কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নে গরুচোর সন্দেহে গত শুক্রবার এক রশিতে বেঁধে মা ও তরুণী মেয়েকে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। এরপরই মা-মেয়েকে পুলিশে দেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম।
শুক্রবার দুপুরে হারবাং ইউনিয়নের পহরচাঁদা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পরে রশিতে বাঁধা অবস্থায় মা-মেয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দাবি করেন, ঘটনার দিন তিনি এলাকায় ছিলেন না। পারিবারিক অনুষ্ঠানের কারণে ওই দিন তিনি চট্টগ্রামে ছিলেন। স্থানীয় জনতা গরু চোর সন্দেহে মা ও মেয়েকে আটক করলে তিনি পুলিশ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ফোন দিয়ে সহায়তা করেন বলে জানান।
পুলিশ বলছে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মা ও মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মা ও মেয়েসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করার পর কারাগারে পাঠানো হয়।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত শুক্রবার নারীসহ গরুচোর সিন্ডিকেটের পাঁচ সদস্যকে এক কিলোমিটার ধাওয়া করে স্থানীয়রা আটক করলে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এ সময় দুই নারী ও তিন পুরুষ সদস্যকে স্থানীয় ইউপি কার্যালয় থেকে আটক করে প্রথমে চকরিয়া হাসপাতাল ও পরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে পাঠানো হয়।’
আটক ব্যক্তিদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার মা ও মেয়েসহ চারজনের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়। অপর একজনের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলায়।
এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বলছেন, ‘গরুচোর সন্দেহে প্রথমে স্থানীয়রা এক দফা মা ও মেয়ের ওপর নির্যাতন চালায়। পরে হারবাং ইউপির গ্রাম পুলিশ মা-মেয়েকে এক রশিতে বেঁধে টেনেহিঁচড়ে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে এসে পুনরায় নির্যাতন করে। নির্যাতনের পর ইউপি চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে ফোন করলে তাঁদের পুলিশ নিয়ে যায়।
চোর সন্দেহে কোনো নারীকে কেন এভাবে নির্যাতন করা হলো জানতে চাইলে ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘এভাবে রশি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে বেড়ানোর বিষয়টি প্রথম অবস্থায় আমরা জানতে পারিনি। এ ছাড়া গ্রেপ্তার আসামিরাও অভিযোগ করেননি ব্যাপক নির্যাতনের কথা। বরং তাঁরা যে গরু চুরি করতে এলাকায় এসেছিলেন, সেটি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। আমরা শুধু বাদীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইউপি কার্যালয় থেকে তাঁদের নিয়ে এসেছি। পরে নির্যাতনের একটি ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বসহকারে নেয়।’
ওসির কাছে মামলার তথ্য জানতে চাইলে তিনি থানার বাইরে রয়েছেন বলে জানান। এক ঘণ্টা পর বাদীর নাম, মামলা নম্বর ও আসামিদের পরিচয় দেওয়ার কথা বলে ফোন কেটে দেন তিনি। এক ঘণ্টা পর এ প্রতিবেদক ওসি (তদন্ত) মিজানুর রহমান ও ওসি হাবিবুর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। সূত্র : এনটিভি।