একাত্তরের মার্চে দেশব্যাপি অসহযোগ আন্দোলন। স্কুল কলেজ বন্ধ। পশ্চিমা শাসক গোষ্টীকে খাজনা ট্যাস্ক দেওয়া বন্ধ করে দেয় বাঙালি জাতি। রাজপথে শ্লোগান ছয় দফা না এক দফা, স্বাধীনতা, স্বাধীনতা। খুলনা শহরে সেনাবাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন লে: কর্ণেল শামস। তিনি খুলনা পুলিশ লাইন ও রূপসা ষ্ট্যাণ্ড রোড়স্থ ইপিআর ক্যাম্পে বাঙালিদের নিরস্ত্র করার পরিকল্পনা করেন। তার আগে স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান, খুলনা এর সামনে পাকিস্তানীরা স্বাধীনতা প্রত্যাশীদের ওপর গুলি চালায়, দিনটি ৩ মার্চ। খুলনাবাসী ক্ষুব্দ হয়ে উঠে পাকিস্তানীদের ওপর। খুলনা শহরের অবাঙালি অধ্যুষিত ফেরিঘাট, পশ্চিম বানিয়াখামার ও খালিশপুরে বাসিন্দারা পাকবাহিনীর পক্ষে অবস্থান নেয়।
ঢাকায় প্রেসিডেন্ট জে: আগা ইয়াহিয়া খানের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আলোচনায় অগ্রগতি হচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট পাকিস্তানী জেনারেলদের ডেকে মিলিটারী এ্যাকশানের প্রস্তুতি নিতে বলেন। ১৭ মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর লে:জে: টিক্কা খান দু’জন সেনা কর্মকর্তাকে কমান্ড হাউজে ডেকে পাঠান। দু’জন সেনা কর্মকর্তা হচ্ছে মে:জে: রাও ফরমান আলী ও মে:জে: খাদিম হুসাইন রাজা। তিন জনের বৈঠকে একটি সামরিক পরিকল্পনার সিন্ধান্ত হয়। ১৮ মার্চ সকাল থেকে অপারেশন র্সাচ লাইটের খসড়া তৈরি হয়। এ দু’জন হচ্ছেন জে:ফরমান ও জে: রাজা। অপারেশন র্সাচ লাইটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী ছিলেন জে: রাজা। তিনি’ আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ঔন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান ১৯৬৯-১৯৭১’ শিরোনামের একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থে এ তথ্য প্রকাশ করেন (ভারত বিচিত্রা,ডিসেম্বর ২০২৩)।
একাত্তরের এ দিনগুলোতে গল্লামারীস্থ রেডিও সেন্টার, শিপইয়ার্ড, নুরনগর ওয়াপদা, জিপিও, আইডাব্লিউটিএ, রুজভেল্ট ও নুরনগর ফায়ার ব্রিগেডে সেনা ছাউনি ছিল। ২৫ মার্চ এর আগ থেকে খুলনার জাতীয় পরিষদ, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যবৃন্দ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও ন্যাপের রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্টদের বাসভবন চিহ্নিত করতে পাকিস্তানী গোয়েন্দারা তৎপর ছিল। স্থানীয় সাপ্তহিক দেশের ডাক, সাপ্তহিক সেতু ও বামপন্থী চিন্তার মাসিক সন্দীপন কার্যালয়ের ওপর আঘাত করার পরিকল্পনা ছিল পাকিস্তানীদের।
খুলনা গেজেট/এনএম