“যশোরের যশ খেঁজুরের রস” খেঁজুরের গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে অভয়নগরে খেঁজুর গাছির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে ধোপাদী উলরবটতলা এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে খেঁজুর গাছির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম আবু নওশাদের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন, যুব বিষয়ক কর্মকর্তা আন্জুমনোয়ারা, উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা প্রশান্তি মল্লিক, নওয়াপাড়া প্রেসক্লাবের দফতর সম্পাদক শাহিন আহমেদ, সদস্য জাকির হোসেন হৃদয়, গাছি মাহবুব ইসলাম, মিজানুর রহমান, গাছ মালিক হেলাল উদ্দিন।
খেঁজুর গাছি মাহবুব ইসলাম, মিজানুর রহমান বলেন, আমরা প্রতিবছর এ সময়ে খেজুর গাছ কেটে থাকি। বছরের শীতকালে খেজুরের রস পাওয়া যায়। গাছির সংখ্যা এখন কম। এই গ্রামে ৩ জন গাছি আছি। প্রতিভাড় রস ২৫০/ ৩০০ টাকায় বিক্রয় করি। তবে গাছির সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। গাছিরা অন্য পেশায় কে পড়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার লাভলী খাতুন জানান, এ এলাকায় অনেক খেঁজুর গাছ আছে। তবে গাছির সংখ্যা কম। গাছিদের উদ্ভুদ্ব করতে খেজুর গাছি সম্মেলন করছি। যাতে যশোরের অভয়নগরে এই ঐতিহ্য ধরে রাখা যায়। এছাড়াও খেঁজুরের বীজ সংগ্রহ করে প্রত্যকটা সড়কে লাগানো হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম আবু নওশাদ বলেন, এই অঞ্চলের ঐতিহ্য খেঁজুরের রস ও গুড়। সেই ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনতে ও খাঁটি খেঁজুরের গুড় তৈরিতে আমাদের এই খেঁজুর গাছির সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আজকের এই উদ্যোগটিও প্রশংসনীয়। মোটামুটি সুফল পাবেন এই অঞ্চলের মানুষ তথা দেশবাসী।
জানা গেছে, যশোর জেলার অভয়নগরে প্রায় ১ লাখ ৪১ হাজার ১৫০ টি খেঁজুর গাছ আছে। খেঁজুরের চারা রোপনের পাঁচ বছর পর রস আহরনের জন্য গাছ কাটা শুরু হয়। একটি গাছ থেকে ১৫-২০ বছর পর্যন্ত খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা যায়। বর্তমানে প্রায় ৫০ হাজার গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। গাছির অভাবে এসব গাছ থেকে রস সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। উপজেলায় বর্তমানে পেশাদার হিসেবে মাত্র ৬৯১ জন গাছি রয়েছেন। তারা অক্টোবর থেকে ফেব্রয়ায়ি পর্যন্ত খেজুর গাছ থেকে গাছের রস সংগ্রহ করেন। বছরের অন্য সময় তারা অন্যান্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে।
১০ বছর আগেও গাছির সংখ্যা দশ গুণ বেশি ছিল বলে জানা যায়। দিন দিন গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া আর রস জ্বালানোর জন্য জ্বালানির অভাবে বর্তমানে খেঁজুরের গুড় উৎপাদন অনেক কম হচ্ছে। বন বিভাগের অফিস থেকে জানা গেছে, অভয়নগরে আবহাওয়ার সঙ্গে মানানসই খেঁজুর গাছ এমনিতেই জন্মে। এভাবে বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয় খেঁজুরের বাগান। এখন শীতকাল তাই অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা খেঁজুর গাছের কদর বেড়েছে। এই গাছ এখন দিচ্ছে গাড়ো মিষ্টি রস আর এই রস জ্বালিয়ে পাতলা, ঝোলা, দানা গুড়, পাটালি তৈরি করা হয়।
উলেখ্য ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলাটির নাম যশোর। দেশের প্রথম ডিজিটাল জেলাটির নামও যশোর। সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল এই জেলায় জন্ম গ্রহণ করেছে অনেক মহামানব। বহু প্রাচীনকাল থেকেই যশোর খেঁজুরগাছ এবং গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। যশোরের খেঁজুরের রসের ইতিহাস অনেক পুরানো।
প্রতিবছর শুধু যশোরেই শীতকালে প্রায় ৫৩ লাখ কেজি গুড় উৎপন্ন হয়। বর্তমানে ৩ লাখ ৫০ হাজার খেজুর গাছ থেকে ৪১ কোটি ভাড় রস উৎপন্ন হচ্ছে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। যশোর বাংলাদেশের একটি অতি প্রাচীন জনপদ। যশোরের ইতিহাস ঐতিহ্য এত গৌরবোজ্জ্বল যে সেটা নিয়ে বহু গ্রন্থ রচিত হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি ঐতিহ্য হলো খেঁজুরের রস। বহু প্রাচীনকাল থেকেই যশোর খেঁজুর এবং গুড়ের জন্য বিখ্যাত ছিল।
খুলনা গেজেট/ টিএ