খুলনা, বাংলাদেশ | ১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ১৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  প্রীতি ম্যাচ : মালদ্বীপকে ২-১ গোলে হারাল বাংলাদেশ, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সামতায়
  ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ৮ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯৯৪
  আগামীর বাংলাদেশ হবে ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতার : ড. ইউনূস
  জুলাই-আগস্টে নিহতদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশে সময় লাগবে : উপদেষ্টা আসিফ

গাজা ঘিরে ইসরায়েলের শত শত ট্যাংক, লাখো সেনা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা সীমান্ত ঘিরে প্রস্তুত ইসরায়েলের শত শত ট্যাংক। মোতায়েন করা হয়েছে ভারী সামরিক সরঞ্জাম। এর মধ্য দিয়ে পুরোদস্তুর স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। চলছে সমুদ্রপথে হামলার প্রস্তুতিও। এরই মধ্যে অব্যাহত আছে আকাশপথে যুদ্ধবিমান থেকে বোমাবর্ষণ। সঙ্গে রক্তাক্ত–বিধ্বস্ত ছোট উপত্যকাটিতে একের পর এক প্রবেশ করছে ইসরায়েলের নজরদারি ড্রোন।

৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে সংঘাত শুরুর পর থেকেই গাজায় স্থল হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এর ধারাবাহিকতায় কয়েক দিন ধরেই গাজা সীমান্তজুড়ে সামরিক সরঞ্জাম ও লাখো সেনা মোতায়েন শুরু করে তারা। তবে রোববার গাজা সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

ইসরায়েলের আগ্রাসী তৎপরতা বেড়েছে শনিবার দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক বিবৃতির পর। তাতে বলা হয়, শিগগিরই গাজায় জল, স্থল ও আকাশপথে হামলা চালাতে প্রস্তুত তারা। সেদিনই এক ভিডিওতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে দেশটির সেনাদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। তিনিও স্থল অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দেন। অবশ্য স্থল অভিযানের সুনির্দিষ্ট কোনো সময় জানানো হয়নি।

দিনক্ষণ না জানানো হলেও স্থল অভিযান শিগগিরই শুরু হবে বলে ধারণা অনেক বিশ্লেষকের। গাজায় হামাস যোদ্ধাদের নির্মূল করার হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল। এমনকি নিজেদের নিরাপত্তায় লক্ষ্য পূরণের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো স্থানে ইসরায়েল কার্যক্রম চালাবে বলে রোববার জানিয়েছেন দেশটির সেনাবাহিনীর শীর্ষ মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগেরি।

স্থল অভিযান নিয়ে তোড়জোড়ের মধ্যে রোববারও টানা নবম দিনের মতো গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। অব্যাহত হামলায় উপত্যকাটিতে নিহত মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৪৫০। এর মধ্যে অন্তত ৭২৪ শিশু। আহত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৯ হাজার ২০০। এ ছাড়া পশ্চিম তীরে হামলায় নিহত হয়েছেন ৫৬ ফিলিস্তিনি। অপর দিকে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।

এদিকে গতকাল লেবানন থেকে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে ইরানপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। এতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। জবাবে লেবাননে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। ইসরায়েলি বাহিনী এদিন সিরিয়ার বিমানবন্দরগুলোতেও হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দেশটির সরকার।

জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হামলায় এক সপ্তাহে গাজার প্রায় ১০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

‘আমরা মানুষ, পশু নই’

অবরোধ ও হামলার মধ্যে গাজাবাসী আরও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েন উপত্যকাটির উত্তর থেকে দক্ষিণে তাঁদের সরে যেতে বলার পর। শুক্রবার ইসরায়েলের এই নির্দেশের পর উত্তর গাজা ছেড়ে পালিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। পালানোর সময় এসব মানুষের ওপরও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।

এদিকে নিরাপত্তার কথা বলে গাজার বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যেতে বলার পর সেখানেও হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বিভীষিকাময় অবস্থার মধ্যেই অনেকে আবার উত্তরে নিজেদের বাড়িতে ফিরে আসছেন। এমনই একজন আবু দাউদ। তিনি বলেন, ‘আমি পরিবারকে উত্তর গাজায় ফিরিয়ে নিচ্ছি। আমি বাড়ির বাইরে বা স্কুলে থাকতে পারব না। যখন সব জায়গায় হামলা হচ্ছে, তখন আমার বাড়িই ভালো।’

অনেক গাজাবাসীই আবার ১৯৪৮ সালের ‘নাকবা’র (বিপর্যয়) কথা মাথায় রেখে সাম্প্রতিকতম ইসরায়েলি হামলার শুরু থেকেই উত্তর গাজায় রয়ে গেছেন। ওই বছর এক যুদ্ধের মধ্য দিয়ে বহু ফিলিস্তিনিকে নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। গোড়াপত্তন হয়েছিল ইসরায়েল রাষ্ট্রের। এখন উত্তর গাজায় রোগীদের সঙ্গে রয়ে গেছেন অনেক চিকিৎসাকর্মী।

দক্ষিণে পালানো গাজাবাসীও ভালো নেই। বোমা হামলা ও খাদ্য–পানির অভাবে ভীষণ রকমের মানবেতর জীবন কাটছে তাঁদের। দক্ষিণ গাজার মাঘাজি শিবিরে পরিবারসহ আশ্রয় নেওয়া মুহাম্মদ নামের একজন বলেন, ‘হামাস যোদ্ধাদের খুঁজতে গিয়ে নিরপরাধ মানুষের ওপর বোমা মারা বন্ধ করতে হবে ইসরায়েলকে। আমরা মানুষ, চিড়িয়াখানার পশু নই।’

অপেক্ষায় ত্রাণবাহী গাড়ি

অবরুদ্ধ গাজায় নেই বিদ্যুৎ, গ্যাস; চলছে খাদ্য, পানি ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকট। রোববার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জ্যাক সুলিভান জানিয়েছেন, দক্ষিণ গাজায় পানি সরবরাহ চালু করেছে ইসরায়েল। তবে গাজার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত পানি পাননি এ অঞ্চলের অনেক মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে গাজায় ত্রাণ সরবরাহের সুযোগ করে দিতে আহ্বান জানিয়েছে সৌদি আরব, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা।

এরই মধ্যে রোববার মিসর–গাজা সীমান্তের রাফাহ ক্রসিংয়ে ত্রাণবাহী গাড়িগুলোকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। মিসর ও তুরস্ক থেকে পাঠানো হয়েছে এসব ত্রাণ। তবে ইসরায়েলের বোমা হামলার কারণে বন্ধ রয়েছে রাফাহ ক্রসিং। এদিকে গাজায় দুই হাজার মানুষের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

সূত্র : রয়টার্স ও আল জাজিরা

 

খুলনা গেজেট/এইচ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!