গাজা উপত্যকায় ভূমির দখলদারিত্বকে কেন্দ্র ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস ও ইসরায়েল সেনাবাহিনীর মধ্যকার সংঘাতের আট দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর সেখানে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
সোমবার গাজায় বিমান হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে টেলিফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি সেখানে শান্তি স্থাপনে মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের সোমবারের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে ফোন করেছেন প্রেসিডেন্ট। সাম্প্রতিক এই সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে সেখানকার সাধারণ মানুষরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়ে যত্নশীল হতে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।’
‘হামাস ও গাজায় সক্রিয় অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর সাম্প্রতিক অভিযানের ব্যাপারে উভয় নেতার মধ্যে আলোচনা হয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি আশ্বাস দিয়েছেন, ওই এলাকায় শান্তি রক্ষায় মিশর ও অন্যান্য অংশীদার রাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে কাজ করবে।’
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষকদের একাংশ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্য ও আন্তর্জাতিক জনমতের চাপের সামনে অনেকটা নতি স্বীকার করেই নেতানিয়াহুকে সোমবার ফোন করেছেন বাইডেন।
এদিকে, রোববার (১৬ মে) গাজায় সাম্প্রতিক সহিংসতার জেরে জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা নিন্দা প্রস্তাব আটকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, এই নিয়ে তিন বার জাতিসংঘে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা নিন্দা প্রস্তাবে ভেটো (আপত্তি) দিয়েছে দেশটি।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি এ বিষয়ে সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে সেখানকার যে পরিস্থিতি, অর্থাৎ যা আমরা দেখতে পাচ্ছি, তার অন্তরালেও নিশ্চয়ই অনেক ঘটনা, আলোচনা আছে। হঠাৎ করেই সেখানে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, ব্যাপারটি এমন নয়। তাই সবদিক বিবেচনা করেই জাতিসংঘের নিন্দা প্রস্তাবে আপত্তি জানানো হয়েছে।’
দেশটির শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা মার্ক মাইলে বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘সেখানকার অবস্থা দিন দিন যে রূপ নিচ্ছে, তাতে এখনই যুদ্ধ বিরতিতে না গেলে ওই অঞ্চলে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার শঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভয়াবহ সংকট দেখা দেবে সেখানে।’
ফিলিস্তিনের গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলি বসতকারীদের অবৈধ দখলদারিত্ব ও স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন গাজা অঞ্চলে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা। তবে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে যে সংঘাত চলছে, তার সূত্রপাত ঘটে গত ০৯ মে।
ওই দিন ছিল ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্র শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) রাত। ০৯ মে রাতে জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে শবে কদরের (লায়লাতুল কদর) নামাজ আদায় শেষে মসজিদ চত্বরে বিক্ষোভ শুরু করেন সেখানে উপস্থিত ফিলিস্তিনি মুসল্লিরা। স্বাভাবিকভাবেই তা দমাতে তৎপর হয়ে ওঠে ইসরায়েলের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ সময় বিক্ষোভকারী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যকার সংঘাতে আহত হন অন্তত ৯০ জন ফিলিস্তিনি। সংঘাতের পর থেকে আল-আকসা মসজিদ ও এর সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রেখেছিল ইসরায়েলি পুলিশ।
এর জেরে ফিলিস্তিনের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হামাস হুমকি দেয় ইসরায়েলের ক্ষমতাসীন সরকারকে। হামাসের পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়, ১০ মে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে মসজিদ চত্বর থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের প্রত্যাহার না করা হলে তার পরিণতির জন্য ইসরায়েল সরকার দায়ী থাকবে।
ইসরায়েল এই হুমকিকে আমল না দেওয়ায় ১০ মে সন্ধ্যার পর গাজা থেকে ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে রকেট হামলা শুরু করে হামাস। ফরাসী বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, সোমবার থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে দেড় হাজারের বেশি রকেট নিক্ষেপ করেছে হামাস।
হামাস রকেট হামলা শুরু করার অল্প কিছু সময় পর থেকেই গাজায় ফিলিস্তিনি ঘণবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো লক্ষ্য করে বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী, যা এখনও চলছে। গাজার স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত গাজায় নিহত হয়েছেন ২১২ জন।
নিহতদের মধ্যে ৬১ জন শিশু ও ৩৬ জন নারী আছেন। এছাড়া সেখানে আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি। অন্যদিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, হামাসের ছোড়া রকেটে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মারা গেছেন ১০ জন।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৪ সালে গাজায় ইসরায়েলিদের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সাত সপ্তাহের যুদ্ধের পর এবারই সবচেয়ে বড় ধরনের সংঘাত হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/কেএম