আজ তিন দিনের সফরে ভারত যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের। অন্যদিকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ গতকাল শনিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন।
জাতীয় নির্বাচন সামনে এলে প্রতিবারই জাপায় নানা তৎপরতা দেখা যায়, এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশনের সাক্ষাৎ এবং জি এম কাদেরের ভারত যাত্রাকে তারই আভাস দিচ্ছে। তবে জি এম কাদের ভারতে কার কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর উপপ্রেস সচিব কে এম শাখাওয়াত মুনের বরাতে সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন নিয়েও আলোচনা করছেন।
রওশনের সঙ্গে থাকা তার রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, নির্বাচন পদ্ধতি এবং জোট বিষয়ক কথা হয়নি। বিরোধীদলীয় নেতা প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, নির্বাচনমুখী দল হিসেবে জাপা ভোটে অংশ নেবে। প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
এদিকে ভারত সফর নিয়ে কথা বলেননি জি এম কাদের। তার আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা মাশরুর মওলা জানিয়েছেন, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে জাপা চেয়ারম্যান সেখানে যাচ্ছেন।
জি এম কাদেরের স্ত্রী শেরিফা কাদের ও মশরুর মওলা তার সফরসঙ্গী হবেন। মশরুর মওলা বলেন, ‘এখনও জানি না ভারতে কার কার সঙ্গে দেখা হবে। অফিসিয়ালভাবে কোনো কনসার্ন পারসনের অ্যাপয়নমেন্ট পাইনি। ভারতের ফরেন মিনিস্ট্রির সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। দিল্লি পৌঁছানোর পর জানতে পারব, কার কার সঙ্গে দেখা হবে।’
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জন করেছিলেন জাপা প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। এর মাসখানেক আগে ভারতের তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং ঢাকায় এসে এরশাদের সঙ্গে বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নিতে বলেন। এরশাদ রাজি না হলেও রওশনের নেতৃত্বে জাপার একাংশ নির্বাচনে অংশ নেয়। জি এম কাদের ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তে অনড় থাকেন।
ওই নির্বাচনের পর রওশন এরশাদ ও জি এম কাদেরের বিরোধ চলছে। বিএনপির সুরে কথা বলছেন এমন অভিযোগ তুলে গত বছর জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরাতে চেষ্টা করেন রওশন। পাল্টা হিসেবে রওশনকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে চেষ্টা করেন জি এম কাদের। সরকারের সমর্থনে টিকে যান রওশন। গত জানুয়ারিতে ‘সরকারি মধ্যস্থতায়’ সমঝোতা হলেও ফের তা ভেঙেছে।
সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে সরকারের কড়া সমালোচনা করে চলেছেন জি এম কাদের। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনকে প্রকাশ্যে বিতর্কিত বলছেন। আর রওশন এরশাদ বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন।
জি এম কাদের সম্প্রতি দুই দফা ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এসব বৈঠকে মার্কিন দূত জানতে চেয়েছেন, আগামী নির্বাচন কীভাবে অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা বাংলাদেশে অংশগ্রহণ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে তাগিদ দিচ্ছে। একে সরকারের ওপর চাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। খোদ প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন, তাকে সরানোর চেষ্টা চলছে। এর মধ্যেই গত শুক্রবার ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আওয়ামী লীগের পক্ষ নিয়ে ওয়াশিংটনকে বার্তা দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারত আওয়ামী লীগের পাশে রয়েছে জানিয়ে বলেছে- ‘শেখ হাসিনাকে দুর্বল করা হলে, সবার ক্ষতি হবে।’ এ বার্তাকে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচনে ভারতের প্রভাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।
জাপার একাধিক নেতা বলেন, ভারতের প্রভাব গোপন কিছু নয়। জাতীয় পার্টিও ভারত ঘনিষ্ঠ। জি এম কাদের দেশটিতে যাচ্ছেন আগামী নির্বাচনে করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করতে। তিনি বিকল্প খুঁজলেও জাপার সিনিয়র কো- চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু, কো-চেয়ারম্যান এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, কাজী ফিরোজ রশীদসহ সব জ্যেষ্ঠ নেতা এবং দলীয় এমপিরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকার পক্ষপাতী। তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির মতো অবস্থান নিতে চান না। গত ৫ আগষ্ট জাপার এমপি জাপার এমপি এবং প্রেসিডিয়াম সদস্যদের যৌথসভায় এ মতামত দেন তারা।
জাপা সূত্রের খবর, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আগামী নির্বাচনে জাপা কার সঙ্গে থাকবে তা সেপ্টেম্বরে ঠিক হবে। তা ঠিক করতেই জি এম কাদেরের ভারতযাত্রা। বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে নিজের অবস্থানে নিতে পারবে; নাকি ভারত যুক্তরাষ্ট্রকে নিজের পক্ষে টানতে পারবে- এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে চান তিনি। জাপার মূল্যায়ন, বহুমুখী পারস্পরিক স্বার্থের কারণে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত বাংলাদেশের নির্বাচনের বিষয়ে এক বিন্দুতে আসবে। রাজনীতিতে টিকে থাকার স্বার্থে জাপাও সেদিকে যাবে।
কয়েক বছর ধরে অসুস্থ ৭৮ বছর বয়সী রওশন। গতকাল বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে গণভবনে যান তার ছেলে রাহগির আল মাহি এরশাদ সাদ ও মুখপাত্র কাজী মামুনুর রশিদ। গোলাম মসীহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী কুশল বিনিময় করেন এবং রওশন এরশাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন। সংসদীয় গণতন্ত্রে গঠনমূলক ও ইতিবাচক ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানান। জাপার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কথা ওঠেনি। রাজনীতি নিয়েও বিশেষ আলোচনা হয়নি। সূত্র: দৈনিক সমকাল।
খুলনা গেজেট/এনএম