সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বশেষ নেতা মিখাইল গর্ভাচেভের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেবেন না রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। একইসঙ্গে সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতন রোধ করতে ব্যর্থ এই নেতাকে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুমতিও দেননি বর্তমান রুশ এই প্রেসিডেন্ট।
যদিও ২০০৭ সালে মারা যাওয়া রাশিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলৎসিনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার অনুমতি পুতিন দিয়েছিলেন। শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
ক্রেমলিন বলেছে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার কর্মব্যস্ততার কারণে সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচভের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে দিতে পারবেন না। গত মঙ্গলবার গর্বাচেভ মারা যান।
বৃহস্পতিবার মস্কোতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত প্রেসিডেন্টের কাজের সময়সূচি তাকে ৩ সেপ্টেম্বর শেষকৃত্যে যোগদান করার সময় দেবে না, যে কারণে তিনি আজ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’
তিনি বলেন, গর্বাচেভের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার ‘উপাদান’ থাকবে এবং রাষ্ট্রই এটি আয়োজনে সহায়তা করছে। তবুও এতে ইয়েলৎসিনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার তুলনায় বেশ বৈপরীত্য থাকবে।
প্রসঙ্গত, ২০০৭ সালে ইয়েলৎসিন মারা গেলে, পুতিন রাশিয়ায় জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন এবং বিশ্ব নেতাদের সাথে মস্কোর ক্যাথেড্রাল অব ক্রাইস্ট দ্য সেভিয়ারে একটি বিশাল রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগদান করেন।
সংবাদমাধ্যম বলছে, শেষকৃত্যে পুতিনের যোগদান না করার সিদ্ধান্তটি এমন একজন ব্যক্তির মৃত্যুতে ক্রেমলিনের শীতল প্রতিক্রিয়াকেই তুলে ধরে। ১৯৮৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর মিখাইল গর্ভাচেভ ‘গ্লাস্তনস্ত’ (উন্মুক্ততা) এবং ‘পেরেস্ত্রোইকা’ (পুনর্গঠন) নামে পরিচিত সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন।
এই ধরনের পদক্ষেপের কারণে হওয়া রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য পশ্চিমা বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে প্রশংসিত হয়েছিলেন গর্ভাচেভ। মূলত এ পদক্ষেপগুলোর কারণেই বার্লিন প্রাচীরের পতন, জার্মানির পুনর্মিলন এবং শেষ পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ত্বরান্বিত হয়েছিল।
এছাড়া রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গেও গর্বাচেভের সম্পর্কে টানাপড়েন ছিল। পুতিন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনকে ‘(বিংশ) শতাব্দীর সর্ববৃহৎ ভূ-রাজনৈতিক বিপর্যয়’ বলে অভিহিত করে থাকেন।
গর্বাচেভ ফাউন্ডেশন বলছে, স্নায়ুযুদ্ধ সমাপ্তকারী ব্যক্তিকে বিদায় জানাতে চাওয়া যেকোনো ব্যক্তি শনিবার ৩ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মস্কোর হাউস অব দ্য ইউনিয়নের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেন।
বিদায় জানানোর পর গর্বাচেভকে মস্কোর নোভোদেভিচি সমাধিস্থলে তার স্ত্রী রাইসা গর্বাচেভার পাশে সমাধিস্থ করা হবে। রাইসা ১৯৯৯ সালে ৬৭ বছর বয়সে লিউকেমিয়ায় ভুগে মারা যান।
রয়টার্স বলছে, মস্কোর এই গ্র্যান্ড হলটি ক্রেমলিন থেকে দেখা যায়। সোভিয়েত নেতা ভ্লাদিমির লেনিন, জোসেফ স্ট্যালিন এবং লিওনিড ব্রেজনেভের শেষকৃত্যের আয়োজনও এখানেই করা হয়েছিল। শনিবার গর্বাচেভকে সামরিক গার্ড অব অনার দেওয়া হবে – তবে তার শেষকৃত্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হবে না।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পুতিনকে মস্কোর সেন্ট্রাল ক্লিনিকাল হাসপাতালে গিয়ে গর্বাচেভের কফিনের পাশে লাল গোলাপ রাখতে দেখা যায়। এখানেই গত মঙ্গলবার ৯১ বছর বয়সে মারা যান গর্ভাচেভ।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে ক্ষমতায় আসার পর মিখাইল গর্ভাচেভ বিশ্বের কাছে সোভিয়েত ইউনিয়নকে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। অনেকগুলা সংস্কার কর্মসূচী গ্রহণ করেছিলেন তিনি। কিন্তু এরপরও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন তিনি ঠেকাতে পারেননি।
মিখাইল গর্বাচচেভের মৃত্যুতে তার প্রতি সারা বিশ্ব থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘তিনি ইতিহাসের গতিপথ বদলে দিয়েছিলেন। মিখাইল গর্বাচেভ ব্যতিক্রমী একজন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তার মৃত্যুতে বিশ্ব এমন একজন নেতা হারাল যিনি শান্তির অক্লান্ত সমর্থক ছিলেন।’