন দাবিতে সম্প্রতি পোশাক কারখানা অধ্যুষিত এলাকায় বিক্ষোভ হয়। তবে গত সোমবার থেকে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যায়। হামলা-ভাঙচুরের মুখে ওই দিন অন্তত ৫০ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গল ও বুধবার মিলে অন্তত ২৬৭ কারখানায় ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীরা তাদের কারখানার শ্রমিক নন। রাজনৈতিক ইন্ধনে বহিরাগতরা এ হামলা-ভাঙচুর করেছে।
এমন প্রেক্ষাপটে বুধবার বিজিএমইএর উদ্যোগে সংগঠনের বেশ কয়েকজন সাবেক সভাপতি, সেনাবাহিনী, পুলিশ, শিল্প পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। সেখানে যৌথ বাহিনী বিশৃঙ্খলা রোধে কঠোর অবস্থান ও নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে সব কারখানা বৃহস্পতিবার থেকে চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেন ব্যবসায়ী নেতারা। এর পর গতকাল চালুর পর গাজীপুর ছাড়া অন্যান্য এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ হয়।
বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, পোশাক শিল্পকে বাংলাদেশ থেকে অন্যত্র স্থানান্তরের অসৎ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রও রয়েছে। ফলে নিরাপত্তায় সরকারের পদক্ষেপ কাজে আসছে না। তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানে নতুন রপ্তানি আদেশ বাড়ছে বলে খবর পাচ্ছি। ধারণা করা হচ্ছে, এদের বড় অংশই বাংলাদেশের পুরোনো ক্রেতা প্রতিষ্ঠান। কঠোর পদক্ষেপ না নিলে তারা আর ফিরবে না।
গতকাল দুপুরে আশুলিয়ায় নরসিংহপুর এলাকার একটি কারখানায় হামলা চালায় বহিরাগতরা। ওই কারখানার শ্রমিকরা তাদের প্রতিরোধ করলে সংঘর্ষে পথচারীসহ অন্তত ৩০ জন আহত হন। আশুলিয়ার বিভিন্ন হাসপাতালে তারা চিকিৎসা নেন।
শ্রমিকরা জানান, ছুটি থাকায় কয়েকটি কারখানার সামনে অবস্থান নেন শ্রমিকরা। বহিরাগতরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের পলাশবাড়ী এলাকায় পিজিসিএল পোশাক কারখানার ভেতরে বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে তারা বাইরে এসে সড়ক অবরোধ করলে প্রায় ৮ কিলোমিটার যানজট দেখা দেয়।
আশুলিয়া শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, চালুর পর ৮টার মধ্যেই বেশির ভাগ কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়। নিশ্চিন্তপুরে কয়েকটি কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়। নরসিংহপুরে একটি পোশাক কারখানায় ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে মিটমাট হয়। শ্রমিক বিক্ষোভের ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়। সেনাসদস্য ও অতিরিক্তি পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
গাজীপুরের শিল্পকারখানা স্বাভাবিক চেহারায় ফিরেছে। সকাল ৮টার আগেই কারখানায় প্রবেশ করেন শ্রমিকরা। কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই উৎপাদন কার্যক্রম চলে দিনভর। জেলার কোথাও কোনো শ্রমিক আন্দোলনের ঘটনা ঘটেনি।
সরেজমিন দেখা যায়, কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও শিল্প পুলিশের সমন্বয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। কর্তৃপক্ষ নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীদের সতর্ক অবস্থায় রেখেছে।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত সুপার ইমরান আহাম্মেদ জানান, শ্রমিকরা কাজে ফিরেছেন। উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতে চলেছে। গাজীপুর জেলা ও মহানগরে ২ হাজার ২১৫ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কোথাও আন্দোলন কিংবা কর্মবিরতির খবর পাওয়া যায়নি।
(প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন গাজীপুর ও সাভারের নিজস্ব প্রতিবেদক)