ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে অক্টোবরের শেষ দিক থেকে চলছে ইসরায়েলি বাহিনীর স্থল অভিযান। অভিযানকালে স্থানীয় বাসিন্দাদের দক্ষিণে সরে যেতে বলা হয়েছিল। এবার সেই দক্ষিণে অভিযান শুরু করেছে তারা। সেখান থেকেও বাসিন্দাদের সরে যেতে বলা হচ্ছে। তবে প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছাড়লেও রক্ষা পাচ্ছেন না অসহায় মানুষেরা। কারণ, উত্তর থেকে দক্ষিণ—সর্বত্র আকাশ থেকে বোমা ফেলছে ইসরায়েল।
সোমবার ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর রেডিওতে দেশটির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিশাম ইব্রাহিম ঘোষণা দেন, ‘উত্তর গাজায় আমাদের লক্ষ্য প্রায় পূরণ হয়েছে। আমরা এখন উপত্যকাটির অন্যান্য এলাকায় স্থল অভিযান শুরু করেছি। লক্ষ্য একটাই—হামাসকে (ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী) নির্মূল করা।’
দক্ষিণ গাজায় অভিযান শুরু হওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন ইসরায়েল সেনাবাহিনীর প্রধান হেরজল হালেভি। এ ছাড়া একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। তাতে দেশটির সেনা ও ট্যাংকগুলোকে গাজার শহরাঞ্চল ছাড়াও অন্যান্য এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে। ট্যাংক ও বিভিন্ন সমরাস্ত্র থেকে গোলাবারুদ ছুড়তেও দেখা গেছে। তবে এ ভিডিও উপত্যকার কোথায় ধারণ করা তা জানানো হয়নি।
এদিকে সোমবার সকালেও দক্ষিণ গাজার বাসিন্দাদের সরে যেতে বলে এক্সে (সাবেক টুাইটার) একটি পোস্ট দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাতে এ অঞ্চলের খান ইউনিস এলাকার তিন ভাগের এক ভাগ হলুদ রঙে চিহ্নিত করা হয়। বলা হয়, নিজেদের নিরাপত্তার খাতিরে সেখান থেকে বাসিন্দাদের ভূমধ্যসাগরের উপকূল ও মিসর সীমান্তবর্তী রাফাহ এলাকায় অবস্থান নিতে হবে।
লোকজনকে রাফাহতে সরে যেতে বললেও রোববার রাতভর সেখানে বোমা হামলা করেছে ইসরায়েল। এতে হতাহত হয়েছেন অনেকে। বোমার আঘাতে ধ্বংস হয়েছে সেখানকার বাসিন্দা সালাহ আল–আরজার বাড়িটিও। তিনি বলেন, ‘তারা (ইসরায়েল) বলেছিল, এ জায়গা নিরাপদ। তবে পুরো গাজার কোথাও নিরাপত্তা নেই। তারা যা বলেছে, সব মিথ্যা।’
গাজার সর্বত্রই যখন নির্বিচার হামলা চলছে, তখন উত্তর থেকে পালিয়ে খান ইউনিসে আশ্রয় নেওয়া আবু মোহাম্মদের প্রশ্ন, ‘ইসরায়েল যখন পরিকল্পনা করেছিল, আমাদের হত্যাই করবে, তারা গাজা নগর ছেড়ে আসতে বলেছিল কেন?’ তিনি বলেন, চলমান সংঘাত শুরুর পর বাধ্য হয়ে তিনবার নিরপদ আশ্রয়ের খোঁজে পালাতে হয়েছে তাঁকে।
নিহত ফিলিস্তিনি ১৬ হাজার ছুঁই ছুঁই
উত্তর গাজায় স্থল অভিযান শুরুর আগে সেখান থেকে বাসিন্দাদের সরে যেতে বলেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এর জেরে বাস্তুচ্যুত হন লাখ লাখ মানুষ। জাতিসংঘ বলছে, ইসরায়েলের বোমা থেকে বাঁচতে গাজার ২৩ লাখ জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে ইতিমধ্যে ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছে।
আর গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরুর পর থেকে অব্যাহত হামলায় গাজায় ১৫ হাজার ৮৯৯ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে সোমবার জানিয়েছেন সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল–কুদরা। তাঁদের মধ্যে শুধু রোববারই ৭০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণহানির খবর জানানো হয়েছিল। নিহত ফিলিস্তিনিদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।