অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সাত মাস পেরিয়ে গেছে। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করতে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করছে সরকার। এর মধ্যে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে থাকা ছাত্ররা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন।
এই প্রেক্ষাপটে, দ্য ডেইলি স্টারের ওয়াসিম বিন হাবিব ও সাজ্জাদ হোসেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারক সালাহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দলটির দৃষ্টিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মক্ষমতা, ছাত্রনেতাদের জাতীয় নাগরিক দল গঠন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের অগ্রগতি এবং আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন।
দ্য ডেইলি স্টার: প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে নির্বাচনের একটা সময়ের কথা জানিয়েছেন, এ বছর ডিসেম্বর অথবা আগামীবছের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে। আপনি কতটুকু আশাবাদী।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: প্রধান উপদেষ্টা দুএকটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন তিনি ও তার উপদেষ্টা পরিষদ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তাতে আমরা মোটামুটি আশাবাদী যে উনি এই বিষয়ে একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ জাতির সামনে প্রদান করবেন।
বিগত মিটিংয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আমরা কয়েকজন গিয়েছিলাম উনার সঙ্গে কথা বলতে। অন্যান্য বিষয়সহ এই বিষয়টাতে তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, ডিসেম্বরকে সামনে রেখে তাদের সকল প্রস্তুতি চলছে। তবে আমরা আশা করছি তিনি এই বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন যে, তিনি ঠিক ডিসেম্বরের মধ্যে কবে কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করাতে চান।
নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ব্যাপার এবং সাংবিধানিক অথরিটি নির্বাচন কমিশনের। কিন্তু যেহেতু এই সরকার ঠিক নিয়মিত সরকার নয়, সেজন্যই সরকারের সিদ্ধান্তটা পাওয়ার পরে নির্বাচন কমিশন সেই কাজটা করবে। আর স্বাভাবিক নিয়মে যদি সরকারের মেয়াদ শেষ হতো তখন সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন যে দায়িত্ব সেই দায়িত্ব পালন করত–এখানেই ব্যবধান। আমরা মোটামুটি আশাবাদী যে তিনি খুব শিগগির জাতির সামনে বিস্তারিত রোডম্যাপ প্রকাশ করবেন।
দ্য ডেইলি স্টার: আপনি বলছেন যে আপনি মোটামুটি আশাবাদী। নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কি উদ্যোগ দেখতে পাচ্ছেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: আমি কয়েকদিন আগেও একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলাম ডিসেম্বরের মধ্যে যে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চাই, সেজন্য দৃশ্যমান পদক্ষেপগুলো জনগণ দেখতে চায়। সেই হিসাবে তিনি শুধু বলেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের নেতৃত্বে সংলাপ শুরু হয়েছে। এই সংলাপ অবশ্য তাদের নির্ধারিত একটি মেয়াদ আছে। সেই মেয়াদের মধ্যে তারা একটি বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করবেন। সে জন্য কয়েক মাস সময় তারা নিবেন। এটা যদি দৃশ্যমান পদক্ষেপ হয় তাহলে প্রথম বৈঠক হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি। তারা আমাদের কাছে রিপোর্টগুলো দিয়েছেন। আমরা সেটার উপরে চর্চা করছি। আশা করি আমাদের সঙ্গে পরবর্তী বৈঠকে আমাদের মতামত দিতে পারব। অন্যান্য রাজনৈতিক দল, গণতান্ত্রিক শক্তি, সামাজিক শক্তি বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ তারা হয়তো নেবেন। প্রতিবেদন তৈরির আগে তারা পরামর্শ নিয়েছেন। সংবিধান, বিচার বিভাগ, প্রশাসনসহ পুলিশ এবং অন্যান্য বিষয় যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য নির্বাচনমুখী সংস্কার সেই বিষয়গুলোতে আমরা জোর দিতে বলেছি৷ এবং নির্বাচনের আগে জরুরি ভিত্তিতে কি কি বাস্তবায়ন করা যায় সেগুলো চিহ্নিত করতে বলেছি। যেহেতু সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, তাই সংস্কারের জন্য নির্বাচিত জাতীয় সংসদই প্রয়োজন হবে। যেখানে সেগুলো অ্যাড্রেস করা যাবে, আলোচনা করা যাবে। মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবের অনেক কিছুই আমরা ২০২৩ সালে আমাদের দলের পক্ষ থেকে ৩১ দফাতে বিবৃত করেছি।
দ্য ডেইলি স্টার: সংস্কারের ব্যাপারে আপনার কী মতামত?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: যেগুলো মোটা দাগের সংস্কার প্রস্তাব সেগুলো একেকটির পিছনে অনেক বেশি বিশ্লেষণের প্রয়োজন হবে। যেমন সংবিধান, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যমের ব্যাপারে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রণয়ন করে জাতির কাছে আমরা আবার সেটা উপস্থাপন করব এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সেগুলো বাস্তবায়ন হবে।
উদ্দেশ্য হবে আমাদের একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেগুলো আমরা আমাদের প্রস্তাবনায় আগেই উপস্থাপন করেছি। এমন না যে ফ্যাসিবাদমুক্ত হওয়ার পরে আমরা সেগুলো উপস্থাপন করেছি। অন্তর্বর্তী সরকার সেই সংস্কার উদ্যোগগুলো নিয়েছে, সেগুলাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তারা সেই উদ্যোগগুলো ইনিশিয়েট করতে পারে, কিন্তু সংস্কার পরিপূর্ণ করতে গেলে জাতিকে অনেক বেশি সময় দিতে হবে৷ সে জন্য আমরা বারবার তাদের কাছে বলছি যে, একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপনারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় উত্তরণের পথটা খুব দ্রুত করুন যাতে করে রাজনৈতিক গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা হয়। জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা হয়। সেখানে সব কিছু নিয়ে আলোচনা হবে এবং সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে জাতির মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি হবে। সেগুলো বাস্তবায়নের জন্য সুবিধা হবে। সেই কাজটা তারা করছে না।
কিছু রাজনৈতিক দল এবং পক্ষ এই বিষয়টাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য চেষ্টা করছেন বলে আমাদের মনে হয়েছে। এর বিভিন্ন লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে। ফ্যাসিবাদ এবং অগণতান্ত্রিক শক্তির চির বিদায়ের জন্য এই গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। সেই লক্ষ্যে যাতে একটি গণতান্ত্রিক এবং শক্তিশালী রাষ্ট্র কাঠামো বিনির্মাণ হয় এবং সেজন্য যাতে সংবিধান সহ অন্যান্য সকল রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংস্কার হয়—এটাই তো লক্ষ্য ছিল।
সেই লক্ষ্য আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পূরণ করতে পারব না। সুতরাং যারা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ধোঁয়া তুলছে তাদের অনির্বাচিত অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে দীর্ঘায়িত করার একটা মানসিকতা আছে বলে আমরা মনে করি।
দ্য ডেইলি স্টার: সম্প্রতি ঘোষিত ছাত্রদের রাজনৈতিক দল, জাতীয় নাগরিক পার্টি, নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: আমরা এটাকে স্বাগত জানাই৷ যেহেতু আমরা গণতান্ত্রিক বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। রাজনীতির মাঠে শত ফুল ফুটবে। এটা সবসময় আমরা কামনা করি। এর বাইরে আমাদের কোনও প্রতিক্রিয়া আপাতত নেই। তবে আমরা আশা করব, তারা যেন অতি শিগগির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। এটা আমাদের প্রত্যাশা।
দ্য ডেইলি স্টার: জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা সেকেন্ড রিপাবলিক ও গণপরিষদের কথা বলেছে। আপনি বলেছেন যারা গণপরিষদ ও সেকেন্ড রিপাবলিকের বিষয় সামনে আনছে, হয় তারা না বুঝে অথবা বুঝে আমাদের রাষ্ট্রকে আরও দীর্ঘ অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্রে আছে। বিষয়টা একটু ব্যাখ্যা করবেন?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: প্রথমে গণপরিষদের ব্যাপারটি বলি। গণপরিষদ সৃষ্টির প্রয়োজন হয় তখন যখন একটা নতুন রাষ্ট্রের সৃজন হয়। সেই রাষ্ট্রের হাতে যখন কোনো সংবিধান থাকে না, তখন একটি সংবিধান প্রণয়নের জন্য গণপরিষদ করা হয়।
সংবিধান তৈরির জন্য ছোট কমিটি থাকে, ড্রাফটিং কমিটি থাকে। যেমন বাংলাদেশ সৃষ্টির পরে একটি ড্রাফটিং কমিটি হয়েছিল। ভারত, পাকিস্তান সৃষ্টির পর তাদের ওখানে ড্রাফটিং কমিটি হয়েছিল। বাংলাদেশের কনস্টিটিউশন ড্রাফটিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ড. কামাল হোসেন। গণপরিষদের কাজটাই হচ্ছে তারা সংবিধানটা তৈরি করবেন। অনেক দেশে সংবিধান গৃহীত হওয়ার দিনকে রিপাবলিক ডে বলে।
বাংলাতে ওরা যেটা বলছে আসলে এটার ইংরেজি নাম হচ্ছে কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি। এখন কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি তৈরি করার কোনো পরিপ্রেক্ষিত কি আমাদের এখানে আছে? আমরা তো একটি স্বাধীন দেশ। কিন্তু দেশ গণতান্ত্রিক কি না সেটাই এখন আমাদের প্রশ্ন। যেহেতু বাংলাদেশের মানুষ যেভাবে চায়, সেভাবে গণতন্ত্রায়ন হয় নাই। সেটা করা যাবে।
এখন সেই কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলির কথা নতুন রাজনৈতিক দল যারা করেছেন, নতুন বন্ধুরা সামনে এনেছেন, তারা এটা বুঝে এনেছেন কি না আমি জানি না। তারা সংস্কার কমিশনের কাছে সংবিধান সংস্কারের জন্য ব্যাপক সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে। আমরাও দিয়েছি, অন্যান্য দলও দিয়েছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে এবং বর্তমান সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার হবে। আর সেটা তো সংসদের কাজ। আমার মনে হয় পার্লামেন্ট আর গণপরিষদের মধ্যে তাদের চিন্তাভাবনা বোধহয় গুলিয়ে গেছে।
কারণ যে কাজটা জাতীয় সংসদ করবে, সেটা হচ্ছে সংশোধনী। আর যে কাজটা কনস্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলি করবে সেটা হচ্ছে সংবিধান রচনা। আমাদের একটি রচিত সংবিধান আছে এবং এই সংবিধানকে আমরা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারছি না। কারণ একটা স্বৈরাচারী সরকারের হাতে এর গণতান্ত্রিক চরিত্রটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেজন্য আমাদের আবার ব্যাপক সংশোধনের প্রয়োজন হচ্ছে।
ছাত্রদের নেতৃত্বে যে দল হয়েছে তারা গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান চাইছে। একই সঙ্গে তারা বলছে যে, সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব দিয়েছে। দুইটা জিনিস তো এক নয়। সেটা মনে হয় তাদের একটু বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। যদি ব্যাপকভিত্তিক সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব তারা দিয়ে থাকে, আমরাও দিয়ে থাকি, অন্যরাও দিয়ে থাকে, সেটা বিবেচনার জন্য গণপরিষদ নয়, একটা সংসদ দরকার। এখন জাতীয় সংসদ এবং গণপরিষদ নির্বাচন একই সঙ্গে হতে পারে বলে তাদের দলের প্রধানের সাক্ষাৎকার দেখলাম। এখানে আমি পরিষ্কার করি। জাতীয় সংসদের সদস্য হবে একজন, একটি নির্ধারিত এলাকায়। গণপরিষদ সদস্য হবে একজন। এরা আলাদা দুজন হবে নাকি একজনই হবেন? দুইটা সংসদ হবে নাকি একটা সংসদ হবে? আমি ধরে নিচ্ছি একটাই সংসদ হবে। যদি একটাই সংসদ হয় সেটার নাম যদি জাতীয় সংসদ হয়, সেখানে যদি সংবিধান সংশোধন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয় এবং সংশোধনী গৃহীত হয়, তাহলে এখানে গণপরিষদের প্রশ্ন আসে কীভাবে?
দ্য ডেইলি স্টার: সেকেন্ড রিপাবলিক…
সালাহউদ্দিন আহমেদ: রিপাবলিক বলতে কী বোঝায়? আমরা ইতোমধ্যে একটা রিপাবলিক। এই রিপাবলিক প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৯৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে। এই রিপাবলিককে আমরা অবমাননা করতে চাই না। এই রিপাবলিকের কোনো দোষ নেই।
সেই রিপাবলিক এ দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে অর্জন করেছে। স্বাধীন রাষ্ট্র থাকলেই রিপাবলিক হয়। আমাদের স্বাধীন রাষ্ট্র আছে এবং রিপাবলিকও হয়েছে একটি সংবিধান প্রণয়নের মধ্য দিয়ে।
সেই রিপাবলিকের মূল এসেন্সটা হচ্ছে যে রিপাবলিক পরিচালিত হয় নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে। জনপ্রতিনিধিরা জনগণের সার্বভৌমত্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর জন্য নির্বাচিত হয়। তারা নির্বাচিত হয়ে আবার পরবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়। এটাই রিপাবলিক । সেই রিপাবলিক তো আমাদের আছে।
দ্য ডেইলি স্টার: জামায়াতের সঙ্গে আপনাদের দূরত্ব এখন বেশ চোখে পড়ার মতো। কেন এই দূরত্ব বাড়ল? জামায়াতের সঙ্গে জোট করে বিএনপি সাংগঠনিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: এটা আপনার প্রশ্ন। আমরা বিষয়টাকে ওভাবে দেখি না। আপনি যে রাজনৈতিক দলের কথা বলছেন, তাদের একটি আদর্শ আছে। এবং নির্বাচনকে সামনে নিয়ে তাদের একটি আলাদা কৌশল আছে। তারা তাদের কৌশলে এগোবেন। তারা তাদের আদর্শভিত্তিক রাজনীতি করবেন। এর সাথে আমাদের ব্যবধানের প্রশ্ন আসতে পারে না।
দ্বিতীয় হচ্ছে নির্বাচনী জোট। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নির্বাচনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে নির্বাচনী জোট হতেই পারে, হয়েছিল। আমরা বলেছি আমাদের সঙ্গে যারা যুগপৎ আন্দোলনে ছিলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আমরা নির্বাচন করতে পারি এবং ভবিষ্যতে যদি জনগণ আমাদেরকে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব দেয় তখনও আমরা তাদের সঙ্গে জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করব। এই প্রতিশ্রুতি আমাদের আছে।
দ্য ডেইলি স্টার: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের কথা আসছে। আপনাদের কী মত? আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক সেটা আপনারা চান?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে, আওয়ামী লীগ দলের প্রধান, যিনি তখন অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন ছিলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা, তার নির্দেশেই গণহত্যা পরিচালিত হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক ভাবে দায়ী। আওয়ামী লীগের একটি ছাত্র সংগঠনকে ইতোমধ্যে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন আসছে যে আওয়ামী লীগকে সংগঠন হিসেবে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হবে কি না।
এটা জনগণের দাবি, এটা সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে।
ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) থেকে শুরু করে অন্যান্য মন্ত্রী, এমপি এবং আওয়ামী লীগের নেতারা যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে দায়ী, তাদেরকে অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। ইতোমধ্যে বিচার চলছে। অন্য একটি বিষয় মানুষের সামনে আসছে, তা হলো রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের কী হবে? সেটা জনগণ নির্ধারণ করবে এবং এই দায়িত্ব সরকারের উপরও বর্তায়।
দ্য ডেইলি স্টার: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সাত মাস পার করেছে? এই সরকারের পারফরমেন্স নিয়ে আপনার মন্তব্য জানতে চাই।
সালাহউদ্দিন আহমেদ: সাত মাস এটা যথেষ্ট সময় একটা সরকারের কর্মকাণ্ডকে মূল্যায়ন করার জন্য। আমাদের সার্বিক মূল্যায়ন হচ্ছে যে এই সরকারের অনভিজ্ঞতার কারণে তারা এই দীর্ঘ সময়েও জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। মানুষের প্রত্যাশা ছিল দ্রব্যমূল্য ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আসবে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ে তারা স্বস্তিতে থাকবে৷ রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে। কিন্তু কোনোটাই সরকার সফলভাবে করতে পারেনি। হতে পারে তারা একটা ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে সরকার পরিচালনা শুরু করেছিলেন এবং হতে পারে তাদের অনভিজ্ঞতা এখানে দায়ী।
আমরা সবসময় তাদেরকে সহযোগিতা করেছি এবং আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। আমরা প্রত্যাশা করব যে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তারা যেন জন প্রত্যাশা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করেন।
দ্য ডেইলি স্টার: আইন ও সালিশ কেন্দ্রের রিপোর্ট ও মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী গত সাত মাসে ৪০ জন বিএনপি নেতাকর্মী অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারি দলের বর্ধিত সভায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এ ব্যাপারে কড়া নির্দেশনা অমান্য করেও কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষ ঘটনা ঘটছে। নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিরও অভিযোগ উঠছে। এটা কেন হচ্ছে?
সালাহউদ্দিন আহমেদ: এই পরিসংখ্যানের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। তবে কিছু কিছু ঘটনা ঘটে। একটা বৃহৎ রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে। আর নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা লক্ষ্য করা যায়। তাতে করে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা হয়তো ঘটছে। আমরা এটা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।
চাঁদা দাবির অনেক অভিযোগের ক্ষেত্রে খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছি। অনুসন্ধান করে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো যোগসূত্র নেই। তারা একটা পেশাদার চাঁদাবাজ চক্রের মতো। যখন যে দলের নাম ব্যবহার করলে সুবিধা হয় সেই অনুযায়ী তারা নাম ব্যবহার করে। পার্টি হিসেবে আমরা এই পরিস্থিতির ভিকটিম হয়েছি। ৯৮ ভাগ ঘটনায় দেখা গেছে এসবে জড়িতদের সঙ্গে সরাসরি কোনো রাজনৈতিক সংশ্লেষ নেই।
সূত্র : ডেইলি স্টার।
খুলনা গেজেট/এনএম