খুলনা, বাংলাদেশ | ৩০ কার্তিক, ১৪৩১ | ১৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ফ্যাসিবাদের শেকড় অনেক দূর ছড়িয়ে গেছে : আইন উপদেষ্টা
  রাজধানীর হাজারীবাগে কিশোর গ্যাংয়ের ছুরিকাঘাতে আহত কিশোরের মৃত্যু

গাজায় আগ্রাসন : দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে ছাত্রদের বিক্ষোভ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

গাজায় চলমান ইসরায়েলি হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রের ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। যুদ্ধবিরতির দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে বিক্ষোভ চলছে, তা ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, কানাডাসহ বিশ্বের আরও অন্যান্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। লন্ডন, প্যারিস ও রোম থেকে সিডনি, টোকিও, বৈরুতসহ বিশ্বের বিভিন্ন শহরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি একটাই- ‘গণহত্যা বন্ধ হোক’।

পাশাপাশি ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন সব কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তোলা হচ্ছে। সম্প্রতি ব্রিটেনের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ভবনের বাইরে তাঁবু গেড়ে অবস্থান নেয় শত শত শিক্ষার্থী। ফিলিস্তিনের সহমর্মিতায় বিক্ষোভ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কানাডার মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়েও। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ-কারীদের হটাতে যে দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে, সেটাও তাঁদের প্রতিবাদে শামিলে উৎসাহিত করছে বলে জানিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। ইউরোপ, এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন…

সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত বড় ছাত্র আন্দোলন দেখেনি যুক্তরাষ্ট্র। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে বোস্টন, নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটন; হার্ভার্ড থেকে জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি, ওহাইও থেকে নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি একের পর বিশ্ববিদ্যালয় শামিল হচ্ছে গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবিতে। পাশাপাশি ইসরায়েল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবিও তোলা হচ্ছে। এ ধরনের বিক্ষোভ প্রথম শুরু হয়েছিল কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে। এরপর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও সফল হয়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ নির্মম দমনপীড়নের চেষ্টা চালায়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবাদের অধিকার হরণ, বাকস্বাধীনতায় সীমাবদ্ধতা এবং ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ তুলে গেল ১৮ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলো থেকে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ এবং মুখোশধারীদের হামলার কারণে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের ওপর দমনপীড়ন এবং ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে ইউরোপ, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।

ইসরায়েলবিরোধী স্লোগান দেওয়ায় বিক্ষোভকারীদের সামনে অস্ত্র হাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ছবিটি লস অ্যাঞ্জেলসের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার সামনে থেকে তোলা সহিংস হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মারধর ও গ্রেফতার করছে বিক্ষোভকারী ছাত্রদের। পুলিশ ফোর্ডহ্যামে বিক্ষোভ র‌্যালি থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে এক ছাত্রকে

সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ ভারতেও

যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়া ছাত্র বিক্ষোভের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে ভারতেও। দেশটির খ্যাতনামা নয়াদিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়েও (জেএনইউ) কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা গাজায় হামলা ও হত্যাযজ্ঞ থামানোর দাবিতে জড়ো হন। ২৯ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল ভারতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেটির। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের কারণে তাঁর ওই কর্মসূচি স্থগিত করা হয়। এক বিবৃতিতে জেএনইউ স্টুডেন্ট ইউনিয়ন বলেছে, ইসরায়েলের সন্ত্রাস ও গণহত্যার সঙ্গে যুক্ত প্রশাসন ও দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিকে জেএনইউর আঙিনা ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। বিক্ষোভ থামাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ১০০ মিটারের মধ্যে সব ধরনের বিক্ষোভ-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে নোটিস দেওয়া হয়েছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের মধ্যে ভারতীয় বংশো™ূ¢ত এক নারী শিক্ষার্থী গ্রেফতার হন। গ্রেফতার অচিন্থিয়া শিবালিঙ্গম যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। প্রিন্সটন অ্যালামনাই উইকলিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান নেওয়ার জন্য বিক্ষোভকারীরা তাঁবু ফেলেন। সে সময় পুলিশ সেখান থেকে আচিন্থিয়া এবং হাসান সাঈদকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। তারা দুজনই যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থী।

অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা স্লোগান দিচ্ছেন- ‘আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষে’। পুলিশি বাধা ভেঙে দেশটির কুইন্সল্যান্ড, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা

অস্ট্রেলিয়ায় তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ

অস্ট্রেলিয়ায় শত শত মানুষ সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভে অংশ নেন। সেখানে বিক্ষোভকারীরা তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নেন। তাদের হাতে বড় বড় শব্দে লেখা ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ প্ল্যাকার্ড। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শত শত শিক্ষার্থীরা গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। তন্মধ্যে ব্রিসবেনে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকিউ) বিক্ষোভের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থিদের ১০০ মিটার দূরত্বে ইসরায়েল সমর্থক বিক্ষোভকারীরাও অবস্থান নিয়েছেন।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ৫০টি তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ১০০ জনের মতো বিক্ষোভকারী রাতেও অবস্থান করছেন। গত শুক্রবার সেখানে পাল্টা বিক্ষোভের আয়োজন করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিরোধিতা করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। এতে ক্যাম্পাসে অহেতুক উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকে ‘বর্ণবাদী’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডুটন। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইসরায়েলপন্থি সমর্থকদের সমাবেশে বিক্ষোভকারীরা মুখোমুখি হলে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বেড়ে যায়।

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!