খুলনা, বাংলাদেশ | ১২ আষাঢ়, ১৪৩১ | ২৬ জুন, ২০২৪

Breaking News

  মুন্সিগঞ্জেরের মোল্লাকান্দিতে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ ৫
  সাবেক আইজিপি বেনজিরের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে

গরুর দাম বাড়লেও কেন চামড়ার দাম কমছে

গেজেট ডেস্ক 

ঈদে পশু কোরবানির পর রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে শুরু হয়েছে চামড়া বেচাকেনার কাজ। গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার চাহিদা ও দাম কমার কারণে এ বছর থেকে লবণযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। কিন্তু এর প্রভাব কাঁচা চামড়া বিক্রিতে পড়েনি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে এসব গরুর চামড়া সংগ্রহ করেন মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে ১০০ পিস চামড়া নিয়ে পোস্তা এলাকায় এসেছিলেন ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন। দাম বাড়িয়ে সরকার চামড়ার দাম বেঁধে দেয়ায় আলমগীরের আশা ছিল, এবার বাড়তি দাম পাবেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এবার আশা ছিল একটু বাড়তি দাম পাব। কিন্ত এখানে এসে দেখি চামড়ার চাহিদাই কম। সে কারণে দাম পাচ্ছি না খুব একটা।’

তবে পোস্তা এলাকার চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার লবনযুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে তাদের বাড়তি খরচ হওয়ায় তারা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের খুব একটা দাম দিতে পারছেন না।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, ‘প্রতি পিচ চামড়া লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করতে তাদের খরচ হচ্ছে ২৭০ থেকে ৩২০ টাকা পর্যন্ত।’

পোস্তার চামড়া ব্যবসায়ীদের যুক্তি, কাঁচা চামড়া কেনার পর তার পেছনে যে খরচ হয় সেই খরচ মেটাতে গিয়ে তারা গতবারের চেয়ে বাড়তি দাম দিতে পারছেন না।

কত টাকায় বিক্রি হচ্ছে কাঁচা চামড়া?
রাজধানী জুড়ে যে সব পশু কোরবানি হয় তার একটা বড় অংশ বিক্রি হয় পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায়। কোরবানির দিন দুপুরের পর থেকে এই এলাকায় আসতে শুরু করে পশুর চামড়া।

সাভারের হেমায়েতপুরে তৈরি হয়েছে আরেকটি ট্যানারি সমিতি। গত কয়েক বছরে সেখানেও বেড়েছে বেচা-কেনা।সোমবার বিকেলে রাজধানীর পোস্তায় প্রতি গরুর চামড়া সর্বোচ্চ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আবার ছোট গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর খাসির চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ টাকা দরে।

চলতি বছর কোরবানির সময় এক লাখ ৬০ হাজার পিস কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকার আড়তদাররা।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ী ইকবাল শেখ ৫০ পিচ গরুর চামড়া বিক্রি করতে এসেছিলেন পোস্তা এলাকায়। পোস্তার আড়তদাররা বেশি দাম দিয়ে চামড়া কিনতে খুব একটা আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলেও তার কাছে মনে হয়েছে। সোমবার বিকেলে একই অবস্থা ছিল আমিন বাজারের ট্যানারি পল্লীতে।

রাজধানীর চামড়ার বাজারগুলোতে ঈদের দিন দেখা কম দামেই কাঁচা চামড়া বিক্রি হতে দেখা গেছে। ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকায় যে গরু কেনা হয়েছে সে সব গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছিল গড়ে ৫০০ টাকা দরে। ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছিল ৮০০ টাকা দরে। আর ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা দামের গরুর চামড়ার দাম সর্বোচ্চ দেখা গেছে সাড়ে ৯০০ টাকা থেকে শুরু করে এক হাজার টাকা দরে।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান বলেন, ‘কাঁচা চামড়া কেনার পর তার পেছনে আমাদের যে খরচ হয় সেটা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের জানার কথা। কিন্তু তারপরও তারা কম দামে কেনার অভিযোগ করেন।’

দাম বাড়ানোর পরও কেন এমন পরিস্থিতি
পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে চলতি মাসের শুরুতে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার।

এ বছর ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণ যুক্ত গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, গত বছর যা ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় বর্গফুট প্রতি চামড়ার দাম বাড়ানো হয়েছে পাঁচ টাকা।

ঢাকার বাইরে গরুর প্রতি বর্গফুট লবণ যুক্ত চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। এক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে সর্বোচ্চ সাত টাকা। এছাড়া খাসির লবণ যুক্ত চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার ১৮ থেকে ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সে হিসাবে ঢাকায় মাঝারি আকারের ২৫ বর্গফুটের লবণ যুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৩৭৫ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এই হিসাব থেকে লবণ, মজুরি ও অন্যান্য খরচ বাবদ ২৫০ টাকা বাদ দিলে ওই চামড়ার আনুমানিক মূল্য দাঁড়ায় এক হাজার ১২৫ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা।

কিন্তু রাজধানী ঢাকার কাঁচা চামড়ার বাজারে সোমবার গরুর চামড়া সর্বনিম্ন ২০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

এ কারণে ব্যবসায়ীদের কাছে দাম কমার কারণ জানতে চাওয়া হলে তারা পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, সরকার লবনযুক্ত চামড়ার দাম বাড়িয়েছে সে কারণে অনেক হিসাব-নিকাশ করে তাদের কাঁচা চামড়া কিনতে হয়।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, ‘শ্রমিক খরচ, দোকান ভাড়া, লোডিং আনলোডিংসহ সব ধরনের খরচ বেড়ে যাওয়া আমরা চাইলেও এর চেয়ে বেশি দামে কিনতে পারি না। নিশ্চয়ই লোকসান করে কেউ এই ব্যবসা করবে না।’

চামড়া শিল্পে পরিবর্তন আসবে কবে?
সর্বশেষ ২০১৩ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দাম বেশি ছিল। ওই বার গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। এরপর থেকে বিভিন্ন কারণে চামড়ার দাম ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে।

২০১৭ সালের পর থেকে কাঁচা চামড়ার কদর কমেছে। গতবছরও একই দশা ছিল। রাজধানীসহ সারাদেশেই কাঁচা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন কোরবানিদাতারা। ২০১৯ সালে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে বড় ধরনের ধস নামে। ন্যূনতম দাম না পেয়ে দেশের অনেক অঞ্চলে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া সড়কে ফেলে দেয় এবং কেউবা মাটিতে পুঁতে ফেলে।

এবারের ঈদুল আযহায় সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ পশু কোরবানি হয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫৫ লাখ গরু-মহিষ এবং বাকিগুলো খাসি, বকরি, ভেড়াসহ অন্যান্য পশু। গত বছর ঈদুল আজহায় এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হয়েছিল।

সরকার লবনযুক্ত চামড়ার দাম বাড়ানোর ফলে কিছুটা লাভবান হবেন পোস্তার ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আফতাব খান বলেন, ‘গত বছর আমরা চামড়া কিনেছি এক লাখ ১৮ হাজার পিস। এবার আমাদের এক লাখের পিসের বেশি কেনা যাবে না বলেই মনে হচ্ছে।’

কোরবানির পশুর এই চামড়া অনেকেই দাতব্য প্রতিষ্ঠান, মাদরাসা কিংবা এতিমখানায় দান করেন। এই চামড়ার টাকা দিয়ে এতিম শিশুদের ভরণ-পোষণও চলে। চামড়া সঠিক দামে বিক্রি করতে না পারলে দুশ্চিন্তায় পড়েন বিভিন্ন দাতব্য প্রতিষ্ঠানও।

ঢাকার বনশ্রী নূরানী আদর্শ মাদরাসার শিক্ষক আব্দুল ওহাব বলেন, ‘গত কয়েক বছর ধরে চামড়া আসছে বেশি। কিন্তু দাম দিন দিন কম পাচ্ছি। এতে আমাদের তেমন কোনো লাভ হচ্ছে না।’

সূত্র : বিবিসি

খুলনা গেজেট/এএজে

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!