গত কয়েকদিন ধরে সারাদেশের ন্যায় খুলনাতেও চলছে প্রচন্ড তাপ প্রবাহ। তাপের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তর সারা দেশে হিট অ্যারার্ট জারি করেছে। গত ২৫ বছরের মধ্যে সোমবার (২৯ এপ্রিল) খুলনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচন্ড তাপদাহে হাসফাঁস করছে খুলনার মানুষ। বেড়েছে পানীয় জলের চাহিদা। অনেকে শরীরে পানির চাহিদা মেটাতে ছুটে যাচ্ছেন ডাবের দোকানে। এই পরিস্থিতিতে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খুলনায় ডাবের দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।
দৌলতপুর, ফুলবাড়িগেট, খালিশপুর বাজার, বয়রা বাজার, খুলনা শিশু হাসপাতালের সামনে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনেসহ খুলনার সর্বত্র সর্বনিম্ন ৭০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে ১ টি ডাব। বিক্রেতারা বলছে পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে তাদেরও বেশী দামে ডাব বিক্রি করতে হচ্ছে। বাড়াতে হচ্ছে দাম। তাছাড়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডাবের উৎপাদন কমে যাওয়ায় মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। ক্রেতারা গরমে পানের চাহিদা মেটাতে উচ্চ মূল্যের ডাব কিনলেও অসন্তোষ প্রকাশ করছে।
ফুলবাড়িগেট কুয়েট এপ্রোচ সড়কের ডাব বিক্রেতা মোঃ সোরহাব হোসেন বলেন, ২০ বছর ধরে ডাব বিক্রি করছি। এত দামে ডাব বিক্রি এই প্রথম। ২০ বছর আগে যখন ডাব বিক্রি করি তখন সর্বোচ্চ বড় আকারের একটি ডাবের দাম ছিলো ২০ টাকা। এখন ১ টি ডাব বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৭০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা দরে। গত কয়েক বছর ধরে ডাবে অকাল দেখা দিয়েছে। আমাদের এই অঞ্চলের কোন গাছে ডাব নেই। বাগেরহাট থেকে পাইকারি বিক্রেতারা ডাব নিয়ে আসে রূপসা ব্রিজের ওপার চৌরাস্তার মোড়ে। সেখান থেকে ১০০ ডাব কিনি ৮ / ৯ হাজার টাকায়। এরপর আমাদের ক্যারিং খরচ আছে।
একই সড়কের আরেক ডাব বিক্রেতা শেখ জুয়েল বলেন, আট বছর আগে যখন এই সড়কের ডাব বিক্রি শুরু করি তখন বড় সাইজের একটি ডাব বিক্রি করতাম ২৫ /৩০ টাকা। এখন সেই ডাব বিক্রি করতে হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে অনেক নারকেল গাছ আছে, কিন্তু গাছে কোন ডাব নেই। চুকনগর বাজার থেকে পাইকারি দরে ডাব কিনে এনে খরচ খরচা বাদ দিয়ে সামান্য লাভে বিক্রি করি। যেদিন যে দামে কিনি সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করি। বর্তমানে ৭০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় ১টি ডাব বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুলনাসহ এ অঞ্চলে আশংকাজনক ভাবে ডাবের উৎপাদন কমে গেছে। ডাবের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে দৌলতপুর কৃষি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এ অঞ্চলে নারকেল গাছে মাইস নামে এক ধরনের মড়ক দেখা দিয়েছে। এই মড়কের ফলে নারকেল গাছের পাতা এবং গাছ আক্রান্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে গাছে ফল হচ্ছে না এবং উৎপাদন কমে যাচ্ছে। বিষয়টি বিভিন্ন কর্মশালা এবং সেমিনারে উত্থাপন করেছি। এটা নিয়ে আমাদের বৈজ্ঞানিকরা রিসার্চ শুরু করেছেন। তবে এটি একটি লেনদি প্রসেস। এটির সমাধান বের করতে সময় লাগবে।
ডাবের পানির পুষ্টিগুন
ডাবের পানি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। স্যালাইনের পানির তুলনায় ডাবের পানি বহুগুনে উপকারী ও নিরাপদ। ডাবের পানিতে রয়েছে প্রচুর এন্টি অক্সিডেন্ট। গরমে ডাবের পানিতে শরীরের ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য ঠিক রাখে। যাদের লো প্রেসার তাদের জন্য ডাবের পানি অত্যন্ত কার্যকরী।
ডাবের পানিতে ভরপুর ক্যালরি থাকলেও সুগারের পরিমাণ কম। তাই ডায়াবেটিকস রোগীরাও নিশ্চিন্তে ডাবের পানি পান করতে পারেন। চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে ডাবের পানি টনিকের মতো কাজ করে। গবেষণা বলছে, নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে ডায়াবেটিকদের এইচ বিএ১সি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রচন্ড তাপদাহের কারণে ডায়রিয়া বা কলেরা রোগীদের ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হলে প্রচুর পরিমাণে পানি ও খনিজ পদার্থের ঘাটতি দেখা দেয়। এক্ষেত্রে ডাবের পানি অনেকাংশে সে ঘাটতি পূরণ করে। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। এটি কিডনি সংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধে সহায়ক। নিয়মিত ডাবের পানি খেলে কিডনি রোগ হয় না। আবার কিডনি রোগীদের জন্য ডাবের পানি পান করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণ আয়রন রয়েছে। শরীরের রক্ত তৈরিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হিসেবে কাজ করে ডাবের পানি।
এছাড়া ডাবের পানিতে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় খনিজ লবণ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস। এসব খনিজ লবণ দাঁতের উজ্জ্বল্য বাড়ায়। দাঁতের মাড়িকে করে মজবুত। অনেকের দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়ে, মাড়ি কালচে লাল হয়ে যায়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ দেবে খনিজ লবণ অর্থাৎ ডাবের পানি। প্রস্রাবের বিভিন্ন সমস্যায় ডাবের পানি উপকার করে। মুখে জল বসন্ত দাগসহ বিভিন্ন ছোটখাট দাগের জন্য সকাল বেলা ডাবের পানি মুখে লাগালে মুখের লাবণ্য ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়। শরীরের দুর্বলতা দূর করতে গ্লুকোজ স্যালাইন হিসেবেও ডাবের পানি ব্যবহৃত হয়।
প্রতি ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে রয়েছে জলীয় অংশ ৯৫ গ্রাম, মোট খনিজ পদার্থের ৩ গ্রাম, আমিষ ২.৩ গ্রাম, শর্করা ২.৪ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি১.১১মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম, এছাড়াও রয়েছে খাদ্যশক্তি ২৩ কিলো ক্যালরি।