‘গণহত্যা দিবস’ স্মরণে দেশব্যাপী প্রতীকী ‘ব্ল্যাকআউট’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ শুক্রবার (২৫ মার্চ) সরকারি আদেশের অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি পালন করে দেশবাসী। রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত এই ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করা হয়। তবে জরুরি স্থাপনাগুলো এই ব্ল্যাকআউটের বাইরে ছিল।
এর মাধ্যমে কিছুক্ষণের জন্য জাতির সামনে ফুটে উঠেছিল ১৯৭১ সালের ভয়াবহ সেই রাতের চিত্র। রাতের আঁধারে নির্বিচারে হত্যা করা হয় দেশের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সাধারণ মানুষকে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস ও ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচির অংশ হিসেবেই এই ‘ব্ল্যাক আউট’ পালন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, বিদ্যুৎ বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, দেশের সব জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এই ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন।
জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ এদিন অর্থাৎ ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তখন থেকে দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টায় আছে সরকার।
১৯৭১ সালের এই দিনে রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট নামে তারা মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায়। জাতির জীবনে আসা এই ‘ভয়াল কালরাত’-এ ঘুমন্ত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা।
ওইদিন পিলখানা, রাজারবাগ, নীলক্ষেত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় একযোগে আক্রমণ করে পাকিস্তানি সেনারা। মেশিনগানের গুলিতে, ট্যাংক-মর্টারের গোলা আর আগুনের লেলিহান শিখায় পুরো নগরীতে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের নয় শিক্ষককে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। তাদের আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পায়নি রোকেয়া হলও। বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে চলে নৃশংসতম হত্যাযজ্ঞ।
ওই রাতে বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান নিয়ে যায় দখলদার বাহিনী। তার আগেই ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে দেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন জাতির পিতা। যে কোনো মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শুরু হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিশ্চিত হয় সেদিন।
এই অর্জন করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন ৩০ লাখ মানুষ। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন দুই লাখেরও বেশি নারী।
খুলনা গেজেট/ এস আই